চাকরির বাজার
১ সেপ্টেম্বর ২০১২জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার আগেই আউসবিল্ডুং বা কারিগরী প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা আছে৷ তাই প্রতি বছর বহু ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করে কারিগরী প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশ করে৷ তবে এই ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়৷ অভিবাসী পরিবার থেকে আসা স্কুল ছাত্রছাত্রীরা এই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কারিগরী প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার সুযোগ কম পায়৷ আবার কোথাও শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার আবেদন করলেও তাতে সাড়া মেলে কম৷
জার্মানিতে গত কয়েক বছরে স্কুল ত্যাগী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে এসেছে৷ আবার এই সঙ্গে অভিবাসী পরিবারের শিক্ষার্থীদের সমস্যাও বাড়ছে৷ এই দুই পক্ষের ছাত্রছাত্রীরাই যাতে কোথাও শিক্ষানবিশের কাজ পায় সেজন্য জার্মান সরকার নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার নাম ‘পেশাগত প্রশিক্ষণে সহযোগিতা'৷ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈষম্য দূর করা এবং শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করা৷
জার্মানির পেশাগত প্রশিক্ষণ বিষয়ক ইন্সটিটিউটের অধীনে এই প্রকল্পের কাজ চলছে৷ অন্তত ১৭ টি জায়গায় এই প্রকল্প কাজ করছে৷ এর প্রধান জাবিনে স্টাইনার্ট বলেন, ‘‘আমরা চাই এই ডুয়াল প্রশিক্ষণে আরও বেশি তরুণ-তরুণীকে সম্পৃক্ত করতে, কারণ এই খাতে একটি ফাঁক রয়ে গেছে৷ প্রচুর আবেদনকারী রয়েছে যারা সরাসরি কোন কোম্পানিতে আবেদন করে না৷ আবার অন্যদিকে অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা নতুন তরুণ শিক্ষানবিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে৷''
এই প্রকল্পের আওতায় একজন শিক্ষার্থীকে একটি সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করে দেয়া হয়৷ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শিক্ষানবিশদের কাছ থেকেও তারা জরুরি ধারণা লাভ করে৷ অভিবাসী পরিবারের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জার্মানির অনেক প্রতিষ্ঠানেরই অনীহা দেখা যায়৷ সেটি দূর করার চেষ্টা করা হয় এই প্রকল্পে, জানালেন জাবিনে স্টাইনার্ট৷ তার ভাষায়, ‘‘ আমরা চেষ্টা করি উভয় পক্ষকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে এবং তাদের একে অপরের ব্যাপারে যে বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে তা দূর করতে৷ যাতে তারা সেখানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পায় এবং পরে তারা সেখানে পুরোপুরি প্রশিক্ষণ নিতে পারে৷''
বর্তমানে ছোট ও মাঝারি মোট ১৫টি পেশার আগ্রহীদের নিয়ে জার্মান সরকারের পেশাগত প্রশিক্ষণে সহযোগিতা প্রকল্পটি চলছে৷ অংশগ্রহণকারীদের বয়স ১৭ থেকে ২৫৷ বেশিরভাগই এক কিংবা দুই বছর আগে স্কুল পাশ করেছে৷ তাদের একজন ১৮ বছর বয়সী বশির৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে আসার পর শুরু থেকেই একজনকে কতগুলো বিষয় শিখতে হয়, গণিত, জার্মান, ইংরেজি৷ এগুলো স্কুলেও শেখানো হয়৷ এগুলো আবার নতুন করে শিখতে আমার ভালোই লাগছে৷ কারণ দুই বছর আগে তো স্কুল ছেড়েছি৷''
আরব পরিবারের মেয়ে ফেহদাও এই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন৷ গত বছর স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পাশ করেছেন৷ তবে কোথাও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে উঠতে পারেন নি৷ তিনি বলেন, ‘‘গত বছর থেকেই চেষ্টা করছি নার্সের একটি প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য৷ প্রায় সব জায়গাতেই আবেদন করেছিলাম৷ সত্যি বলতে কি আমার মনে হয়েছিলো, যে আমার রেজাল্ট ভালো তাই হয়তো সুযোগ পাবো৷''
জার্মানির চাকরির বাজারে যে বৈষম্য রয়েছে সেটি নতুন প্রকল্প কতটুকু দূর করতে পারে সেটিই এখন দেখার বিষয়৷
প্রতিবেদন: জাবিনে রিপপ্যারগার/আরআই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন