জার্মানি: ঐক্য পুনরেত্রীকরণের চেয়েও বড় বিষয়
৩ অক্টোবর ২০২১এ পার্থক্য আমাদের বুঝিয়ে দিল যে পুনরেত্রীকরণ মানে শুধু দুই অঞ্চলের মানুষকে একত্রিত করাই নয়, এটি তার চেয়েও অনেক বড় বিষয়৷
জার্মানিতে এবারের জাতীয় নির্বাচনটি ছিল দুই জার্মানির পুনরেত্রীকরণ দিবসের ঠিক এক সপ্তাহ আগে৷ ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভাগ হয়ে যাওয়া দুই জার্মানি অর্থাৎ পূর্ব আর পশ্চিম জার্মানি আবারো একত্রিত হয়ে ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি নাম ধারণ করেছিল৷
তাই পুনরায় একত্রিত হওয়ার ৩১ বছর পরেও দুই অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক ভাবনা আর পছন্দ-অপছন্দ কতোটা এক বিন্দুতে মিলেছে তা বুঝার একটি সুযোগ দিয়েছে নির্বাচনটি৷
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুই অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দে এখনো বিস্তর ফারাক রয়েছে৷ যেমন সাবেক পূর্ব জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে সাক্সনি ও ঠুরিঙ্গিয়ায় কট্টপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ডের জনপ্রিয়তা দেখা গেছে৷ আর বামপন্থি দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, সবুজ দল এবং খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের জনপ্রিয়তা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে৷
এমন ফলাফলে অবশ্য আমি খুব একটা অবাক হয়নি৷ ডয়চে ভেলের আফ্রিকা বিভাগের হয়ে জার্মান নির্বাচন কভার করার সময় জার্মানির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতে আমি ঘোরাঘুরি করেছি৷ সেসময় বিভিন্ন শহরে যেমন সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের হালে শহরে ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ডের নির্বাচনী পোস্টার আমি দেখেছি৷ বিষয়টি বুঝতে সেই শহরের ভোটার ও রাজনীতিবাদদের সাথে আমি কথা বলার চেষ্টা করি৷
কথা বলে আমি যা বুঝতে পারলাম তা হলো, এ অঞ্চলের ভোটারদের অনেকেই আসলে নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করে৷ আর জার্মানির প্রতিষ্ঠিত দল সোশ্যাল ডেমোক্রেট কিংবা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের প্রতি তাদের বিরুপ মনোভাব লক্ষ্য করলাম৷ আর এ কারণে কয়েক বছের আগে জন্ম নেওয়া অলটারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ড এ অঞ্চলের অনেকের কাছে একটি বিকল্প৷ কারণ এ দলটিকে তারা নিজেদের ‘বঞ্চনার' ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবেই দেখছে৷
আলাদা আর পুনরেত্রীকরণ একেকজনের কাছে একেরকম
একটি সমাজে সদস্যদের একতাবদ্ধ হওয়ার কিংবা আলাদা হওয়ার পেছরে নানা রকমের কার্যকারণ থাকে৷ দীর্ঘ বছরের স্নায়ুযুদ্ধের ফলে জার্মানির অভ্যন্তরে এক ধরনের দ্বিধা-বিভক্তি বিরাজমান আছে৷ আবার স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের এমন বিভাজন কিন্তু সমাজতন্ত্রী দেশগুলোতে এক ধরনের একতারও জন্ম দিয়েছে৷
সমাজতন্ত্রী ধারণা লালনকারী আফ্রিকার কিছু দেশ এ কারণেই হয়তো একতাবদ্ধ হয়েছে৷ সেই সমযে মধ্য-আফ্রিকার কিছু দেশ যেমন মোজাম্বিক কিংবা অ্যাঙ্গোলা থেকে অনেকেই পূর্ব জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করতে আসতো৷ তাদের এ আগমন সেখানকার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় শ্রমজীবী মানুষের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করেছে৷
তবে বার্লিন দেয়ালের পতনের পর এমন একতাবদ্ধ থাকার ভাবনায় ছেদ পড়ে৷ যদিও আফ্রিকার দেশ থেকে আসা অনেক শ্রমিক দুই জার্মানির একত্রিত হওয়াকে উদযাপন করেছে এবং দেশটিতে থেকে গেছে, অনেকেই কিন্তু আবার নিজ দেশে ফেরত গেছে৷
একতাবদ্ধ হওয়ার নানান ধরন
দুই জার্মানির একত্রিত হওয়া আমাদের দেখিয়েছে যে ঐক্যবদ্ধ থাকার নানা ধরন রয়েছে৷ দেখিয়েছে যে পুনরেত্রীকরণ একটি ক্রমাগত বিকাশমান প্রক্রিয়া যা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ঘটতে পারে৷
আজকের দিনে দেখা যাচ্ছে, আঞ্চলিক একতাই হলো ইউরোপিয়ার ইউনিয়ন বা আফ্রিকার দেশগুলোর জোট আফ্রিকান ইউনিয়নের মূল প্রত্যাশা৷
জার্মানির পুনরেত্রীকরণের ৩১ বছর পর আমরা দেখছি যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাওয়া এবং এই ঐক্যকে প্রাকৃতিক ও ক্রমবিকাশমান প্রক্রিয়া হিসেবে মেনে নেওয়ার বিষয়টি খুব গুরুত্বপুর্ণ৷
হারিসোন ভিলিমা/আরআর