জার্মানিতে চরম দক্ষিণপন্থি দলের নির্বাচনি সাফল্য
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩এমন অঘটন যে ঘটবে, জার্মানিতে তা প্রত্যাশিত ছিল৷ চরম দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দল এএফডি একের পর এক জনমত সমীক্ষায় ভালো ফল করে চলেছে৷ জাতীয় স্তরে প্রায় ২২ শতাংশ সমর্থন পেয়ে তারা একমাত্র প্রধান বিরোধী দল সিডিইউ-র পেছনে রয়েছে৷ বিশেষ করে দেশের পূর্বে তাদের জনপ্রিয়তা প্রায় তুঙ্গে৷ ফলে নির্বাচনি সাফল্য যে শুধু সময়ের অপেক্ষা, তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ এবার সরাসরি ভোটে এই প্রথম কোনো বড় শহরের মেয়র নির্বাচিত হলেন সেই দলের পছন্দের প্রার্থী৷ স্যাক্সনি রাজ্যের পিরনা শহরে সেই সাফল্যের মুখ দেখলো এএফডি দল৷ এর আগে আগস্ট মাসে স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের ছোট এক শহরেও দলের প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ফেডারেল, রাজ্য বা পৌর স্তরে জোট সরকার গড়ার ক্ষেত্রে মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি এতকাল চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলকে এড়িয়ে আসছে৷ ফলে আসনের অংকের হিসেবে জোটসঙ্গী হিসেবে সেই দল একাধিক সরকারে জোটসঙ্গী হতে পারলেও ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে দলটিকে দূরে রাখা হয়েছে৷ পিরনা শহরে মেয়র নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে এএফডি সমর্থিত প্রার্থী টিম লখনারের জয় সেই প্রতিরোধ ভেঙে দেবে কিনা, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হচ্ছে৷
মাত্র দশ বছর বয়সি এএফডি দলের এই ধারাবাহিক উত্থান জার্মানি তথা ইউরোপে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে চলেছে৷ সমালোচকদের মতে, এই দল চরমপন্থি, গণতন্ত্র-বিরোধী ও বিদেশি-বিদ্বেষী৷ দলের বিভিন্ন নেতার মন্তব্যে এমন প্রবণতা বার বার স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷
জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার স্যাক্সনি রাজ্য শাখা সম্প্রতি এএফডি রাজ্য শাখাকে সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে চরম দক্ষিণপন্থি আন্দোলন হিসেবে বর্ণনা করেছে৷ পূবের একাধিক রাজ্যে এই দলের কার্যকলাপ বার বার সমালোচনার মুখে পড়ছে৷ গোটা দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে৷
আগামী বছর জার্মানির পূ্র্বে স্যাক্সনি, টুরিঙ্গিয়া ও ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ আপাতত জনমত সমীক্ষায় এএফডি দল পূবের রাজ্যগুলিতে প্রায় ৩০ শতাংশ সমর্থন পেয়ে বাকি সব দলের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে৷ ফলে নির্বাচনে সেই সাফল্য বজায় থাকলে রাজ্য সরকার গড়ার লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে যাবে চরম দক্ষিণপন্থি এই দল৷ বাকি দলগুলির পক্ষে সেই দলের সঙ্গে জোট না গড়ার প্রত্যয় আরো চাপের মুখে পড়তে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন৷ রোববার পিরনা শহরে জয়ের পর স্যাক্সনি রাজ্যের এএফডি নেতা ইয়োর্গ উরবান সেই সাফল্যকে আগামী বছরের নির্বাচনের ‘টেমপ্লেট' হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ তিনি আগামী সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ সমর্থনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন৷ আগামী বছর ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনেও সাফল্যের আশা করছে এএফডি দল৷
পিরনা শহরে এএফডি দলের সাফল্য বাকি রাজনৈতিক দলগুলির জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনছে৷ শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল সামলাতে সরকার হিমসিম খাওয়ায় সমাজের এক উল্লেখযোগ্য অংশের ক্ষোভ এই দলের উত্থানের অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে৷ এমনকি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রক্ষণশীল ইউনিয়ন শিবিরও তিন দলের জোট সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের তেমন ফায়দা তুলতে পারছে না৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)