জাতিসংঘের নতুন সংস্থা ‘ইউএন ওম্যান’
২২ জুলাই ২০১০ইউ এন ওম্যান- এর ফলে বিশ্বের মহিলাদের সাহায্য করতে আরো অনেক বেশি অর্থ সংগ্রহ করা এবং অর্থ বিনিয়োগ করা সহজ হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে৷
জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচীর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাজের মধ্যে সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া অন্যতম৷ এ মাসের দুই তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়৷ সে প্রস্তাব অনুযায়ী মহিলাদের নিয়ে জাতিসংঘের চারটি কর্মসূচি ‘ইউএন ওম্যান'- এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে৷ আগের কর্মসূচিগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে কাজ করতে সক্ষম হবে ইউএন ওম্যান৷ জেনেভায় জাতিসংঘের মুখপাত্র কোরিন মোমাল ভানিয়ান বেশ গর্বের সঙ্গে জানান, ‘‘ এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের একটি সংবাদ৷ এর মধ্যে দিয়ে জাতিসংঘের প্রতিটি মহিলাই তাদের বক্তব্য, তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পাবে৷ আমরা আশা করছি ‘ইউএন ওম্যান'-এর জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা দিয়ে নারী-পুরুষের সমানাধিকার বাস্তবায়নে সক্ষম হবে৷ এক কথায় সত্যিই এটা আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ৷''
শুধু মহিলাদের জন্য একটি সংস্থা, যে সংস্থাটি জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করবে – এমন একটি সংস্থার জন্য অনেক দিন ধরেই পর্যবেক্ষকরা অপেক্ষা করছিলেন৷ গত ৬০ বছরে জাতিসংঘ যা চেষ্টা করেছে তা হল নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করা, সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা৷
বেজিং প্ল্যাটফর্মের ব্যর্থতা
১৯৯৫ সালে বেজিং-এ মহিলাদের সমস্যা চিহ্নিত করতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল৷ নাম দেওয়া হয়েছিল বেজিং প্ল্যাটফর্ম৷ গ্রহণ করা হয়েছিল বেশ কিছু পদক্ষেপ৷ কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে বেজিং প্ল্যাটফর্ম তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি৷ জাতিসংঘের দপ্তর, ইউনাইটেড নেশন্স রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এ কাজ করছেন সাহরা রাজাভি৷ তিনি বললেন, ঠিক কীভাবে এবং কেন নারী পুরুষের সমানাধিকারের বিষয়টি মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ রাজাভি জানালেন,‘‘ অনেকেই ভেবেছিলেন বেজিং-এ হয়তো এবার কিছু আদায় করা সম্ভব হবে৷ তারা ছিলেন প্রচণ্ড আশাবাদী৷ কিন্তু দেখা গেছে এর পর থেকেই রক্ষণশীল মনোভাবের মানুষরাই জিতেছে৷ তাদের উত্থানও হয়েছে আগের চেয়ে বেশি৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সংস্কৃতিক জীবনেও তাদের দাপট লক্ষ্য করা গেছে৷ ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা অনেক বেশি সোচ্চার ছিল সবসময়ই৷ যাদের এই সাহায্যের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সত্যিকার অর্থেই প্রয়োজন তাদের সেই সাহায্য গ্রহণে এই রক্ষণশীলরা বাধা দিয়েছে৷''
পরিবর্তন আনবে ইউএন ওম্যান
তবে আশা করা হচ্ছে এবার ‘ইউএন ওম্যান' সবকিছু দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে৷ এটা খুবই জরুরি৷ কারণ, জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে যত নিরক্ষর মানুষ রয়েছে তার দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে মহিলা৷ মানবাধিকার লংঘনের শিকার যত মানুষ তার তিন চতুর্থাংশ নারী৷ অন্যদিকে মাত্র এক চতুর্থাংশ নারী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ সাহরা রাজভি মনে করেন যে, নারী অধিকার নিয়ে যেসব মহিলা সোচ্চার, বেজিং প্ল্যাটফর্মের সময় তারা আবেগে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন৷ রাজাভি বললেন,‘‘এখন যে কেউই বলতে পারে যে নারী স্বাধীনতায় অনেক কিছুই বেজিং প্ল্যাটফর্মে আদায় করা গেছে৷ বেজিং- এ যে সব পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে তার মোটামুটি অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়েছে৷ সংসদে যাওয়ার জন্য, সাংসদ হওয়ার জন্য মহিলাদের বিভিন্ন কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এই কোটার মাধ্যমে বৈষম্যও দূর করা সম্ভব হয়েছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে মহিলাদের আর কী চাই ? সবই তো দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু বাস্তব সত্য হল নারী-পুরুষের যে বৈষম্য তা যে বেড়েছে সেটা স্পষ্ট চোখে পড়ে৷ সাধারণ মানুষ তা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলে৷''
এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ইউএন ওম্যানের প্রধান নির্বাচিত করবেন৷ ২০১১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ইউএন ওম্যান শুরু করবে তার কাজ৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক