জাতিসংঘের উচ্চপদে বাংলাদেশিরা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ টেলিফোনে ড. এম.এ মোমেন এ সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে এক পর্যায়ে জানান, শেখ হাসিনার ভাষণ বেশ প্রশংসিত হয়েছে৷ বিশেষ করে তিনি যখন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন তখন সবাই মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে সাধুবাদ জানান৷
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৪০ বছর পূর্ণ হলো এ বছর৷ এ উপলক্ষ্যে নিউ ইয়র্কে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও সবার বেশি কৌতূহল ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককে ঘিরে৷ হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির নেতা নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানালেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তখন যেতে পারেননি৷ অবশেষে শনিবার নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে হলো তাঁদের প্রথম বৈঠক৷ তবে তার আগে ছিল জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের সঙ্গে বৈঠক এবং তারপর সাধারণ পরিষদে ভাষণ৷
ডয়চে ভেলেকে ড. এম.এ মোমেন জানান, সংক্ষিপ্ত বৈঠকে বান কি-মুন শিক্ষার হার বাড়ানো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং জঙ্গিবাদবিরোধী উদ্যোগসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন৷ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চপদে বাংলাদেশিদের নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ জানান বলেও জানিয়েছেন জাতিংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি৷ তিনি জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতিসংঘের উপরের দিকের পদগুলোতে আমাদের কিন্তু এত লোক নেই, আপনি (বান কি-মুন) এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিলে খুশি হবো৷ তখন উনি (জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব) আমিরা হককে দেখিয়ে বললেন, এই যে আপনার লোক! জবাবে, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ও তো চলে যাবে, আপনি আমার দেশের লোকদের উঁচু পদে নেবেন৷''
ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে ড. এম.এ মোমেন আরো জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরকরণ এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ দু-দেশের অমীমাংসিত বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷ নরেন্দ্র মোদী যেভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাতে তাঁকে খুব আন্তরিক মনে হয়েছে বলেও জানান ড. মোমেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বৈঠকের শুরুতেই তিনি (মোদী) প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, দিল্লিতে যখন আপনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন তখন তাঁকে বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বানায়া, অর উনকা বেটি বাংলাদেশ বাঁচায়া (বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন, আর তাঁর মেয়ে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন)৷'' বিজেপি ভারতে সরকার গঠনের পর নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু রাষ্ট্রীয় সফরে থাকায় শেখ হাসিনা সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারেননি৷ পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি সফরে গেলে তাঁকে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বানায়া, অর উনকা বেটি বাংলাদেশ বাঁচায়া৷'' শনিবার শেখ হাসিনাকে সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেন নরেন্দ্র মোদী৷
নিজেদের এ প্রথম বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন দু’জনই৷ এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত পাশে থাকবে৷ শেখ হাসিনা নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থল যোগাযোগ স্থাপনে ভারতের সহযোগিতা চাইলে মোদী বলেন, ‘‘যোগাযোগ ছাড়া তো কখনো উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ এটা করতেই হবে৷''
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর এ বৈঠকের সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় নিয়ে গত কিছুদিনে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতে৷ বৈঠকে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে মোদী এ বিষয়ে তাঁকে সতর্ক করবেন – নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এ খবরও প্রচার করা হয়েছিল৷ এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম.এ. মোমেন ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘আমি আলোচনায় ছিলাম৷ কিন্তু এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হতে দেখিনি৷ আমার কাছে এটা নতুন কিছু মনে হচ্ছে, কেন না, আমি তো ওখানে ছিলাম৷''
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন