কর ফাঁকি
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা তাঁরই বেশি হবে, যাঁর প্রদেয় করের পরিমাণ বেশি৷ কাজেই সুইজারল্যান্ডের গোপন অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার প্রবণতা যে সব জার্মানদের থাকে, তাঁরা মোটামুটি সফল, কৃতী ও ওপরমহলের মানুষ৷ যেমন ধরা যাক বায়ার্ন মিউনিখ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস, যাঁর নামে কর ফাঁকি দেওয়ার মামলা চলছে৷
বিদেশে টাকা পাচার করে স্বদেশে কর ফাঁকি দেওয়াটা নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু কম্পিউটারের যুগে ব্যাংকের খাতা-পত্র যখন গোপন সিডি হয়ে কর বিভাগের হাতে এসে পড়ে, তখন কর ফাঁকি দেনেওয়ালারাও আর ঠিক ততটা ‘নিরাপদ' বোধ করেন না৷ ওদিকে স্বদেশের সরকারও তাঁদের এই ভীতির সুযোগ নিয়ে কর আদায়ের একটা নতুন পন্থা চালু করে বসে আছে: কর ফাঁকি দেনেওয়ালারা যদি একটা নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজেরাই সেকথা কর বিভাগকে জানান ও ফাঁকি দেওয়া কর পরিশোধ করেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না৷
বায়ার্ন প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস ঠিক সেই শর্তটির উপর নির্ভর করতে গিয়েই ফেঁসেছেন৷ ওদিকে জার্মানিতে নারীমুক্তি ও নারী প্রগতির ক্ষেত্রে পথিকৃৎ, মহিলাদের ‘এমা' পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আলিসে শোয়ার্ৎসার বস্তুত কোনো শর্তেই ফাঁসেননি: তাঁর নিজস্ব বিবৃতি অনুযায়ী তিনি সেই আশির দশক থেকে সুইজারল্যান্ডে বেশ কিছু টাকা – ২০ লাখ ইউরো পরিমাণ – রেখে আসছেন, এবং ২০১৩ সালে স্বপ্রণোদিতভাবে কর বিভাগকে সে খবর দিয়ে দু'লাখ ইউরো পরিমাণ বকেয়া করও শোধ করে দিয়েছেন৷
মুশকিল এই, এবার ‘ডের স্পিগেল' পত্রিকা সে খবর জনসমক্ষে ফাঁস করেছে৷ এবং সরকারিভাবে শোয়ার্ৎসারের আর শাস্তি না হবার সম্ভাবনা থাকলেও, জার্মানিতে নারীবাদ ও নারী চেতনার প্রতীক ও প্রবক্তা আলিসে শোয়ার্ৎসারকে এখন নৈতিকভাবে শূলে চড়ানো হচ্ছে৷ তাঁর সমালোচকদের বক্তব্য: শোয়ার্ৎসার নিজে নৈতিকতার দোহাই দিয়ে বহু মানুষের ও প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেছেন; কাজেই তাঁর নিজের কর ফাঁকি দেওয়ার কাহিনির নৈতিক মাশুল তাঁকে দিতে হবে বৈকি৷
শোয়ার্ৎসার বলেছেন, আশির দশকেই তাঁর বিরুদ্ধে জার্মানিতে বিদ্বেষ ও বিমুখিতা এমন চরমে উঠেছিল যে, তিনি বাস উঠিয়ে বিদেশে যাবার কথা ভেবেছিলেন: সুইজারল্যান্ডে রাখা টাকাটাও ছিল সেই পরিকল্পনার অঙ্গ৷ শোয়ার্ৎসারের এক অন্তরঙ্গ বন্ধু কিন্তু বলেছেন, শোয়ার্ৎসার তখন ফ্রান্সে যাওয়ার কথাই ভাবছিলেন৷ দ্বিতীয়ত, শোয়ার্ৎসার যে মহিলাদের চিরন্তনী প্রতিরক্ষা কৌশল অনুযায়ী নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন, তা-তে তাঁর অনেক বিশিষ্ট মহিলা সুখি নন – যেমন সবুজ দলের নেত্রী কাট্রিন গ্যোরিং-একহার্ট৷
জার্মানিতে আর যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলেছে, সেটি হলো এই নিজের অপরাধ স্বীকার করে, বকেয়া অর্থ প্রদান করে উচিত দণ্ড থেকে মুক্তি পাবার প্রক্রিয়া – যা শুধু একমাত্র কর ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রেই চলে, অন্য কোনো দণ্ডনীয় অপরাধের ক্ষেত্রে নয়, যেমন মাদক সেবন কিংবা চৌর্যবৃত্তি৷ কাজেই অপরাধীর সঙ্গে এ ধরনের আপোশ – যেমন রাজসাক্ষীর সঙ্গে – আধুনিক জগতে আর চলে না, বলছেন অনেকে৷ অপরদিকে অন্যদের মত হলো, নিজের কর ফাঁকি স্বীকার করাটা থাকুক, কিন্তু সেই ফাঁকি দেওয়া করের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া দরকার – এই যেমন পঞ্চাশ হাজার ইউরো৷
সেক্ষেত্রেও আলিসে শোয়ার্ৎসার ছাড় পেতেন না, পার তো দূরের কথা ৷