জামায়াত কি বিএনপিকে ছেড়ে দিয়েছে
২৮ আগস্ট ২০২২তার বক্তব্যের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ তবে কয়েকজন জামায়াত নেতা দাবি করেছেন, ‘‘ডা. শফিকুর রহমান অনলাইনে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ওই কথা বলেছেন৷ তবে এটা জামায়াতের দলীয় সিদ্ধান্ত কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়৷
জানা গিয়েছে, জামায়াতের আমির এখন প্রায়ই নেতাদের সঙ্গে অনলাইনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন৷ ওই ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ভিডিও কনফারেন্সের৷ তিনি সেখানে বলেছেন, ‘‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম ৷ ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল ৷ ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে৷ সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ছিল৷ সেটা আর ফিরে আসেনি৷ বছরের পর বছর পর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছেন, বিশেষ করে প্রধান দলের(বিএনপি) এই জোটকে কার্যকর করার কোন চিন্তা নাই৷ বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর উপর ভর করে পথ চলা৷ তবে হ্যাঁ জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ৷''
তার এই বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে আসার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে৷ আওয়ামী লীগের মধ্যে উল্লাস লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ আর বিএনপি নেতারা সতর্কভাবে কথা বলছেন৷ রবিবার জামায়াত নেতারাও যার যার বলয়ে বৈঠক করেছেন৷
এই অবস্থায় জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াতের আমিরের এটা কোনো অফিসিয়াল বক্তব্য নয়৷ এটা অফিসিয়াল বক্তব্য হলে তো আমরা প্রেস রিলিজ দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানাতাম৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জোট ছাড়ার কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি৷ কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি৷ তবে এখন আমরা আলাদা কর্মসূচি দচ্ছি৷ তার মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলন করছি আলাদা প্লাটফর্মে৷''
আর সিলেটের শুরা সদস্য নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘‘জামায়াতের আমির বলেছেন ২০ দলীয় জোট আর ২০০৬ সালের পর সক্রিয় নেই৷ জামায়াত যে জোটে নেই সেকথা তিনি বলেননি৷
তার কথায়, ‘‘বিএনপির নেতারা বিভিন্ন সময় দেশে বিদেশে বলেছেন জামায়তে ছাড়ার জন্য তাদের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ আছে৷ আমরা কিন্তু কখনোই এটা বলিনি৷''
তিনি বলেন,‘‘ আসলে জোটের এখন কোনো কার্যক্রম নাই৷ দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে আমাদের জেটগত যোগাযোগও নাই৷ আমরা ১৯৯৬ সালের মত লিয়াঁজো কমিটির মাধ্যমে সামনে যুগপৎ আন্দোলন করব৷ যার যার অবস্থান থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে৷''
১৯৯৯ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি চারদলীয় জোট গঠন করে৷ এই জোটই পরে হয় ২০ দলীয় জোট৷ তবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সখ্যতা আরো পুরোনো৷ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘ ২০ দলীয় জোট ভেঙে যাওয়া বা জামায়াত জোট ছেড়ে গেছে এরকম কোনো বিষয় আমাদের জানা নাই৷ আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷ আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি৷ আমাদের লক্ষ্য এই সরকারের পতন এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলনে যোগ দেবেন৷ জামায়াতের আমিরও তো বলেছেন তারা যুগপৎ আন্দোলনে আছেন৷ জামায়াকে এই আন্দোলন থেকে বাইরে রাখার কোনো ইচ্ছা আমাদের নাই৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে জবাবে বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে বিএনপির কর্মসূচির ওপর হামলা বেড়ে গেছে৷ এর কারণ আন্দোলনে ভীত হয়ে সরকারের লোকজন হামলা করছে৷ আর শেখ হাসিনা মুখে এক কথা বলেন, অন্তরে আরেক চিন্তা৷ তিনি হামলা বা গ্রেপ্তার হবেনা বললেও হামলা গ্রেপ্তার আরো বেশি হচ্ছে৷''
এদিকে জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান উল্লসিত হয়ে রবিবার বলেছেন, ‘‘বিএনপির বড় উইকেট পড়ে গিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলাম বলেছে বিএনপির সঙ্গে তারা আর নেই৷''
জামায়াতের কোনো কোনো নেতা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে৷ তবে জামায়ত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘‘ এই কথার কোনো সত্যতা নেই৷ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কোনো ধরনের কোনো বৈঠক আমাদের হয়নি৷''