জার্মানিতে ‘জিহাদি পর্যটক’
৭ জুলাই ২০১৪‘‘পরকালই সত্যিকারের ইমানদারদের জন্য প্রকৃত বাসস্থান''
ফিলিপ বি, ফেসবুকে এইভাবেই তাঁর মনের কথা লিখেছেন৷ কালাশনিকোভ রাইফেলের বেশ কিছু ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে তাঁর সাইটে৷ নিজেকে ‘আল্লাহর দাস' উল্লেখ করেছেন তিনি৷
আগে পিৎসা সরবরাহ করতেন ফিলিপ৷ জার্মানির ডিনসলাকেন থেকে সিরিয়ার জিহাদে যোগ দেওয়ার পর নিজেকে এখন আবু ওসামা নামে পরিচয় দেন তিনি৷ জার্মান পাসপোর্টধারী একজন জিহাদি৷ ‘‘বিদেশি বংশোদ্ভূতদের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের নাগরিকত্ব আবার বাতিল করা যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত৷'' বলেন খ্রিষ্টীয় গণতান্ত্রিক দল সিডিইউ-এর উপপ্রধান টোমাস স্ট্রোবল৷
বর্তমান আইনে সম্ভব নয়
অন্যদিকে ‘‘কট্টর জিহাদিদের নাগরিকত্ব বাতিল করা বর্তমান আইন অনুযায়ী সম্ভব নয়৷'' বলেন ক্রিমিনাল আইন বিশেষজ্ঞ কাট্রিন গিয়ারহাকে৷
হেসেন রাজ্যের আইন মন্ত্রী সিডিইউ-এর এফা ক্যুনে-হ্যোরমানের মতে, ‘‘আমরা তরুণদের সশস্ত্র সংগ্রামে যোগ দিতে যেতে দিতে পারি না৷''
আইন বিশেষজ্ঞ গিয়ারহাকে বলেন, জার্মানিকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে, জিহাদিদের ব্যাপারে আইনত কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়৷ বাস্তব ঘটনা হলো, ফিলিপ ও বার্লিনের ব়্যাপার ‘ডেসো ডগ'-এর মতো ইসলামিস্টরা কোনো বাধা ছাড়াই কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকছেন, জিহাদে যোগ দিচ্ছেন৷ ইন্টারনেটে তাঁদের পথ অনুসরণ করার জন্য জার্মান ভাষায় মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছেন৷
নজরদারিতে জিহাদি পর্যটকরা
ধারণা করা হয়, বর্তমানে সিরিয়ায় ৩২০ জনের মতো জার্মান জিহাদি যুদ্ধ করছেন৷ তাঁরা ফিরে এসে সহিংসতায় প্রস্তুত ৪৩,০০০ ইসলামিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন৷ মনে করে সংবিধান সুরক্ষা দপ্তর৷
এখন পর্যন্ত বড় রকমের কোনো সন্ত্রাসী হামলা জার্মানিতে হয়নি৷ কিন্তু জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দে মেজিয়ের‘মারাত্মক বিপদের সম্ভাবনা' দেখছেন৷ ব্রাসেলস-এ ইহুদি মিউজিয়ামে হামলা সম্ভাবনাকে আরো কাছে এনে দিয়েছে৷ হামলাকারী ফরাসি পাসপোর্টধারী সিরিয়া-যুদ্ধ ফেরত এক ব্যক্তি৷ ফিলিপ বি-এর মতো জিহাদ পর্যটকরা স্বদেশ জার্মানিতেও এই ধরনের হামলা চালাতে পারেন বলে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে সাধারণের মনে৷
সবুজ দলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র ইরেনে মিহালিক বলেন, ‘‘ক্রিমিনাল আইনই এক্ষেত্রে যথেষ্ট৷ সন্ত্রাসের ঝুঁকি মোকাবেলা এবং এ ব্যাপারে তদন্তের জন্য আমাদের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে সচেষ্ট হতে হবে৷ আইনকে সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে হবে৷''
সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করার জন্য একটি আইন রয়েছে, যা ‘সন্ত্রাস দমন আইন' বলে পরিচিত৷ জিহাদ ফেরত কট্টরপন্থিদের বিশেষ নজরদারিতে রাখার কথা বলা হয়েছে এই আইনে৷
তবে ২০০৯ থেকে চালু এই আইনটির ৮৯-এ ধারা নিয়ে সমালোচনাও শোনা যায়৷ আইন বিশেষজ্ঞ কাট্রিন গিয়ারহাকে বলেন, এতে অপরাধ ঘটানোর প্রস্তুতিপর্বেই কাউকে আইনভঙ্গকারী হিসাবে বিবেচনা করা হয়৷ কিন্তু অপরাধ আইনে প্রতিরোধের স্থান নেই৷ কেউ কোনো অপরাধকর্ম করলেই কেবল অপরাধী বলে গণ্য হবে৷
বিশেষজ্ঞরা একমত নন
কিন্তু এখানে প্রশ্ন জাগে, তাহলে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের আত্মঘাতী হামলাকারীদের হাত থেকে কীভাবে রক্ষা করবে? এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা একমত নন৷ কাট্রিন গিয়ারহাকে মনে করেন, অপরাধ আইনের বাইরে নতুন ধরনের প্রতিরোধ আইনের প্রবর্তন করা উচিত৷ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, কেউ সিরিয়া থেকে ফিরে এলে কিংবা জিহাদের ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেই আইন আনুযায়ী তাকে সন্দেহ করা যায় না৷
গিয়ারহাকের প্রস্তাব: একটি প্রতিরোধ-নীতিমালার প্রবর্তন৷ যা পর্যায়ক্রমে চলতে পারে৷ প্রথমে সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে হবে৷ যেমন কোনো ব্যক্তি যদি ঘৃণা বা হিংসাত্মক বাণী প্রচারণাকারীর সংস্পর্শে থাকে৷ হামলা-পরিকল্পনার স্পষ্ট আভাস পাওয়া গেলে পরবর্তী ধাপে তার গতিবিধি সীমিত করা যেতে পারে৷ সাময়িকভাবে আটকও করা যেতে পারে৷ তবে দশ বছর নয় দুই এক বছরের জন্য৷
রাষ্ট্র নিরুপায়
আসল কথা হলো রাষ্ট্র এক্ষেত্রে নিরুপায়৷ ‘‘কেউ যদি গৃহযুদ্ধে অংশ নিতে চায়, তাকে তো নিষেধ করা যায় না৷'' তবে হিংসাত্মক কার্যকলাপের ইঙ্গিত পাওয়া গেলে, তা নজরে রাখা যায় এবং প্রচলিত আইনের আওতায় পদক্ষেপও নেওয়া যায়৷