জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশনের ২০ বছর
২১ নভেম্বর ২০০৯১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে এই অনানুষ্ঠানিক চুক্তিটির বয়ান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হবার পর পরই তা'তে স্বাক্ষর করার জন্য লাইন পড়ে যায়৷ রেকর্ড সময়ের মধ্যে কনভেনশনটি কার্যকর হয়৷ আজ বিশ বছর পরেও জনপ্রিয়তায়, অর্থাৎ স্বাক্ষরকারী দেশগুলির সংখ্যায় শিশু অধিকার কনভেনশনটি জাতিসংঘের তালিকার শীর্ষে৷ কিন্তু কনভেনশনটির বাস্তব সাফল্য নিয়ে কথা উঠলে, সেই উচ্ছ্বাস যেন কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসে৷ যেমন জাতিসংঘের ১৮-সদস্য-বিশিষ্ট শিশু অধিকার কমিটির, যাদের কাজই হল নিয়মিতভাবে একক দেশগুলিতে কনভেনশনটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি যাচাই করা৷ কমিটির সদস্য সুইজারল্যান্ডের আইনবিদ জাঁ সেরমাটেন বলেন:
‘‘বহু দেশে মানুষজন শিশুদের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে, কিন্তু তা'বলে তাদের কোনো অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না৷ শিশুদের প্রতি বাৎসল্য ততোক্ষণই, যতোক্ষণ শিশু অধিকারের প্রশ্নটি না ওঠে৷ ও'ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ শিশুদের প্রতি ভালোবাসার কোনো অভাব নেই, কিন্তু তাদেরও যে অধিকার আছে, সেটা উপলব্ধি করতে বড়দের অসুবিধা আছে৷ রাষ্ট্রের যে শিশুদের প্রতি নানা দায়িত্ব আছে, এ' চিন্তাটাও সর্বত্র প্রচলিত নয়৷''
রক্ষক যখন ভক্ষক হয়
শিশু অধিকার কনভেনশনের ৫৪ নম্বর ধারায় শিশু এবং ১৮ বছর বয়স অবধি অপ্রাপ্তবয়স্কদের জীবনযাপনের যাবতীয় পরিস্থিতির হিসাব রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সে তালিকা শুরু হয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়ে, আছে শিক্ষার অধিকার, এবং সবশেষে স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাবার, গৃহীত হবার অধিকার৷ কনভেনশনের বহু ধারার লক্ষ্য হল শিশুদের প্রাপ্তবয়স্কদের নিগ্রহ থেকে রক্ষা করা৷ তার কারণ ব্যাখ্যা করলেন সেরমাটেন:
‘‘শিশুদের প্রাপ্তবয়স্কদের হাত থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনটা প্রথমে কিছুটা খাপছাড়া মনে হলেও, স্বভাবতই বিশেষ কয়েক ধরণের প্রাপ্তবয়স্কদের শোষণ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত করা আবশ্যক৷ তার একটি চরম দৃষ্টান্ত হল শিশুশ্রম৷ অসংখ্য শিশু এইভাবে শোষণের শিকার হয়৷ এই প্রসঙ্গে শিশু দত্তক নেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যবসা, শিশুদের নিয়ে যৌন ব্যবসা এবং সশস্ত্র সংঘাতে শিশুসৈন্যদের নিয়োগের কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে৷''
ন্যায়বিচার পাবার অধিকার
তবে জাতিসংঘের অপরাপর মানবাধিকার কনভেনশনের সঙ্গে শিশু অধিকার কনভেনশনের মূল পার্থক্য হল এই যে, এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা করার কোনো সুযোগ নেই৷ শিশু অধিকার কমিটির বিশেষজ্ঞরা ঠিক সেটাই বদলাতে চান: শিশুদের যেন মামলা করে তাদের অধিকার আদায় করার সুযোগ থাকে৷ ইউরোপের শিশুদের যেমন এখনই আছে: তারা স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে মামলা করতে পারে৷ তবে তার অর্থ এই নয় যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে আর শিশুদের অধিকার লঙ্ঘিত হয় না, অথবা হলেই তা শুধরানোর ব্যবস্থা করা যায়৷
প্রতিবেদক: ক্লাডিয়া ভিটে, অনুবাদ: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক