রেশমা উদ্ধার বিতর্ক
২ জুলাই ২০১৩গত রবিবার যুক্তরাজ্যের ট্যাবলয়েড ‘সানডে মিরর' ১৭ দিন পর ধংসস্তূপের নীচ থেকে রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক' বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এর এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের ‘দৈনিক আমার দেশ' তাদের অনলাইন সংস্করণে একই ধরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ দুটি প্রতিবেদনই বলা হয় যে, রানা প্লাজা ধসের দিনই রেশমা তাঁর এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বেরিয়ে আসেন৷ এরপর তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেলে দুই দিন চিকিত্সা দেয়া হয়৷ তাই ১৭ দিন পর রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা একটি ‘সাজানো নাটক'৷ তবে প্রতিবেদনে রেশমার সহকর্মীর নাম বা পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি৷
এ নিয়ে জাতীয় সংসদে মঙ্গলবার বিতর্ক হয়েছে৷ বিএনপির সংসদ সদস্য এবং বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চিফ হুইপ শহীউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সংসদে বলেছেন, সরকার রানা প্লাজা ধসের দায়-দায়িত্ব থেকে বাঁচতে এই নাটক সাজিয়েছে৷ সরকারের উচিত আসল ঘটনা প্রকাশ করা৷ এর জবাবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, মিররের রিপোর্টই সাজানো নাটক৷ আর এই ট্যাবলয়েড পত্রিকার কাজই হলো গাল-গল্প প্রচার করে কাটতি বাড়ানো৷ তিনি বলেন, রেশমাকে উদ্ধারের ৫০ দিন পর মিররের সাংবাদিক সাইমন রাইট এই রিপোর্টটি করেছেন৷ হলুদ সাংবাদিকতার কারণে দাক্ষিণ আফ্রিকায় একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি৷
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার বার্তা প্রধান জ ই মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, মিররের রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে তাঁর প্রশ্ন আছে৷ তারা যে সব তথ্যের ভিত্তিতে বলছে যে, রেশমা উদ্ধার সাজানো নাটক – সেসব তথ্য তারা প্রমাণসহ হাজির করতে পারেনি৷ আর রেশমার সহকর্মীর কোনো পরিচয় প্রকাশ না করায় রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে৷ তিনি বলেন, রিপোর্টে সাভারের যে এনাম মেডিকেলে রেশমার চিকিত্সা নেয়ার কথা বলা হয়েছে সেই এনাম মেডিকেলে এটিএন বাংলাও অনুসন্ধান করেছে৷ সেখানে রেশমার ভর্তির কোনো কাগজ পত্র নেই৷ আর মিররও কোনো কাজপত্র বা হাসপতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হাজির করতে পারেনি৷ তাহলে তথ্য-প্রমাণ ছাড়া মিরর কিভাবে একে ‘সাজানো নাটক' বলে? তাঁর মতে, ট্যাবলয়েড পত্রিকার বৈশিষ্ট্যই এরকম৷ তাই জ ই মামুনের প্রশ্ন, মিরর জানালো আর বাংলাদেশের সাংবাদিকরা জানলো – না এটা কিভাবে সম্ভব? তিনি বলেন, মিরর যদি রেশমার সহকর্মীকে হাজির করতে পারে তাহলে তাঁর কথা প্রচার করবে এটিএন বাংলা৷
একুশে টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ইব্রাহিম আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, মিররের রিপোর্ট একটি বিতর্ক তৈরি করেছে৷ তবে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কোনো সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে কোনো খবর তাঁর চোখে পড়েনি৷ এখন মিররেরই দয়িত্ব হলো নিজেদের রিপোর্ট প্রমাণ করা৷ তিনি অবশ্য মনে করেন, রেশমা সংক্রান্ত সব তথ্য প্রকাশ করলেই বিতর্কের অবসান ঘটবে৷ তিনি মনে করেন, এ নিয়ে যদি কেউ অনুসন্ধান করতে চান তাহলে সরকারের উচিত হবে সব ধরণের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা৷
এদিকে সাভার এনাম মেডিকেলের পরিচালক (জনসংযোগ) জাহিদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান যে, তারা রানা প্লাজা ধসের পর পর ১,৭০০ জনকে চিকিত্সা দিয়েছেন৷ ধসের পর জরুরি চিকিত্সার কারণে প্রথম দিকে অনেকের নাম-ঠিকানাই তারা ঠিকভাবে লিখতে পারেননি৷ তবে পরে যাঁদের নাম ঠিকানা ঠিকভাবে লেখা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রেশমা নামে কেউ নেই৷ আর যাঁদের নাম-ঠিকানা রাখা যায়নি, তাঁদের মধ্যে রেশমা নামে কেউ ছিলেন কিনা, তা তাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়৷
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, রেশমাকে উদ্ধার করা হয় সবার সামনে৷ কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল তা সরাসরি সম্প্রচারও করে৷ তাই এ নিয়ে কোনো লুকোচুরি বা গোপনীয়তার কিছু নেই৷
গত ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট ১,১৩১ জন নিহত হন৷ ধসের ১৭ দিন পর ১০ই মে রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে৷