তুরস্কে কি অর্থনৈতিক অবরোধ চায় জার্মানি?
২৮ আগস্ট ২০১৭তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান দেশটিতে স্বৈরশাসন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রীদের নেতা মার্টিন শুলৎস৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ চান তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘এমন এক প্রেসিডেন্টকে কিভাবে সহ্য করা যেতে পারে? নিজের দেশ তো বটেই, তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সব ধরনের সংযমের মাত্রা অতিক্রম করেছেন৷'' জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘নির্দোষ জার্মান নাগরিকরা একটি স্বৈরচারী দেশের কারাগারে যন্ত্রণা ভোগ করছে, এ আমরা কিভাবে সহ্য করবো?''
জার্মানির সরকারি তথ্যমতে, অন্তত ৫৪ জন নাগরিক তুরস্কের কারাগারে আছেন, এর মধ্যে ১০ জন আটক আছেন রাজনৈতিক কারণে৷ আটকদের মধ্যে আছেন দুই হাইপ্রোফাইল বন্দি – সাংবাদিক ডেনিস ইয়ুসেল এবং মানবাধিকারকর্মী পেটার স্টয়েড্টনার৷
সেপ্টেম্বরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং তাঁর খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শুলৎস৷ তিনি মনে করেন, এর্দোয়ান সহযোগিতা করতে রাজী না হলে, জার্মানির উচিত নিজের মতো করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া৷
শুলৎস বলছেন, তুরস্কের সাথে শুল্ক ইউনিয়ন নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা এখনই বন্ধ করে দেয়া উচিত৷ তুর্কি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আরো বেশি মুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দিতে ১৯৯৫ সালের চুক্তির সংশোধন চায় তুরস্ক৷
এখনই সময়
বাভারিয়া অঞ্চলে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের সহযোগী দল খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)-এর নেতা হ্যোর্স্ট জেহোফার তুরস্কের সাথে সব ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানিয়েছেন৷ জার্মানির ফুঙ্কে মিডিয়া গ্রুপকে তিনি বলেন, ‘‘তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য প্রস্তুত করতে যে অর্থ খরচ করা হচ্ছে, তা এখনই বন্ধ করা উচিত৷'' প্রতি সপ্তাহেই আঙ্কারা নতুন নতুন হুমকি সৃষ্টি করছে বলেও মনে করেন তিনি৷
২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তুরস্কের সাড়ে চার বিলিয়ন ইউরো অর্থসাহায্য পাওয়ার কথা৷ ইইউ-র সদস্য হওয়ার আগে তুর্কি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউরোপের মানে উন্নীত করাই এই সহায়তার লক্ষ্য৷
শাপে বর?
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েলও আঙ্কারার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন৷ কিন্তু পাশাপাশি কঠোর পদক্ষেপ উলটো এর্দোয়ানের হাতই শক্তিশালী করবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি৷ বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইইউতে তুরস্কের অন্তর্ভূক্তির আলোচনা একেবারে বন্ধ করা উচিত হবে না৷ কারণ, গাব্রিয়েল মনে করেন, ‘‘ঠিক এর জন্যই অপেক্ষা করছেন এর্দোয়ান৷''
‘‘তিনি তখন এটা প্রমাণ করতে পারবেন যে, তুরস্ক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইউরোপ৷ তার নিজের ঘরে এত বিবাদ যে তাকে এখন বিদেশে শত্রু খুঁজতে হচ্ছে৷''
তবে এরই মধ্যে জার্মান সরকার তুরস্কের ব্যাপারে কিছুটা সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছে৷ জার্মান নাগরিকদের তুরস্ক ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে সরকার৷ জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তুরস্কে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবেই নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে৷
এডিকে/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)