পোশাক শ্রমিকদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা
৫ নভেম্বর ২০১৫বাংলাদেশ, রানা প্লাজা৷ এপ্রিল ২০১৩৷ একটি গার্মেন্টস কারখানা ভেঙে পড়েছে৷ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে৷ বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ৩০ লক্ষ নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশ কতটা খারাপ, গোটা বিশ্ব তা জানতে পারলো৷
প্রতিদিন শ্রমিকরা পশ্চিমা বিশ্বের বাজারের জন্য জিনস ও টি শার্ট উৎপাদন করেন৷ দিনে অনেক ঘণ্টা কাজ করতে হয়, বছরে তাঁরা বেশি ছুটিও পান না৷ খুব কম শ্রমিকের চাকরির স্থায়িত্ব রয়েছে৷ ফলে ছাঁটাই থেকে সুরক্ষা বা অসুস্থ হলেও বেতনের সুবিধা তাঁরা পান না৷ মজুরিও খুব কম৷ জার্মানির কর্মজগতের পরিস্থিতির সঙ্গে পার্থক্য চোখে পড়ার মতো৷ পোশাক শিল্পের শ্রমিক পপি আক্তার বলেন, ‘‘কাজের ক্ষেত্রে তো অনেক পার্থক্যই তো দেখলাম৷ কাজের ক্ষেত্রে যদি বলি যে এখানকার যন্ত্রগুলি খুব আরামদায়ক৷ আমি চাইলে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারি অথবা বসে কাজ করতে পারি৷ বাংলাদেশে আমাদের বসে কাজ করতে হয়৷ সেই ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়৷ ফলে অনেক সময় মেরুদণ্ডে, ঘাড়ে ব্যথা হয়৷''
অথচ কাজের পরিবেশ আরও সহজ, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর করে তোলা সম্ভব৷ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মী ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের এক দল সম্প্রতি চার সপ্তাহের জার্মানি সফরে এসে স্বচক্ষে তা দেখে গেলেন৷ জার্মানির উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রণালয় ও সরকারি দুর্ঘটনা বিমা কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে তাঁরা জার্মানিতে এসেছিলেন৷
শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি আরমান খান বলেন, ‘‘এ জায়গায় ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে, দুর্ঘটনা বিমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে৷ বিভিন্ন ধরনের বিমা বা হেলথ সেফটি – এ সব বিষয়ে আলাপ আলোচনা খুব ভালো লেগেছে৷ জার্মানিতে এগুলি খুবই ভালো৷''
কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে এসে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা তৈরি পোশাক কারখানার এমন একটি কাজের ইউনিট দেখে অবাক হলেন, যেটি কারখানার কাজ আরও সহজ করে তুলবে, ক্লান্তি দূর করবে৷ শ্রমিকরা ইচ্ছামতো বসে অথবা দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারবেন৷ চেয়ারের বিশেষ হাতল কাঁধ ও হাতের পেশিগুলিকে আরাম দেয়৷ পপি আক্তার বলেন, ‘‘জার্মানিতে আসার পর যা কিছু দেখেছি, তার মধ্যে আজকের এই মেশিনটিই সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে৷ এখানে কাজ করে আমি খুবই আনন্দিত৷''
আইএফএ-র অধ্যাপক রল্ফ এলেগাস্ট বলেন, ‘‘এটা বাংলাদেশেও ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এটা ঠিক যে এই ইউনিটের দাম বেশি – প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার ইউরোর মতো৷ তবে সেই অর্থ দ্রুত উঠে আসবে৷ কারণ দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে কর্মীর পেশি বা হাড়ের কম সমস্যা হবে, তাদের কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে না৷ ফলে হরেদরে অর্থের সাশ্রয় হবে৷''
দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মক্ষেত্রে এমন আধুনিক সুরক্ষার ব্যবস্থা কার্যকর হবে কিনা, তা অনেকটাই নির্ভর করছে পশ্চিমা বিশ্বের ক্রেতা ও পোশাক কোম্পানিগুলির উপর৷ ক্রেতারা পোশাকের জন্য কিছুটা বাড়তি মূল্য দিতে প্রস্তুত হলে তবেই কোম্পানিগুলি বাংলাদেশে বাড়তি মজুরি ও আরও উন্নত সামাজিক মানদণ্ডের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে৷
জার্মানির উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হান্স ইওয়াখিম ফুখটেল এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন৷ তাঁর মন্ত্রণালয় টেকসই পোশাক জোট গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে এবং এ জন্য ৫ কোটি ইউরো ধার্য করছে৷
জার্মান উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হান্স ইওয়াখিম ফুখটেল বলেন, ‘‘এই অর্থ দিয়ে ইন্সপেক্টরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, নতুন প্রযুক্তি, নিরাপত্তার নতুন মানদণ্ড চালু করা হবে৷ এভাবে কর্মস্থলের একটা চিত্র উঠে আসবে৷ ইলেকট্রিকের তার নিরাপদ কিনা, সেগুলি সিলিং-এ লাগানো আছে, না ঘরেই খোলা পড়ে আছে, সে সব জানা যাবে৷''
এই ধরনের স্পষ্ট সাহায্য সম্পর্কে কর্মী, শ্রমিক সংগঠন ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা বেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন৷ জার্মানিতে তাঁরা যা দেখেছেন এবং শিখেছেন, তা যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে চান তাঁরা৷ সিনিয়র অফিসার ডালিয়া আক্তার বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এই ব্যপারে ওনারা আমাদের সরকারকে, আমাদের মালিকদেরকে সাহায্য করতে পারেন, সহায়তা করতে পারেন৷''
সেই আশা যাতে পূরণ হয়, তা অবশ্যই নিশ্চিত করার চেষ্টা করা উচিত৷