জামিন শুনানিতে হাইকোর্ট বিব্রত, তারপর?
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮গত ৫ আগস্ট রাতে শহিদুল আলমতে তাঁর বাসা থেকে আটক করা হয়৷ আর ৬ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি বিদেশি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে আইনের লঙ্ঘন করেছেন৷ তাঁকে আটকের পর বিভিন্ন আদালতে কয়েক দফা জামিনের আবেদন করা হয়েছে৷ কিন্তু জামিন মেলেনি৷ সর্বশেষ হাইকোর্টে আবেদনের শুনানি ছিল মঙ্গলবার৷ কিন্তু হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জামিন শুনানিকালে বিব্রত বোধ করেন৷ তাই জামিন শুনানি হয়নি৷ নিয়ম অনুযায়ী, এখন শহিদুলের আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে৷ প্রধান বিচারপতি আবেদনটির শুনানির জন্য অন্য আরেকটি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন৷ তবে সেটা কতদিনের মধ্যে হবে, তা সুর্নিষ্ট নয়৷
হাইকোর্টে শহিদুল আলমের জামিন শুনানির জন্য ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. শাহদীন মালিক ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়, বিশ্বজিৎ দেবনাথ৷
ব্যারিস্টার সারা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আদালতের বিব্রত হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু আমাদের জানানো হয়, বিব্রত বোধ করার কারণ জাননোর রেওয়াজ নেই৷ আমরা জানতে চাই এ কারণে যে, আমরা কেন শুনানি করতে পরব না৷ আদৌ শুনানির সুযোগ পাব কিনা? আমাদের বলা হলো, আমরা চাইলে আবেদনটি ফিরিয়ে নিতে পারি৷ অথবা প্রধান বিচারপতির কাছে আরেকটি বেঞ্চের জন্য আবেদন করতে পারি৷ আমরা সেই আবেদন করেছি৷ এখন জানি না প্রধান বিচারপতি কী নির্দেশ দেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা শহিদুল আলমকে আটকের প্রথম দিনই জামিন চেয়েছি৷ সেদিন ম্যাজিষ্ট্রেট জামিনের শুনানি না করেই কোর্ট থেকে চলে যান৷ তারপর আমরা সেশন জজ কোর্টে জামিনের আবেদন করি৷ কিন্তু এক মাস পরে শুনানির তারিখ ফেলেন, যা অযৌক্তিক৷ শহিদুলকে মাত্র একটি বক্তব্যের জন্য আটক করা হয়েছে৷ তাঁর জামিন আবেদন শুনতে কেন একমাস লাগবে? আমরা দুইবার জজ আদালতে জামিন শুনানি এগিয়ে আনার আবেদর করেছি৷ কিন্তু আমাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি৷ জামিন নাকচ করলে আমরা উচ্চ আদালতে যেতে পারতাম৷ কিন্তু জামিন আবেদন শোনাই হবে না, এটা কেমন কথা! তাই আমরা হাইকোর্টে গেলাম৷ সেখানেও এই অবস্থা হলো৷ আদালত ব্রিবত হলেন৷''
ব্যারিস্টার সারা হোসেন আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘জামিন তো পরের কথা, আমাদের জামিন আবেদনই শোনা হচ্ছে না৷ অথচ ঈদের আগে ৫৭ ধারার মামলায় প্রায় সবাইকে জামিন দেয়া হয়েছে৷ ৫৭ ধারা হলো কথা বলার অপরাধ৷ অন্য কোনো অপরাধ এই ধারায় যুক্ত করার সুযোগ নেই৷ তিনি এমন কী বক্তব্য দিয়েছেন যার জন্য তাঁকে আটকে রাখতে হবে?''
সারা হোসেন আরো বলেন,‘‘তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে৷তাঁর ওপর নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার কোনো পরীক্ষাও করা হয়নি৷ আমরা জেল খানায় তাঁর জন্য ডিভিশনের আবেদন করেছিলাম৷ আদালত দিতেও বলেছেন৷ কিন্তু তার জন্য জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমোদন লাগবে৷ কিন্তু তিনি গত ৫দিন ধরে সই করছেন না৷''
তিনি বলেন, ‘‘যারা আসলে এ রকম করছেন, তারা আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল৷ তারা আইনের শাসন অনুসরণ করতে চান না৷''
অন্যদিকে অ্যার্টর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিচারকরা ব্রিবত হতেই পারেন৷ এটা তাঁদের অধিকার৷ আর তাঁরা কেন বিব্রত হন, তা জানাতে বাধ্য নন৷ তবে প্রধান বিচারপতি জানতে চাইলে তাঁকে বিচারপতিরা জানান৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন প্রক্রিয়া হলো প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন গেলে তিনি আরেকটি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন শুনানির জন্য৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘শহিদুল আলম জামিন পাবেন কি পাবেন না সেটা আদালতের বিবেচ্য বিষয়৷ একই ধরনের মামলায় অনেকে জামিন পেলেও অপরাধের তো গুরুত্ব আছে৷ এটা কোর্ট বিচার করবেন৷ আমি তো আর বলতে পারিনা, তিনি জামিন পেয়ে যাবেন৷''