জার্মানিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাঝেই করোনা সংকট
২৮ অক্টোবর ২০২১করোনা ভাইরাস যে মানুষের সুবিধা-অসুবিধার ধার ধারে না, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ যেমন জার্মানিতে সরকার বদলের সময়ে বেড়ে চলা সংক্রমণের হার বিদায়ী ও সম্ভাব্য সরকারের জন্য গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ জনসংখ্যার একটা বড় অংশ করোনা টিকা নেওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ ফলে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সংগঠন আরও কঠিন পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে৷ নতুন করে সংকট এড়াতে বিশেষজ্ঞরা আরও বেশি মানুষকে দ্রুত করোনা টিকার আওতায় আনার পক্ষে সওয়াল করছেন৷ শিশু চিকিৎসকরা দ্রুত ১২ বছরের কমবয়সি শিশুদের জন্য করোনা টিকার অনুমোদনের আশা করছেন৷ ইউরোপীয় ওষুধ সংস্থা ইএমএ বুধবারই জানিয়েছে, যে বড়দিনের আগেই পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশু-কিশোরদের জন্য সেই অনুমোদন চূড়ান্ত হয়ে যাবে৷
জার্মান হাসপাতাল সংগঠনের প্রধান গেরাল্ড গাস বলেন, বর্তমান প্রবণতা চালু থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রোগীদের সংখ্যা আবার তিন হাজার ছুঁতে পারে৷ বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৮০০ রোগী আইসিইউ ও চার হাজার ৩০০ মানুষ হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন৷ উল্লেখ্য, করোনা সংকটের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির সময়ে জার্মানিতে প্রায় পাঁচ হাজার ৭০০ মানুষ আইসিইউ-তে ভর্তি ছিলেন৷ এমন অবস্থায় ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মীদের উপর মারাত্মক চাপ দেখা যায়৷
জার্মানিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার মাঝে এমন সংকটের মুখে রাজনৈতিক নেতারাও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবার প্রয়োজনীয়তা টের পাচ্ছেন৷ বিদায়ী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান আগামী ২৫শে নভেম্বরের পর জাতীয় স্তরে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আর না বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছেন৷ কিন্তু রাজ্য সরকারগুলির আশঙ্কা, এমন আইনি রক্ষাকবচ ছাড়া প্রয়োজনে জরুরি পদক্ষেপ নেবার ক্ষেত্রে প্রশাসন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে৷ সেই পরিস্থিতি এড়াতে সম্ভাব্য জোট সরকারের তিন শরিক দল একযোগে এক সমাধানসূত্র পেশ করেছে৷ বুধবার এসপিডি, এফডিপি ও সবুজ দল জরুরি অবস্থান মেয়াদ না বাড়িয়ে বিকল্প আইনি কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে৷ এর আওতায় ২৫শে নভেম্বরের পর ২০২২ সালের ২০শে মার্চ পর্যন্ত জাতীয় স্তরে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিয়ম চালু রাখা হবে৷ নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই সংসদে সেই প্রস্তাব অনুমোদনের উদ্যোগ নিচ্ছে এই তিন দল৷ তবে রাজ্যগুলি সেই আইনি খসড়ার খুঁটিনাটি বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়৷
ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় জার্মানিতে করোনা টিকাপ্রাপ্ত মানুষের অনুপাত অপেক্ষাকৃত কম৷ ইটালি, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশের মতো সুযোগ সত্ত্বেও টিকা না নেওয়া মানুষের উপর চাপও তেমন নেই৷ অনেক আবেদন-নিবেদন, প্রচার অভিযান সত্ত্বেও এমন মানুষদের সহজে টিকা নিতে রাজি করানো যাচ্ছে না৷ বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য বুস্টার শটের ব্যবস্থা করতেও বিলম্ব ঘটছে৷ ফলে শীতের মাসগুলিতে করোনা সংকট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা অনেক কাল ধরে পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)