জার্মান নাগরিকরা ইসলামবিরোধী নয়
২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮মূলত তুরস্ক থেকে আগত অভিবাসী কর্মীদের কারণে শহরের মুসলিম জনসংখ্যা ১০ শতাংশের মত৷ আর ৩০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে অন্য ধর্মের মানুষ এবং কোন ধর্মই পালন করেন না এমন মানুষ৷ দৈনন্দিন জীবনে কোলনের বাসিন্দারা খুবই হৈচৈপ্রিয়,আমুদে এবং বেশ উদার৷ অভিবাসীদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে শহরে গড়ে উঠেছে এক ধরনের বহু-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য৷ আর সে-ঐতিহ্য নিয়ে কোলনবাসীদের গর্বও আছে৷ সেই গর্বটাকেই তাঁরা ধরে রাখলেন সম্মিলিতভাবে৷
কোলনের এরেনফেল্ড এলাকায় বহু তুর্কীর বাস৷ ফলে সেখানে মিনারওলা একটা মসজিদ গড়ে তোলার প্রয়োজন অনুভব করছিল তুর্কী-ইসলামী ইউনিয়ন ডিটিব৷ নামাজ পড়ার জায়গা যে নেই তা নয়৷ কিন্তু সেগুলো ঠিক প্রথাগত মসজিদ নয়৷ এরেনফেল্ড এলাকায় ডিটিব-এর কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কোলনেরই প্রোক্যোয়েলন নামে একটি সংগঠন জল ঘোলা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল৷ উগ্র দক্ষিণপন্থী ভাবধারার কিছু লোক এই আপাত-নিষ্পাপ সংগঠনের আড়ালে ইসলামবিরোধী মনোভাব উশকে দিতে চাচ্ছিল৷ তারা প্রচার চালাচ্ছিল যে, এই মসজিদ তৈরি হলে শহরে মুসলমানদের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে৷ কিন্তু এই প্রচারণায় কোন কাজ হয় নি৷ কোলনের সাধারণ মানুষকে এই পরিকল্পিত মসজিদের বিরুদ্ধে আনা যায় নি৷
কোলনেরই বিখ্যাত স্থপতি পাউল ব্যোয়েম-এর মূল নকশার কিছু রদবদল করে তৈরি হবে ডিটিব-এর কেন্দ্রীয় মসজিদ৷ থাকবে তার ৫৫ মিটার উঁচু মিনার৷ পৌর প্রশাসন এই সংশোধিত নকশা অনুমোদন করেছে৷ শীর্ষ মেয়র ফ্রিত্স শ্রামা নিজ দল খ্রিস্টিয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন সিডিইউ-র বিরুদ্ধে গিয়ে মসজিদ নির্মাণের পক্ষ নিয়েছেন৷ পৌরসভার চূড়ান্ত অনুমোদনে নাখোশ প্রোক্যোয়েলন দল ইসলামীকরণ-এর ধুয়া তুলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়৷ তাতে উপস্থিত হবার কথা ছিল ইউরোপের অন্যান্য দেশের কিছু উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকের৷ কিন্তু কোলনের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বানচাল হয়ে যায় প্রোক্যোয়েলন-এর পরিকল্পিত সম্মেলন৷ বাস কোম্পানি এই উগ্র দক্ষিণপন্থী মানুষগুলোকে বাসে তোলে নি৷ হোটেলে তারা জায়গা পায় নি৷ কোলনের ট্যাক্সিচালকরা তাদের কোথাও নিয়ে যেতে অস্বীকার করে৷ বামপন্থী ইসটাবলিশমেন্ট-বিরোধী তরুণরা কিছু গোলযোগ ঘটায়৷ তবে পুলিশ তাদের মোকাবিলায় কড়া ব্যবস্থা নেয়৷
সমাবেশের বিরোধিতা করতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ শহরের নানা জায়গায় বিক্ষোভ করেছেন৷ এরকম একটি জমায়েতে জনৈক বক্তা বলেন, আমাদের শহরে ইউরোপের উগ্র দক্ষিণপন্থীদের এই সমাবেশ প্রতিহত করতে আমরা খ্রিস্টান, সমাজতন্ত্রী, মুসলিম, ইহুদী, শ্রমিক ইউনিয়নকর্মী, গণতন্ত্রী - কোলনের সর্ব স্তরের মানুষ এই চত্বরে সমবেত হয়েছি৷
শীর্ষ মেয়র ফ্রিত্স শ্রামা কোলনের জগদ্বিখ্যাত গির্জার চত্বরে প্রতিবাদী এক সমাবেশ-এর ডাক দিয়েছিলেন৷ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই ব্রাউনিদের জন্য আমাদের শহরে কোন স্থান নেই৷
গানে বক্তৃতায় শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে কোলন৷
যে জায়গায় মসজিদ হবার কথা , সেখানে বহু মানুষ মানববন্ধন করেছেন, যাতে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা সেখানে পৌঁছাতে না পারে৷ তুর্কী-ইসলামী সংগঠন ডিটিব কোলনে এই সামাজিক সংহতির প্রকাশের জন্য কোলনবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ ডিটিব মনে করে, মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য এটা এক সুস্পষ্ট ইতিবাচক সংকেত৷ কোলনের প্রটেস্ট্যান্ট গির্জা শহরের পুরনো এলাকায় শান্তিপ্রার্থনার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল৷ গির্জা কর্তৃপক্ষ বলেছে, হাজার হাজার নাগরিকের প্রতিবাদ সংহতির এক দারুণ সংকেতই তুলে ধরে৷ শুধু তাই নয় আরব দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যেও তার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া অনুভূত হয়েছে৷ তারা বুঝতে পারছে, এখানকার মানুষ ইসলামবিরোধী নয় মোটেও৷ দূর হচ্ছে পরস্পর সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা৷