বহিষ্কৃত এক তরুণের গল্প
৪ নভেম্বর ২০১৩দামাস্কাসে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ এক মাসেরও বেশি জেলে রাখা হয় আনোয়ারকে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সে জানায়, ‘‘আমাকে আটক করা হয়৷ এরপর নিয়মিত নির্যাতনও করা হতো৷''
বহু দেশেই মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ
২০১১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি আনোয়ার ও তার বাবাকে জার্মানি থেকে বহিষ্কার করে সিরিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ যদিও বিদেশ দপ্তর সিরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি সমস্যাজনক বলে কয়েক বছর ধরেই জানিয়ে আসছে৷ ২০০৯ সালেই জানা যায় যে, সিরিয়ায় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া বেশ কয়েকজনকে সাথে সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
প্রতিবছর বেশ কয়েক হাজার মানুষকে জার্মানি থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে এখন পর্যন্ত ৬৬৩২ জনকে জার্মানি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে৷
মানবাধিকার সংগঠন ‘প্রোআসু্ল'-এর ব্যার্নড মেসোভিচ জানান, বহিষ্কারের বেশিরভাগ ঘটনাই তেমন সাড়া না জাগালেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে৷ এর কারণ ভারপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ এক একটি দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে খবর রাখেন না৷ তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ঐসব দেশের পরিস্থিতি সঠিকভাবে খতিয়ে দেখা হয়৷ অভিবাসী ও শরণার্থী বিষয়ক ফেডারেল দপ্তরের বিশ্লেষণ ও বিদেশ দপ্তরের রিপোর্টের মাধ্যমে এসব খবর পাওয়া যায়৷''
বহিষ্কৃতদের ভাগ্য নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না
কিন্তু ব্যার্নড মেসোভিচ সমালোচনা করে বলেন, বহিষ্কৃত মানুষদের ভাগ্যে কী ঘটলো, তা নিয়ে আর মাথা ঘামানো হয় না৷ আইডিয়াটা এইরকম: ‘‘আমরা একটি দেশের নাগরিকদের তাদের স্বদেশেই ফেরত পাঠিয়ে দেই৷ তারপর সেই দেশেরই তাদের দেখাশোনা করার কথা৷''
অতীতে দেখা গেছে বহিষ্কার করার পর খুব কম ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে৷ এর উত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়৷ এর কোনো প্রয়োজন নেই৷ কেননা, স্বদেশে অত্যাচার ও অমানবিক আচরণের কোনো ভয় না থাকলেই কেবল বহিষ্কার করা হয়৷ জার্মান আইন অনুযায়ী কাউকে এমন কোনো দেশে পাঠানো হবে না, যেখানে মৃত্যু ও নির্যাতনের আশঙ্কা রয়েছে৷ এই আইনের আওতায় ২০১২ সালে ৮৩৭৬ জনের বহিষ্কার নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে রয়েছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে আসা মানুষরা৷
বহিষ্কারের শিকার রোমা জনগোষ্ঠীও
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বিশেষ করে সার্বিয়া, ম্যাসেডোনিয়া ও কসোভো থেকে আসা লোকজনকে বহিষ্কার করা হচ্ছে৷ এদের মধ্যে অধিকাংশই রোমা জনগোষ্ঠীর মানুষ৷ স্বদেশে তাদের আবস্থা খুবই সঙ্গিন৷ বলেন নর্থরাইনওয়েস্টফালিয়ার শরণার্থী পরিষদের মারিয়া হ্যুগেল৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ৷ তাদের দুর্দশার ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করা হয় না৷ অথচ সেখানে প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে৷''
ইউরোপীয় নীতিমালা অনুযায়ী, জার্মানিতে আসা শরণার্থীদের অনেকের ব্যাপারে জার্মানিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত যে দেশটিতে তারা প্রথম পা রাখেন সে দেশে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ তাই কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সেসব দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শরণার্থীদের৷ ২০১২ সালে ৩,০৩৭ জনকে জার্মানি থেকে ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিকে নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হয়৷ কিন্তু গ্রিসকে এখন নিরাপদ বা স্থিতিশীল দেশ বলা যায় না৷ জার্মান কর্তৃপক্ষ শরণার্থীদের গ্রিসে পাঠানো আপাতত বন্ধ রেখেছে৷ বেশ কিছু কোর্ট ইটালি ও হাঙ্গেরিতে বহিষ্কার করা নিষিদ্ধ করেছে৷
জার্মানি থেকে সিরিয়ায় বহিষ্কার করাও এখন স্থগিত করা হয়েছে৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রলায়ের তথ্য অনুযায়ী, বহিষ্কার করে সিরিয়ায় পাঠানোর ঘটনা সর্বশেষ ২০১১ সালে ঘটেছে৷ তার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে আনোয়ার ও তার বাবাকে সিরিয়ায় পাঠানো হয়৷ ইতোমধ্যে অবশ্য তুরস্ক ও বুলগেরিয়া হয়ে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে দু'জন আবার জার্মানিতে ফিরে এসেছে৷ অবশেষে জার্মানিতে শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে তারা৷