জার্মানি ও তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্কের ১০০ বছর
১৯২৪ সালে টার্কিশ রিপাবলিক ও জার্মানির মধ্যে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক মধুর নয়৷
কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন
১৯২৪ সালে টার্কিশ রিপাবলিক ও জার্মানির মধ্যে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দুই দেশই মিত্র ছিল৷ দুই দেশেই রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটেছিল৷ জার্মান সাম্রাজ্য হয়ে গিয়েছিল ভাইমার রিপাবলিক৷ অটোমান সাম্রাজ্য হয়েছিল টার্কিশ রিপাবলিক৷ টার্কিশ রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার কয়েকমাস পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়৷ অটোমান ও জার্মান সাম্রাজ্যের মধ্যেও কূটনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক ভালো ছিল৷
নাৎসি নিপীড়নের শিকারদের আশ্রয়স্থল তুরস্ক
টার্কিশ রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার পর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক৷ তিনি একটি ধর্মনিরপেক্ষ ইউরোপপন্থি তুরস্ক গড়তে চেয়েছিলেন৷ তাই অটোমান সাম্রাজ্যের শরিয়া আইনের বদলে পশ্চিমা আইনি ব্যবস্থা চালু করেছিলেন তিনি৷ সেই তুরস্ক জার্মানিতে নাৎসি নির্যাতনের শিকার অনেক শিক্ষাবিদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল বলে জানান তুরস্ক বিশেষজ্ঞ রাসিম মারৎস৷ এদের মধ্যে বার্লিনের মেয়র এয়ার্নস্ট রয়টারও (ছবি) ছিলেন৷
অতিথি শ্রমিক চুক্তি
দুই দেশের সম্পর্কে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল ১৯৬১ সালের এক চুক্তি৷ শ্রমিক সংকট কাটাতে তুরস্কের সঙ্গে ঐ চুক্তি করেছিল জার্মানি৷ সেই চুক্তির আওতায় প্রায় পৌনে নয় লাখ তুর্কি শ্রমিক জার্মানিতে এসেছিলেন৷ সঙ্গে ছিল পরিবার৷ তারা খনি, গাড়ি শিল্পে কাজ করেছেন৷ বিভিন্ন দোকান প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ বর্তমানে জার্মানিতে প্রায় ৩০ লাখ তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষ বাস করেন৷
শ্রদ্ধা প্রদর্শন
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার সম্প্রতি তুরস্ক সফরে গিয়েছিলেন৷ তুরস্কের অতিথি শ্রমিকদের সম্মান জানাতে তিনি ইস্তাম্বুলের সারকেসি ট্রেন স্টেশনে গিয়েছিলেন৷ কারণ, ঐ স্টেশন থেকেই অনেক অতিথি শ্রমিক জার্মানির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন৷ স্টাইনমায়ার বলেন, ‘‘তারা (অতিথি শ্রমিক) আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে, শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছেন৷ তারা আমাদের সমাজের হৃদয়ে বাস করেন৷’’
সম্পর্কে অবনতি
রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হয়েছে৷ কারণ এর্দোয়ান সরকার বিরোধীদের নির্যাতন করে৷ বিশেষ করে ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর এটি আরও বেড়েছে৷ জার্মানি নিয়মিত তুরস্কের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করে৷ প্রায় ১০ বছর পর জার্মানির কোনো প্রেসিডেন্টের তুরস্ক সফর দুই দেশের বর্তমান সম্পর্ককেই নির্দেশ করছে৷
হামাসের পক্ষ-বিপক্ষ
হামাস সম্পর্কে এর্দোয়ানের অবস্থান জার্মানির রাজনীতিবিদদের জন্য সমস্যার৷ ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার বিষয়টি সমর্থন করেন এর্দোয়ান৷ হামাসকে তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন মনে করেন৷ তবে জার্মানি, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে বিবেচিত করে৷ জার্মান প্রেসিডেন্টের তুরস্ক সফর শুরুর আগে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এর্দোয়ান৷
ইইউ সদস্যপদ
২০০৫ সালে জার্মান চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোয়েডারের সমর্থনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার আবেদন করেছিল তুরস্ক৷ তবে সেই প্রক্রিয়া অনেকদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে৷ দেশের মধ্যে এর্দোয়ানের কঠোর দমননীতি এবং তার পররাষ্ট্রনীতি এর কারণ বলে মনে করা হয়৷
জার্মানির বর্তমান সরকারের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক
আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মান চ্যান্সেলর থাকার সময় ২০১৫-১৬ সালে ইউরোপে শরণার্থী আসার সংখ্যা কমাতে তুরস্কের সহায়তা নিয়েছিলেন৷ সেই সময়কার তুলনায় জার্মানির বর্তমান সরকার তুরস্কের বিরুদ্ধে বেশি সোচ্চার বলে মনে করেন তুরস্ক বিশেষজ্ঞ রাসিম মারৎস৷
জার্মানির আশা
দুই দেশের সম্পর্কে নতুন সূচনার আশায় তুরস্কের সুশীল সমাজ ও বিরোধীদের উপর আশা রাখছে জার্মানি৷ কয়েক সপ্তাহ আগে স্থানীয় নির্বাচনে এর্দোয়ানের দল ধরাশায়ী হয়েছে৷ প্রধান বিরোধী দল সিএইচপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে৷ এর্দোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের আগে জার্মান প্রেসিডেন্ট সিএইচপির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও বর্তমানে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর (বামে) সঙ্গে কথা বলেছেন৷