1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলের চাহিদা মেটাতে সমুদ্রের ব্যবহার বাড়ছে

১৯ আগস্ট ২০১১

মানবজাতির বেড়ে চলা জলের চাহিদা মেটাতে সমুদ্রের লবণাক্ত জল শোধন করার প্রবণতা বেড়ে চলেছে৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে জটিলতাও কম নয়৷

https://p.dw.com/p/12JQi
সংযুক্ত আরব আমিরাতে একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সমুদ্রের লবণাক্ত জল শোধন করা হচ্ছেছবি: Siemens press picture

জলের বেড়ে চলা চাহিদা

গোটা বিশ্বের জলভাণ্ডারের মাত্র আড়াই শতাংশ মিষ্টি৷ তারও এক শতাংশের কম পরিমাণ জল আমাদের হাতের নাগালে রয়েছে৷ বাকিটা জমাট বরফ হিসেবে ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ অথচ পানীয় জলের চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ মাটির নীচে জলের স্তর কমে চলেছে৷ এই অবস্থায় খোঁজ চলছে বিকল্প উৎসের৷ দুই মার্কিন বিজ্ঞানী সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে মিষ্টি পানীয় জল উৎপাদনের অভিনব এক পদ্ধতি সম্পর্কে নতুন এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন৷

Flash-Galerie Weltwasserwoche 2011 Israel Entsalzungsanlage in Hadera
ইসরায়েলে সমুদ্রের লবণাক্ত জল শোধন কেন্দ্রছবি: AP

সমুদ্রের লবণাক্ত জল পরিশোধন করে পানীয় জল বা সেচের জন্য মিষ্টি জল উত্তোলন করার উদ্যোগ বহুকাল আগেই শুরু হয়ে গেছে৷ যেমন কয়েক দশক ধরে স্পেনে সমুদ্রের জল থেকে লবণ দূর করে, তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সিঙ্গাপুরও প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাতে এই কাজ করছে৷ ইসরায়েল বছরে সমুদ্র থেকে প্রায় ৫০ কোটি বর্গ মিটার লবণাক্ত জল শোধন করে কাজে লাগাতে চায়৷ চাহিদা মেটাতে এতকাল গেনেজারেথ হ্রদ থেকে ঠিক সেই পরিমাণ জল পাম্প করে বার করা হয়ে আসছে৷ অনুমান করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বে প্রায় ৩,৮০০ কোটি বর্গ মিটার লবণাক্ত জল শোধন করে নানা কাজে লাগানো হবে৷ ২০০৮ সালের তুলনায় তা হবে দ্বিগুণ৷

প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক

আপাতদৃষ্টিতে জলের বেড়ে চলা চাহিদা মেটাতে লবণাক্ত জল শোধনই সবচেয়ে উপযুক্ত প্রক্রিয়া হিসেবে মনে হতে পারে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেনাখেম এলিমেলেশ এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘নীতিগতভাবে সমুদ্রের লবণাক্ত জল শোধনের মাধ্যমে উচ্চ মানের অফুরন্ত মিষ্টি জল সংগ্রহ করা সম্ভব৷ কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই বিশাল মহাসাগর থেকে পর্যাপ্ত জল উত্তোলন করা যেতে পারে৷ নদী বা হ্রদের ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভব নয়৷ তবে এই প্রক্রিয়ার একটি দিক উপেক্ষা করলে চলবে না – আর তা হলো এই কাজে বিশাল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ নদী বা হ্রদ থেকে সরাসরি জল সংগ্রহ করার সময় এত জ্বালানির প্রয়োজন হয় না৷ এটাই হলো সমস্যা৷''

Flash-Galerie Weltwasserwoche 2011 Wasser-Entsalzungsanlage Algerien
আলজেরিয়াও সমুদ্রের লবণাক্ত জল শোধনের কাজে পিছিয়ে নেইছবি: picture-alliance/dpa

লবণাক্ত জল শোধনের আধুনিক প্রক্রিয়ার নাম ‘রিভার্স অসমোসিস'৷ পলি-অ্যামিড মেমব্রেন নামের এক পাতলা পদার্থের উপর প্রচণ্ড বেগে লবণাক্ত জল নিক্ষেপ করা হয়৷ জলের অণু তা ভেদ করে অপর প্রান্তে বেরিয়ে আসে৷ কিন্তু লবণ বা নুনের বড় অণু পর্দার অপর প্রান্তে আটকে যায়৷ ফলে এভাবেই জলের শোধন করা যায়৷ কিন্তু বর্তমানে প্রতি বর্গ মিটার মিষ্টি জল পেতে তিন থেকে চার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷ এক বর্গ মিটার জল মোটামুটি ১,০০০ লিটারের সমান৷ নদী বা অন্যান্য উৎস থেকে জলের শোধন করতে এর এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷

লবণাক্ত জল শোধনের সমস্যা

এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে অনেকে লবণাক্ত জল শোধনের জন্য সৌর বা বায়ু শক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে কার্বন নির্গমন একেবারেই না হয় বা তার মাত্রা কম থাকে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিবেশের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব নয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোত্র দাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম ফিলিপ বলেন, ‘‘সমুদ্রের জলে লবণ ছাড়াও সামুদ্রিক উদ্ভিদের ক্ষুদ্র অংশ সহ অন্যান্য অনেক পদার্থ থাকে৷ যে মেমব্রেন বা ছাঁকনির সাহায্যে লবণ আলাদা করা হয়, তার মধ্যে দিয়ে জল সহজেই প্রবেশ করতে পারে৷ কিন্তু ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু এবং কোনো জৈব পদার্থের সংস্পর্শে এলে সেই পর্দার কার্যক্ষমতা কমে যায়৷ তখন তার উপর জৈব পদার্থের স্তর জমতে শুরু করে৷''

মেমব্রেন বা পর্দা খালি রাখতে তাই সমুদ্রের জলে বিশেষ ধরণের রাসায়নিক পদার্থ ঢালতে হয়৷ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সেই পদার্থ আবার সমুদ্রেই ঢেলে দেওয়া হয়৷ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার এড়াতে ইঞ্জিনিয়াররা এমন ছাঁকনি তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যার উপর কোনো জৈব পদার্থের স্তর জমবে না৷ চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে এমন ছাঁকনির প্রয়োগ করা হয়ে থাকে৷

লবণাক্ত জল শোধনের ক্ষেত্রে আরও একটা সমস্যা রয়েছে৷ সমুদ্রের জল থেকে যে ঘন লবণের স্তর আলাদা করা হয়, তা আবার সমুদ্রেই ফেলে দেওয়া হয়৷ তার ফলে সমুদ্রের উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের কোনো ক্ষতি হয় না বলে ধরে নিলেও এর সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় নি৷ এত সব জটিলতার ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে অন্য কোনো পথ খোলা না থাকলে তবেই এভাবে সমুদ্রের লবণাক্ত জল শোধনের পথে যাওয়া উচিত৷ সেইসঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে আরও উন্নত প্রযুক্তির জন্য৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান