1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে তৈরি হচ্ছে পাউরুটির বিয়ার

৯ জুন ২০২৩

আজকের যুগে প্রায় সব ক্ষেত্রেই টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া চালু করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ এবার জার্মানিতে বাসি পাউরুটি দিয়ে বিয়ার ব্রিউয়িং সেই প্রবণতার অংশ হয়ে উঠছে৷ স্বাদে কিন্তু কোনো আপোশ করা হচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/4SMXX
বাসি রুটি দিয়ে তৈরি বিয়ার৷
বাসি রুটি দিয়ে তৈরি বিয়ার৷ছবি: DW

বিয়ার বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তেজকগুলির মধ্যে পড়ে৷ সোনালী এই পানীয় তৈরি করতে উপাদান হিসেবে মল্ট, হপস, পানি এবং ইস্ট লাগে৷ কিন্তু সেই প্রক্রিয়াকে আরও সৃজনশীল করে তুলতে কিছু মানুষ ‘ব্রেড বিয়ার' তৈরি করছেন৷

বাসি রুটি দিয়ে বিয়ার? সেটা কি আদৌ সম্ভব? বার্লিনের এক বিয়ার প্রস্তুতকারক সেই প্রক্রিয়া জানেন৷ মিশায়েল লেম্বকে এমন বেকিং পণ্য দিয়ে অ্যালকোহল-মুক্ত বিয়ার তৈরি করেন, যা সাধারণত ফেলে দেওয়া হতো৷ এমন ভাবনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘খাবারের অপচয় ও টেকসই প্রক্রিয়া আজ বিশাল চর্চার বিষয় হয়ে ওঠায় আমাদের মাথায় ব্রেড বিয়ারের আইডিয়া এসেছিল৷ বিশেষ করে বিশাল পরিমাণে পাউরুটি তৈরি করা হয়, যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ শেষ পর্যন্ত শুকরের খোরাক হিসেবে অথবা বায়ো গ্যাস প্লান্টে কাজে লাগাতে হয়৷ সেটা সত্যি দুঃখের বিষয়৷ সে কারণে আমরা এই বিয়ারের উপাদান হিসেবে পাউরুটিও ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম৷ এভাবে বিষয়টির প্রতিও মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছিলাম৷''

অপচয় রোধে বাসি পাউরুটি দিয়ে বিয়ার তৈরি

যে সব ব্রিউয়ারি পাউরুটি দিয়ে বিয়ার উৎপাদন করে, তারা আসলে যতটা সম্ভব সম্পদ পুনর্ব্যবহার করতে এবং বর্জ্য এড়াতে চায়৷ প্রায় ২৭,০০০ বোতল ব্রেড বিয়ার তৈরি করতে প্রায় ৭৫ কিলোগ্রাম বাসি পাউরুটির প্রয়োজন হয়৷ বার্লিনের মাস্টার বেকার টেও ক্যোস্টার নিখুঁতভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা করলেও কিছু অবশিষ্ট থেকেই যায়৷ তবে সব ধরনের রুটি বিয়ার তৈরির জন্য উপযুক্ত নয়৷ মাস্টার বেকার হিসেবে টেও ক্যোস্টার বলেন, ‘‘সেই পাউরুটি এমন হতে হবে, যার মধ্যে শস্য ছাড়া অন্য কোনো উপাদান থাকবে না৷ অর্থাৎ কিশমিশ, বাদাম, তেলের বীজ থাকলে চলবে না৷ কারণ গাঁজন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটবে এবং এমন সুস্বাদু বিয়ার তৈরি হবে না৷''

পাউরুটি দিয়ে পানীয় তৈরি মোটেই নতুন কোনো আবিষ্কার নয়৷ কয়েক'শো বছর ধরে সেই ধারা চলছে৷ যেমন মিশরের ‘বোজা' বা মধ্যযুগে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের ‘কোয়াস'৷ বিগত কয়েক বছরে ব্রেড বিয়ারের পুনর্জন্ম ঘটেছে৷ ফলে মিশায়েল লেম্বকের মতো ক্রাফট বিয়ার ব্রিউমাস্টারের মাথায় নতুন আইডিয়া আসছে৷ তিনি প্রথমে বাসি পাউরুটির ছোট ছোট টুকরো করছেন এবং ব্রিউয়িং প্রক্রিয়ার শুরুতেই সেই মণ্ড যোগ করছেন৷ জটিল প্রক্রিয়ার ধাপগুলি বর্ণনা করে মিশায়েল বলেন, ‘‘এই ম্যাশ টুনে আমরা পানি ও মল্ট গ্রিস্ট মেশাই৷ এনজাইম সক্রিয় করে তোলা হয়, যা তারপর মাড় থেকে শর্করা তৈরি করে৷ সেই প্রক্রিয়ার জন্য প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে৷ এই বিয়ারের বিশেষত্ব হলো এই যে, আমরা মণ্ডের মধ্যে পাঁচ শতাংশ পাউরুটি দেই৷ তারপর আমরা সেই মণ্ড পাম্প করে লটার টানে ঢুকিয়ে দেই৷ এখানে কঠিন ও তরল আলাদা করা হয়৷ সেই তরলই তথাকথিত ‘বিয়ার ওয়ার্ট', যা আমরা পরে ফোটাই৷''

তারপর শুধু ইস্ট যোগ করা হয়৷ ইস্ট সাধারণত শর্করাকে অ্যালকোহলে রূপান্তরিত করে৷ তবে ব্রেড বিয়ারের ক্ষেত্রে সেটা করা হয় না৷ মিশায়েল লেম্বকে বলেন, ‘‘এই অ্যালকোহল-মুক্ত ব্রেড বিয়ারের জন্য আমরা বিশেষ ধরনের ইস্ট ব্যবহার করি, যা শুধু চিনি গাঁজন করতে পারে৷ উদ্বৃত্ত চিনি বিয়ারেই থেকে যায়৷ ফলে বেশি অ্যালকোহল সৃষ্টি হয় না৷''

জার্মানিতে কোনো পানীয়র মধ্যে অ্যালকোহলের মাত্রা শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত থাকলে সেটিকে অ্যালকোহল-ফ্রি হিসেবে গণ্য করা হয়৷ ব্রিউয়িং প্রক্রিয়ার পর বিয়ার শুধু বোতলে ভরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়৷ সেই ব্রেড বিয়ারের স্বাদ গ্রাহকদের ভালোই লাগে৷

বর্জ্য এড়ানো ও কাচামাল সাশ্রয়ই হলো মূলমন্ত্র৷ ব্রেড বিয়ার দেখিয়ে দিচ্ছে, যে স্বাদের ক্ষেত্রে কোনো আপোশ না করেও বিয়ার ব্রিউয়িং প্রক্রিয়াও টেকসইভাবে সাজানো সম্ভব৷

ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি