ধর্মও আলোচনার বিষয়
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩২২ বছর বয়সের লায়লা ইউনেস আমাইরে বার্লিনের ‘ফ্রাইয়ে উনিভার্সিটেট' বা মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুসলিম ছাত্রী৷ শৈশব ও স্কুলজীবন কেটেছে বার্লিনের পূর্বাঞ্চলে৷ কিন্ডারগার্টেন, প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, সর্বত্রই তিনি ছিলেন সংখ্যালঘুদের একজন৷ শেষমেষ বার্লিন মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়া শুরু করার পর তিনি নিজের জায়গা, নিজের সমাজ বলে কিছু একটা খুঁজে পেয়েছেন: মুসলিম কলেজ গোষ্ঠী৷
কলেজ গোষ্ঠী
বার্লিনের মুসলিম কলেজ গোষ্ঠী হল মুসলিম ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপক পরিষদের অংশ৷ বার্লিনের মতো সারা জার্মানিতে ৩০টি কলেজ গোষ্ঠীর সমিতি হল এই পরিষদ৷ কলেজ গোষ্ঠীগুলি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে: রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে রমজানের শেষে ইফতার অবধি৷ কলেজ গোষ্ঠীগুলি সমাজে পরিবর্তন আনায় সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট হতে চায়, যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে কিংবা মুসলিমদের জার্মান সমাজের অঙ্গ করে তোলার ব্যাপারে৷ এক্ষেত্রে লায়লার বিশেষ উৎসাহ এবং উদ্যোগ: ‘‘আমার যখন ৫০ বছর বয়স হবে, তখন আমি বলতে চাই না যে, ছাত্রজীবনে আমি শুধু পড়াশুনা করেছি, ব্যস, আর কিছু করিনি৷ আমি যেন বলতে পারি, আমি সক্রিয় ছিলাম আর তার থেকে কিছু একটা কাজও হয়েছে৷''
নানা ভাষা, নানা মত
লায়লা ইউনেস আল-আমাইরে বাকি সতীর্থদের সঙ্গে একত্রে রমজানের ইফতার করতে ভালোবাসেন৷ ইওনাস ফেগার্টের কাছে ইহুদিদের আলোক উৎসব হানুকা-য় অন্যান্য ইহুদি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মোমবাতি জ্বালানোটাই হল ছাত্রজীবনের একটা স্মরণীয় মুহূর্ত৷ তিন বছর আগে ফেগার্ট যখন এখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়তে শুরু করেন, তখন কোনো ইহুদি কলেজ গোষ্ঠী ছিল না৷ সেই কারণে তিনি নিজেই উদ্যোগ নেন: ‘‘ইহুদি গ্র্যামার স্কুল থেকে পাস করার পর আমি আর আমার এক বন্ধুর চিন্তা হয়: স্কুল ছাড়ার পর আমরা (ইহুদিরা) কী করব? তারপর অন্যদের খোঁজ করি, যাদের আমাদের মতোই অবস্থা৷ তারপর আমরা এই ইহুদি কলেজ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করি৷''
নাম রাখা হয় ‘স্টুডেন্টিম'৷ বার্লিনে ইহুদি ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগ, তাই নামটিও হিব্রু এবং হিব্রু ভাষায় তার অর্থটিও খটোমটো কিছু নয়৷ ‘স্টুডেন্টিম' মানে হল ছাত্রমহল৷ সদস্যরা ধর্মীয় উৎসবে কিংবা ফিল্ম কি আলোচনাসভায় মিলিত হন৷ ইসরায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ইহুদি পড়ুয়ারাও নাকি গোষ্ঠীতে যোগদান করতে ইচ্ছুক৷
‘স্টুবে' মানে ‘ঘর'
অন্যান্য ধর্মের ছাত্রছাত্রীরা এখনও তাদের নিজস্ব কলেজ গোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারেননি৷ তবে তারা ‘স্টুবে' নামধারী অপর একটি সংগঠনের দ্বারস্থ হতে পারে৷ ‘স্টুবে' বলতে ‘এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন অ্যামেরিকা থেকে আগত আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য পাঠক্রমের সহযোগী কর্মসূচি'-র আদ্যক্ষর৷ ‘স্টুবে'-র কর্মসূচি বার্লিনের এভাঞ্জেলিকাল, অর্থাৎ প্রোটেস্ট্যান্ট কলেজ গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হলেও সব ধর্মের ছাত্রছাত্রী এখানে স্বাগত৷ নেপাল থেকে আসা রোদিনা আচার্য এখানে সহজেই বন্ধু খুঁজে পেয়েছেন৷
রোদিনা যেমন স্টুবে'র বিদেশি-বহিরাগতদের মধ্যে বন্ধু করে নিয়েছেন, তেমন তিনি খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন৷ অপরদিকে তিনি সম্প্রতি তাঁর সেই বিদেশি, বিধর্মী বন্ধুদের বার্লিন-নয়ক্যোল্ন পাড়ার নতুন হিন্দু মন্দিরটি দেখাতে নিয়ে যান৷ মজার কথা, রোদিনার নিজেরও সেই প্রথম ঐ মন্দিরে ঢোকা৷
রোদিনা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যা করছেন, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের কলেজ গোষ্ঠীগুলি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তাই করে থাকে৷ বার্লিনের মুসলিম কলেজ গোষ্ঠী সম্প্রতি পটসডামের কলেজ সমিতির সঙ্গে একটি যৌথ উৎসবের আয়োজন করে৷ নাম রাখা হয়েছিল ‘হালাল ও কোশার'৷ একটি প্রোটেস্টান্ট গির্জায় মুসলিম ইফতার ও ইহুদি সাবাথ উৎসবের যুগ্ম আয়োজন করা হয়েছিল৷ অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন এক ক্যাথলিক সাইকোথেরাপিস্ট৷