জার্মানিতে তৈরি হাইড্রোজেন-চালিত ট্রেনের বিপুল সম্ভাবনা
১৫ নভেম্বর ২০২২জার্মানির উত্তরের ছোট শহর ব্রেমারফ্যোর্ডের স্টেশনে লোকাল ট্রেন প্রবেশ করছে৷ যে সে ট্রেন নয়, হাইড্রোজেনের শক্তিকাজে লাগিয়ে সেটির ইঞ্জিন চলে৷ ছাদের উপর ফুয়েল সেল থেকে শক্তি চাকার মধ্যে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনে চলে যায়৷ ডিজেল লোকোমোটিভের বিকল্প হিসেবে চালু করা পরিবেশবান্ধব এই ট্রেনের সব যাত্রী অবশ্য কোনো পার্থক্য টের পান না৷
তবে সমস্যা হলো, সেই হাইড্রোজেন কাছের এক রাসায়নিক কারখানা থেকে আসছে এবং জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি কাজে লাগিয়ে সেটি উৎপাদন করা হয়েছে৷ অর্থাৎ সেই হাইড্রোজেন মোটেই সিওটু-নিউট্রাল নয়৷ কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে নাকি এমনটা হবে না৷ প্রকল্পের প্রধান আলেক্সান্ডার স্যোর্নার সে বিষয়ে বলেন, ‘‘সেই লক্ষ্যে আমরা বর্তমানে ব্রেমারফ্যোর্ডের এক পেট্রোল পাম্পে এক ইলেকট্রোলিসিস প্লান্ট বসানোর পরিকল্পনা করছি৷ বায়ু অথবা সৌরশক্তি দিয়ে সেটি চালানো হবে৷ এভাবে আমরা স্থানীয় পর্যায়েই গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে পারবো৷ তখন গোটা যানটি নির্গমন ছাড়াই চলতে পারবে৷''
ফ্রান্সের আল্সটোম কোম্পানির ইঞ্জিনিয়াররা জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের কারখানায় ট্রেনটি তৈরি করেছেন৷ এমন হাইড্রোজেন-চালিত ট্রেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফসল৷ কামরাগুলি পোল্যান্ড থেকে এসেছে৷ ফুয়েল সেল ক্যানাডায় তৈরি হয়েছে৷ এটই বিশ্বের প্রথম কারখানায় তৈরি হাইড্রোজেন ট্রেন৷ আল্সটোম কোম্পানির আন্দ্রেয়াস ফ্রিক্সেন বলেন, ‘‘ইউরোপ অবশ্যই এ ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা নিচ্ছে, কারণ এখানে প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি অগ্রসর হয়েছে এবং সেরা পরিবেশ রয়েছে৷ তবে আমরা গোটা বিশ্বে চাহিদার আশা করছি৷''
আল্সটোমের প্রতিযোগী হিসেবে সিমেন্স কোম্পানি জার্মান রেল কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ‘মিরেও প্লাস এইচ' নামের মডেল তৈরি করেছে৷ তবে আপাতত সেই ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রা চলছে৷
দুই বছর পর সিমেন্স কোম্পানির তৈরি লোকাল ট্রেন ট্র্যাকে নামার কথা৷ প্রকাশ্যে সেই ট্রেনের প্রথম যাত্রা বেশ সফল হয়েছিল৷ কিন্তু জার্মান রেলের ডিজেলমুক্ত হতে আরও অনেক সময় লাগবে৷ জার্মান রেল কোম্পানির কর্মকর্তা রিশার্ড লুৎস বলেন, ‘‘রেলের প্রায় ৩,০০০ ডিজেল ইঞ্জিনের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম ঘোষণা করেছি৷ জলবায়ুর স্বার্থে আমরা কমপক্ষে ২০৪০ সালের মধ্যে বাতিল করতে চাই৷ সে সময়ের মধ্যেই জার্মান রেল কোম্পানি পুরোপুরি ক্লাইমেট নিউট্রাল হতে চায়৷''
হাইড্রোজেন ট্রেন পুরোপুরি ডিজেল ইঞ্জিনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে কিনা, তা যথেষ্ট পরিমাণ সস্তার ও পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদনের উপর নির্ভর করছে৷
আপাতত হাইড্রোজেন ট্রেনকে বাস্তব পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হবে৷
কার্ল হারেনব্রক/এসবি