ধাক্কা খেলেন মমতা
১৩ মার্চ ২০১৪ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির ঐতিহাসিক রামলীলা ময়দানে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দুর্নীতি-বিরোধী গান্ধীবাদী সমাজসেবী আন্না হাজারেকে পাশে নিয়ে তৃণমূল নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের জাতীয় অ্যাজেন্ডা ঘোষণা করার কথা ছিল বুধবার৷ কিন্তু আন্না হাজারে এলেনই না৷ সভার প্রধান আকর্ষণ হবার কথা ছিল যাঁর, তিনি না আসায় পুরো উৎসাহ-উদ্দীপনা গেল ভেস্তে৷
তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় আন্নাকে আনতে দিল্লির মহারাষ্ট্র সদনে ছুটে গেলেও, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সভায় উপস্থিত থাকার অপারগতা জানিয়ে দেন আন্না৷ কথা দিয়েও কেন আন্না হাজারে এলেন না, তাই নিয়ে চলেছে জল্পনা-কল্পনা৷ কেউ কেউ বলছেন, তবে কি এটা আন্না-মমতার সমঝোতা ভেঙে যাবার ইঙ্গিত?
ধরা হয়েছিল জনসভায় এ দিন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে৷ কিন্তু হয়েছিল মাত্র কয়েক'শো৷ বলতে গেলে ময়দান প্রায় ফাঁকা ছিল৷ সমাবেশের পরিকল্পনাতে খামতি ছিল বলেই কি আন্না দমে যান? কেউ কেউ আবার একথাও বলছেন যে, একদা আন্নার সহযোগী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তথাকথিত বিশ্বাসভঙ্গের শিক্ষা দিতেই নাকি মমতার হাত ধরতে রাজি হয়েছিলেন আন্না৷ তবে নিজেকে রাজনৈতিক তুরুপের তাস হতে দিতে তিনি রাজি নন মোটেই৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, দুর্নীতি বিরোধী মুখ হিসেবে রাজ্যের বাইরে মমতার ‘ইমেজ' তুলে ধরতে আন্না হবে তৃণমূলের হাতে তুরুপের তাস৷ এমনকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবি তুলে ধরতে ঐ জনসভায় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দিল্লির জামা মসজিদের শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারিকে৷ তিনিও আসেননি৷ মোটকথা, মমতার জাতীয় অ্যাজেন্ডা ঘোষণা জনমনে দাগ কাটতে পারেনি আদৌ৷ নির্বাচনি ভাষণে সেই একই বস্তাপচা বুলি আওড়ালেন তিনি৷ বললেন ‘‘আমরা ভালো, ওরা খারাপ৷ অন্য রাজ্যের তুলনায় আমার রাজ্যে বিকাশ হয়েছে সবথেকে বেশি৷ আমার সরকারের কথায় এবং কাজে ফারাক নেই'' জাতীয় একঘেয়ে ক্লান্তিকর দাবি৷ পশ্চিমবঙ্গে বিকাশের লম্বা ফিরিস্তি তিনি অবশ্যই দিয়েছেন, কিন্তু কোথাও উচ্চারণ করেননি তাঁর রাজ্যে নারী সুরক্ষার কী দশা!
আন্না হাজারের এহেন আচরণে যে মমতা রীতিমত ক্ষুব্ধ, তা তাঁর শরীরী ভাষায় স্পষ্ট৷ যদিও জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, এই জনসভা তৃণমূলের নয়, এই জনসভা আন্না হাজরের৷ তিনি আন্নার জন্যই কলকাতায় তাঁর সব কাজ ফেলে ছুটে এসেছেন দিল্লিতে৷
ময়দান খালি থাকার কারণ ঢাকতে মমতার যুক্তি: ট্রেন বা বাস ভাড়া করে লোক আনা যেত, কিন্তু সেপথে তাঁরা যেতে চাননি৷ তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি প্রদর্শন করার জন্যও তিনি আসেননি৷ কেন্দ্রের কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামদলকে সমানভাবে তুলোধোনা করে তিনি বলেন, মুখে এইসব দল একে অপরের সমালোচনা করছে, অথচ ভেতরে ভেতরে একে অপরের পিঠ চুলকাচ্ছে৷ এই দ্বিচারিতা তাঁর দল বরদাস্ত করতে পারে না৷ তাই কংগ্রেস এবং বিজেপির সন্দেহজনক বোঝাপড়ার বিরুদ্ধে তাঁর দল লড়াই চালিয়ে যাবে, কেউ তাঁদের সমর্থন করুন বা না করুন, বলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী পদের লোভ নেই তাঁর৷ ক্ষমতা ব্যক্তিবিশেষের নয়, ক্ষমতা জনতার – এ কথাও বলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী৷ দিল্লির পর, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও তিনি নাকি জনসভা করবেন৷
তবে আন্না-মমতার এই হাত ধরাধরি কোনো আদর্শগত কারণে নয়, ধান্দাবাজির জোট এবং জাতীয় রাজনীতিতে এর বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না – এমনটাই মনে করে কংগ্রেস৷