জলবায়ু সুরক্ষার পক্ষে কোপেনহেগেন একটি গুরুতর আঘাত
১৯ ডিসেম্বর ২০০৯কোপেনহেগেন সম্মেলন থেকে প্রত্যাশার তুলনায় এই আপোষকে জলবায়ু সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুতর আঘাত বলা চলে৷
প্রায় দু'বছর আগে বালি'র জলবায়ু সম্মেলন নাটকীয়ভাবে শেষ হয়েছিল৷ শেষমেষ খাড়া করা হয়েছিল একটি নতুন জলবায়ু চুক্তির সময়সূচী: ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে কোপেনহেগেনে ঐ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার কথা ছিল৷ কিন্তু কোপেনহেগেন সম্মেলনের কয়েক মাস আগে থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, ও-ধরণের কোনো চুক্তি সম্ভব হবে না৷ তবুও যতোটুকু বাঁচানো যায়, সেই আশায় ক্রমেই আরো বেশী রাষ্ট্র- তথা সরকারপ্রধানেরা কোপেনহেগেনে আসার পরিকল্পনা করেন৷ ফলে ‘কপ ১৫' একটি বিশ্ব শীর্ষবৈঠক, একটি সুবিশাল সম্মেলনে পরিণত হয়৷ কিন্তু সেই সম্মেলনের ফলাফল দেখলে এখন পর্বতের মূষিক প্রসবের কথাই মনে পড়ে৷ যেন একা পরিবেশ মন্ত্রীরাই এ-কাজটা সারতে পারতেন৷
কপ ১৫ ছিল একটা অদ্ভূত ধরণের সম্মেলন, কেননা সকলেই এ-ব্যাপারে একমত ছিলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কিছু একটা করতে হবে৷ বিশ্বের উষ্ণায়ন দুই ডিগ্রীর নীচে রাখার কথা বারংবার বলা হয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে চীন তার দেশে কোনো পর্যবেক্ষকদের ঢুকতে দেবে না৷ ইউরোপীয়রা কার্বন নির্গমন আর বেশী কমাতে রাজী নয়৷ মার্কিনীরা চায় না পথিকৃৎ হতে৷ আফ্রিকানরা চায় আরো বেশী অর্থ, কিন্তু সেই অর্থে কি হবে, সে-বিষয়ে আরো বেশী স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিতে নারাজ তারা৷ সব মিলিয়ে শেষে লজ্জানিবারণের জন্য একটি তিন পাতার দলিল, যাকে এক চীনই ‘‘অভূতপূর্ব'' বলতে পারে৷
কিন্তু জলবায়ু সুরক্ষার কি হবে? কোপেনহেগেনের একটি ফলশ্রুতি হল এই যে, উত্তর এবং দক্ষিণের মধ্যে পরিখা আরো গভীর হবে৷ বহু প্রচেষ্টায় শিল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে যেটুকু আস্থা গড়ে তোলা গিয়েছিল, তা আবার ধ্বংস হয়েছে৷ এখন একটিমাত্র সুযোগ আছে: ধনী দেশগুলিকে জলবায়ু সুরক্ষার পুরোভাগে এসে দাঁড়াতে হবে, অন্যদের বড় বেশী শর্তপ্রদান না করে৷ আসলে কোপেনহেগেনে শুধু জলবায়ুর সুরক্ষা নয়, একত্রে কাজ করে যে কোনো সমস্যা সমাধানের একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরী হতে পারতো - যেমন দারিদ্র্য দূরীকরণ৷ ঠিক সেই সুযোগটাই বিনষ্ট করা হয়েছে৷
বিশ বছর ধরে শম্বুকগতিতে এগোচ্ছে এই জলবায়ু সুরক্ষা৷ এবার ঠিক হয়েছে, ২০১০-এ সব কিছুর সুরাহা হবে৷ কিয়োতো প্রক্রিয়া এখনও পুরোপুরি মৃত নয়৷ কিন্তু বারো বছর আগে কিয়োতোর সেই সাফল্য পুনরাবৃত্তির আশা এবার সত্যিই কোপেনহেগেনে দাফন দেওয়া হয়েছে৷
প্রতিবেদক: হেনরিক বোয়মে, অনুবাদ: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম