জার্মানিতে উগ্র দক্ষিণপন্থী এনপিডি দলকে ঘিরে বিতর্ক
১৫ এপ্রিল ২০০৯জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ ‘বুন্ডেসটাগ’এ সংসদীয় দলের মর্যাদা পেতে গেলে যে কোনো রাজনৈতিক দলকে ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোট পেতে হয়৷ জার্মানির রাজনীতির মূল স্রোতে যেসব দল সক্রিয় রয়েছে, তারাই সাধারণত সেই শর্ত পূরণ করতে পারে৷ জার্মানিতে ইতিহাসে উগ্র দক্ষিণ বা উগ্র বামপন্থী দলগুলির পক্ষে সেই সীমা অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন৷ বর্তমানে উগ্র দক্ষিণপন্থী দলগুলির কার্যকলাপ একাধিক কারণে আবার সংবাদের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে৷
এনপিডিকে নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা
জার্মানির উগ্র দক্ষিণপন্থী দলগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ন্যাশানাল ডেমক্র্যাটিক পার্টি বা এনপিডি৷ সম্প্রতি ঐ দলের সংগঠন চরম আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে৷ সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে চরম অন্তর্কলহ৷ এনপিডি-র মত দলকে রাজনৈতিক মূল স্রোত থেকে দূরে রাখতে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলি নানারকম পন্থা অবলম্বন করে এসেছে৷ সামাজিক গণতন্ত্রী ও সবুজ দলের জোট সরকার সরাসরি ঐ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা আদালতে ব্যর্থ হয়েছিল প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ঐ দলের উপর নজরদারি চালাতে গিয়ে যে সব নিজস্ব এজেন্টদের দলের সদস্য হিসেবে পাঠিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তাঁদের কয়েকজন দলের শীর্ষ স্তরে উঠে এসেছিলেন৷ ফলে পরোক্ষভাবে দলের হাঁড়ির খবর গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠানোর বদলে গোয়েন্দারাই দলের কর্মকাণ্ডের উপর সক্রিয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিলেন৷ এমন এক অবস্থায় দলের সঠিক চরিত্র অস্পষ্ট হয়ে ওঠায় আদালত সরকারের ঐ আবেদন নাকচ করে দেয়৷ এই ব্যর্থতার ফলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিল গেয়ারহার্ড শ্র্যোডারের সরকার৷
তৎকালীন সরকারের ব্যর্থতার ফলে এনপিডি দল অস্তিত্বের সঙ্কট থেকে বেঁচে যায়৷ ঐ দলকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা আদৌ নতুন করে চালানো উচিত কি না – সেবিষয়ে বিতর্ক এখনো চলছে৷ একদল মনে করে, ঐ দলকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব হলেও দলের সদস্যরা ঠিকই তাদের কাজ চালিয়ে যাবে৷ তাই রাজনৈতিক স্তরেই তাদের মোকাবিলা করা উচিত৷ অন্যদল মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলি চালানোর জন্য জার্মানিতে রাষ্ট্র যে অর্থ ব্যয় করে, করদাতাদের সেই অর্থে এমন উগ্রপন্থী রাজনৈতিক দল চলতে দেওয়া উচিত নয়৷ তাই আবার ঐ দলকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা উচিত৷
দলের বর্তমান সঙ্কট
এনপিডি কিন্তু বহাল তবিয়েতে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল৷ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থের যোগানও চালু ছিল৷ বর্তমানে সেই নিশ্চয়তা আচমকা হুমকির মুখে পড়েছে৷ ঐ দলকে এখন উল্টে প্রায় ২০ লক্ষ ইউরো সরকারী কোষাগারে ফেরত দিতে হবে, কারণ তাদের অডিট রিপোর্টে মারাত্মক অনিয়ম ধরা পড়েছে৷
এর পরেও এনপিডির শক্তিকে খাটো করে দেখতে প্রস্তুত নয় জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা৷ তাই ঐ দলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম জারি রাখতে হবে বলে তারা মনে করছে৷ তাছাড়া গোয়েন্দারা দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রচেষ্টারও বিরুদ্ধে, কারণ সেক্ষেত্রে দলের আদর্শে বিশ্বস্ত সদস্যরা গোপনে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তখন তাদের উপর নজর রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে৷ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এমন নিষিদ্ধ ও গোপন সংগঠন সম্পর্কে আগ্রহও বেড়ে যেতে পারে৷
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের দুই রাজ্য – স্যাক্সনি ও মেকলেনবুর্গ ফোরপমার্ন রাজ্যের বিধানসভায় এনপিডি দলের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন৷ এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে পৌর স্তরেও তাদের প্রায় ২০০ আসন রয়েছে৷ এই দলের ছত্রছায়ায় নব্য নাৎসি ও অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীর অংশবিশেষ বেশ সক্রিয়৷