জার্মানিতে ইলেক্ট্রিক সাইকেল চলছে
৪ অক্টোবর ২০১৩সাইকেল চালানোর লেন, এমনকি ফুটপাথেও স্ক্রুজার চালানো যেতে পারে, তবে গাড়ি চলার রাস্তায় নয়৷ স্ক্রুজারের আবিষ্কারক হলেন এক জার্মান বিজনেস কনসালট্যান্ট, ৫০-বছর-বয়সি ইয়েন্স টিমে৷ কি করে তিনি এই অদ্ভুত যানটি আবিষ্কার করলেন, সে কাহিনি শোনালেন টিমে:
‘‘পরিস্থিতি এই দাঁড়িয়েছিল যে, আমার হাঁটতে ভালো লাগত না৷ শহরের মধ্যে স্বল্প দূরত্বের জন্য গাড়ি চালাতে ভালো লাগত না৷ সাইকেল আমার পছন্দ নয়৷ কাজেই রাস্তায় এমনিতে যা দেখা যায়, তার থেকে আলাদা, নতুন একটা কিছুর দরকার ছিল৷''
চেখে দেখা
ইয়েন্স টিমে ড্রেসডেনের পথেই পথচারীদের দিয়ে তাঁর স্ক্রুজার পরীক্ষা করিয়েছেন৷ ডিজাইনটা তাঁরই৷ পরে একদল ইঞ্জিনিয়ার প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি সামলেছেন৷ স্ক্রুজার তৈরিতে পাক্কা দু'বছর সময় লেগেছে৷
স্ক্রুজার চালানো যায় দাঁড়িয়ে কিংবা বসে৷ যারা চালিয়ে দেখেছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া মন্দ নয়৷ কেউ বলেন, ‘‘চালাতে দারুণ, স্কেটবোর্ডের মতোই মজা, কিন্তু স্পিড অনেক বেশি৷'' কেউ বা বলেন, ‘‘থ্রিলিং! সাইকেলের থেকে আলাদা৷ আমি তো ভাবছিলাম, এবার দোকানের কাচে গিয়ে ধাক্কা খাব!'' আবার কেউ বলেন, ‘‘তবে ফিট থাকার জন্যে খুব ভালো নয়!''
ইলেকট্রিক সাইকেলের মতোই স্ক্রুজারের ইঞ্জিনটিও পাল্স ড্রাইভ৷ মোটর নিজের থেকেই বুঝতে পারে, চালক পা দিয়ে কতো জোরে মাটিতে ধাক্কা দিচ্ছে৷ মোটর সেই শক্তিটাকেই বহুগুণ করে৷
স্ক্রুজারের সব ক'টি অংশ জার্মানিতে তৈরি – শুধু নামটাই ইংরিজি৷ নামের ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে টিমে জানালেন: ‘‘বহু ভেবেছি, শব্দ নিয়ে খেলেছি৷ শেষমেষ সব মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে স্ক্রুজার: স্কুটার আর ক্রুইজ-এর সমষ্টি৷''
‘ইলেক্ট্রোমোবিলিটি'
কয়েক বছর যাবৎ নানা ধরনের ইলেকট্রিক সাইকেল বাজারে আসছে এবং ক্রমেই আরো বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে৷ জার্মানিতে আজ প্রায় ১৩ লাখ ইলেকট্রিক সাইকেল চলছে৷ বার্লিনের ইলেক্ট্রোমোবিলিটি এজেন্সির টোমাস মাইসনার মনে করেন, বছর বিশেকের মধ্যে সব সাইকেলের অন্তত অর্ধেকের সহকারী ইলেকট্রিক মোটর থাকবে:
‘‘বৈদ্যুতিক সচলতার নিত্য নতুন ধারণা, নতুন আইডিয়া৷ ইলেকট্রিক যানের নানা সুবিধা: শহরের যানজটের মধ্যে সহজে পথ করে নেওয়া – অথচ কোনোরকম ধোঁয়া না ছেড়ে চলা৷ শব্দও কম৷ শহরবাসীদের পক্ষে সেটাও একটা বড় বিবেচনা৷ এছাড়া ইলেকট্রিক যানগুলি নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে চালানো যায়৷ কাজেই এ ভাবে জলবায়ু সুরক্ষার প্রতিও অবদান রাখা সম্ভব৷''
তবে ইলেকট্রিক যানগুলির দাম কম বললে ভুল করা হবে৷ একটি স্ক্রুজারের দাম প্রায় চার হাজার ইউরো৷ একটা সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ির দাম যে দেশে দু'হাজার, তার তুলনায় দামটা কিছু বেশি বৈকি৷ তবুও রোজগেরে শহরবাসীরা তাঁর স্ক্রুজার কিনবে বলে ইয়েন্স টিমে-র আশা৷ এমন সব মানুষ, যাদের প্রত্যেক দিন অনেক ছোট ছোট দূরত্ব পার করতে হয়, কিন্তু যারা বাস-ট্রাম-ট্যাক্সিতে সন্তুষ্ট নন৷ টিমে বলেন:
‘‘ইলেক্ট্রোমোবিলিটি এবং আর্বান মোবিলিটি – শহরের মধ্যে চলাফেরা – উভয় ক্ষেত্রেই আমরা সবেমাত্র সূচনায়৷ এ সব জিনিস বিপুলভাবে বাড়বে৷ যানচলাচল বাড়বে; লোকজন বিকল্প খুঁজবে এবং পাবে৷ আমার স্বপ্ন হল: আমি বুয়েনস আইরেস-এ বসে আছি – হঠাৎ দেখব একটি স্ক্রুজার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে৷ তাতেই আমার আনন্দ৷''
২০১৪ সালের মে মাস থেকে স্ক্রুজার কিনতে পাওয়া যাবে৷ সারা বিশ্ব থেকে ইতিমধ্যেই ৬০টি অর্ডার এসেছে৷