জার্মান সংবিধানের ৭৫ বছর
১৯৪৯ সালে এই সংবিধান গ্রহণ করে পশ্চিম জার্মানি। এরপর এটি বহুবার সংশোধন করা হয়েছে, জার্মান সামরিক বাহিনী বুন্ডেসভেয়ার প্রতিষ্ঠার মতো কিছু বিতর্কিত সংযোজনও করা হয়েছে সংবিধানে।
'মানুষের মর্যাদা অলঙ্ঘনীয়'
আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মান সংবিধান পরিচিত বেসিক ল, বা মৌলিক আইন নামে। এর প্রথম অনুচ্ছেদ শুরু হয়েছে এই বাক্য দিয়ে - 'মানুষের মর্যাদা অলঙ্ঘনীয়'। নাৎসি জার্মানির নজিরবিহীন অপরাধের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই বাক্যটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং হলোকাস্টের জন্য দায়ী ছিল নাৎসি জার্মানি। জার্মানি এবং ইউরোপ জুড়ে ৬০ লাখ ইহুদি ছাড়াও আরো অনেককে হত্যা করেছিল নাৎসি বাহিনী।
১৯৪৯: মৌলিক আইন গৃহীত হয়
মৌলিক আইন হিসাবে জার্মান সংবিধান গ্রহণ করা হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ মে। তখন অবশ্য এটি শুধুমাত্র পশ্চিম জার্মানির জন্যই প্রযোজ্য ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী পশ্চিমা শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স পশ্চিম জার্মানির তিনটি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতো। সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে একই বছরের ৭ অক্টোবর জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫৬: জার্মান সামরিক বাহিনী
মৌলিক আইন কয়েক দশকে অন্তত ৭০ বার সংশোধন করা হয়েছে। সামাজিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা ছিল এসব পরিবর্তনের লক্ষ্য। এসব পরিবর্তনের মধ্যে বিশেষভাবে বিতর্কিত ছিল পুনঃসামরিকীকরণ। পশ্চিম জার্মানি ১৯৫৫ সালে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়ার পর জার্মান সশস্ত্র বাহিনী বা বুন্ডেসভেয়ার প্রতিষ্ঠা করে। বাহিনীকে সাংবিধানিক কাঠামো দেয়ার জন্য ১৯৫৬ সালে সংবিধান সংশোধন করা হয়।
১৯৬৮: জরুরি অবস্থায় মৌলিক অধিকার সীমিত করা
১৯৬৮ সালে ‘জরুরি অবস্থা‘ সংশোধনীরও সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল। এই সংশোধনের উদ্দেশ্য ছিল সংকটময় পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিদ্রোহ এবং যুদ্ধকালীন সময়ে রাষ্ট্রের কাজ করার ক্ষমতা নিশ্চিত করা। এই সংশোধনীর ফলে বুন্ডেসভেয়ারকে দেশের মধ্যে মোতায়েন, ব্যক্তিগত যোগাযোগে গোপন নজরদারি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সীমাবদ্ধ করারও সুযোগ তৈরি হয়।
১৯৯১: একত্রীকরণের পরও একই সংবিধান
মৌলিক আইন যখন প্রণয়ন করা হয় তখন সেটিকে সাময়িক হিসাবেই বিবেচনা করা হয়েছিল। দুই জার্মানি এক হলে নতুন এবং স্থায়ী সংবিধান তৈরি করা হবে, এমনটাই ছিল চিন্তা। কিন্তু দুই জার্মানিকে আলাদা করা বার্লিন দেয়ালের পতন এবং ১৯৯১ সালে জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পরও নতুন সংবিধান প্রণয়ন হয়নি, বরং মৌলিক আইনকেই পুরো জার্মানির জন্য প্রযোজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৩: আশ্রয় প্রার্থনার অধিকার সীমাবদ্ধ
পুনরেকত্রীকরণের তিন বছর পর ১৯৯৩ সালে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদনের সংখ্যা ব্যাপক সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মৌলিক আইনে শরণার্থীদের আশ্রয়ের অধিকারটিকে সীমাবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই সংস্কারের ফলে জার্মানির নাগরিকত্ব না থাকা ব্যক্তিদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়। তবে এর আগে সেই দেশকে নিরাপদ দেশের তালিকায় তালিকাবদ্ধ করতে হয়। তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন জর্জিয়া।
২০০৯: ঋণ সীমিতকরণ
সরকারি ঋণ সীমিত রাখার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে মৌলিক আইনে ‘ডেট ব্রেক‘ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবর্তিত এই ব্যবস্থাটি আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি ঋণ গ্রহণে সীমা নির্ধারণ করে দেয়। তবে অপ্রত্যাশিত সংকটের ক্ষেত্রে ঋণ সীমা তুলে নেওয়ার সুযোগও রয়েছে, যেমনটি কোভিড মহামারি চলাকালীন করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে অনেকে ২০২৪ সালেও ঋণ সীমা শিথিল করার আহ্বান জানাচ্ছেন।