জাপানি ‘নাদেশিকো’দের বিশ্ব জয়
১৮ জুলাই ২০১১জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত ফাইনালে টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে জাপান জয়লাভ করে৷ এর আগে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল৷ দু'বারই জাপান পেছনে পড়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসে অদম্য সাহসী জাপানি মেয়েরা৷ নির্ধারিত সময়ে জাপানের দ্বিতীয় গোলটি আসে খেলা শেষের মাত্র চার মিনিট আগে৷ আর তাতেই হয়তো মনোবল ভেঙে যায় মার্কিনীদের৷ না হলে এর আগে ২৫ বার জাপানের সঙ্গে খেলার সবকটিতে জিতলেও কেন এবার ফাইনালে এসে হেরে যেতে হবে তাদের!
এবার জাপানিদের ইতিহাসটা একটু দেখে নেয়া যাক৷ এর আগে পাঁচটি বিশ্বকাপের ১৬টি ম্যাচে খেলে জাপান জয় পেয়েছিল মাত্র তিনটি ম্যাচে৷ মাত্র একবারই তারা গ্রুপ পর্যায় পেরোতে পেরেছিল৷ সেটা ১৯৯৫ সালে৷ কিন্তু এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৪-০ গোলে হেরে ছিটকে পড়তে হয়েছিল তাদের৷
এই জয় ভূমিকম্প ও সুনামি বিধ্বস্ত জাপানিদের মনোবল তুঙ্গে নিয়ে গেছে৷ সেটা বোঝা গেছে আশ্রয় শিবিরে থাকা জাপানিদের কথাবার্তা থেকে৷ ৭৪ বছরের কাতসু মুরি বলছেন, এই জয় তাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে৷
এদিকে সুনামি বিধ্বস্ত শহর মিনামি-সানরিকু'র ফুটবল সংস্থার প্রধান ইয়ুকিহিতো আবে বলছেন, দেশ পুনর্গঠনের কাজে এই জয় তাদের উৎসাহ জোগাবে৷
জাপানের স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ছয়টায় খেলা শেষ হওয়ার পর পুরো দেশে উৎসব শুরু হয়ে যায়৷ প্রধান সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংস্করণ বের করে৷ ‘আশাহি শিম্বুন' পত্রিকা শিরোনাম দিয়েছে এইভাবে, ‘‘নাদেশিকো, বিশ্বের এক নম্বর''৷
যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক হোপ সোলো খেলার পর মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি ফাইনালে জাপানের সঙ্গে আরও বড় কোনো শক্তি ছিল''৷ এই মন্তব্য দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, সুনামি ও ভূমিকম্পের কারণে জাপানিরা সারা বিশ্বের সমর্থন পেয়েছে৷
সোলোর এই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে এক জার্মান সমর্থকের মুখেও৷ তিনি বলছেন, ৯/১১'র পর আমরা ‘ছোট্ট মার্কিনি' হয়ে গিয়েছিলাম আর ফুকুশিমার ঘটনার পর আমরা ‘জাপানি' হয়ে গেছি৷
এবার দিয়ে ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত প্রমীলা ফুটবল বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন জাপানের অধিনায়ক হোমারে সাওয়া৷ যিনি টুর্নামেন্টের সেরা গোলদাতাও হয়েছেন৷ এই সাওয়াই ফাইনালের ১১৭তম মিনিটে গোল করে জাপানকে দ্বিতীয়বারের মতো খেলায় ফিরিয়ে এনেছিলেন৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক