আইটিবি মেলা
৯ মার্চ ২০১২জার্মানরা ফুটবলে একাধিকবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে৷ কিন্তু একটি হিসেবে তারা প্রায় প্রতিবছরই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাকে৷ সেটি হল পর্যটনে৷ জার্মানদের মতো আর কোনো জাতি এতো বেড়াতে ভালোবাসে না, এবং বেড়ানোর জন্য এতো টাকাও খরচা করে না৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আর্থিক সংকট ও বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা সত্ত্বেও জার্মানরা ২০১১ সালে শুধু বিদেশে বেড়ানোর জন্য মোট ৬১ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করেছে৷
বার্লিনের আন্তর্জাতিক পর্যটন বাজার বলে পরিচিত ট্যুরিজম ফেয়ারটি হল বিশ্বের বৃহত্তম পর্যটন মেলা৷ এ'বছরের মেলা শুরু হয়েছে গত বুধবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি৷ টিভি টাওয়ারের কাছে মেলা প্রাঙ্গণে ২৬টি বড় হল'এর সব ক'টি পুরোপুরি ভর্তি৷ স্টল ও স্ট্যান্ড দিয়েছেন ১৮৭টি দেশ থেকে আগত ১০,৬৪৪ প্রদর্শক৷
আইটিবি ২০১২'র সহযোগী দেশ হল মিশর, যে কারণে মিশরের পর্যটন মন্ত্রী মুনির ফখরি আব্দেল নুর স্বয়ং উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন৷ তার বক্তব্য: ‘‘এক দশকের বেশি ধরে পর্যটন মিশরীয় অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভগুলির মধ্যে গণ্য৷ দেশের প্রতি সাতটি চাকরির মধ্যে একটি এই পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর৷ ২০১০ সালে পর্যটন থেকে মিশরের আয় হয়েছে সাড়ে বারো বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ বিদেশি মুদ্রা অর্জনে পর্যটন ছিল দ্বিতীয় স্থানে৷ সেই কারণে পর্যটন শিল্পের বিকাশ মিশর সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পাবে, তা যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক বা কেন৷ আমরা তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সৃষ্টির জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নেব, যা'তে আমরা ২০১৭ সালের মধ্যে বছরে তিন কোটি পর্যটকের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি৷''
২০১১ সালে অবশ্য মিশরে পর্যটকদের সংখ্যা ছিল এক কোটি৷ ওদিকে পর্যটনের বাজারে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা তো কম নয়৷ যেমন বার্লিন আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় গ্রিস এবার বড় করে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে৷ গ্রিসের অর্থনীতির যা অবস্থা, তা'তে পর্যটন থেকে আমদানিটা দেশের পক্ষে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷
আশ্চর্য এই যে, আর্থিক সংকটের আগে জার্মানরাই ছিল গ্রিকদের সবচেয়ে প্রিয় পর্যটক৷ ইউরোপীয় সভ্যতার জন্ম যে দেশে, জার্মানরা জীবনে অন্তত একবার সেখানে ঘুরে আসাটাকে তাদের কর্তব্য বলে মনে করত৷ তা'ছাড়া গ্রিসে সূর্যস্নান থেকে পান-ভোজন, সবই ভালোমতো করা যায়৷ দামও জার্মানদের চোখে সস্তাই৷ কিন্তু আর্থিক সংকট দু'দেশের মানুষ, এবং রাজনীতিকদের সম্পর্কের উপর ছায়া ফেলেছে৷ গ্রিস এবার বার্লিনে ঘটা করে প্রদর্শনী করে সেই ছায়াটাকেই দূর করতে চাইছে৷
জার্মান পর্যটকদের টানতে তো অনেক দেশই চায়৷ কিন্তু যে দেশটি জার্মান পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি টানে, সেটি হল জার্মানি৷ জার্মানরা নিজের দেশেই সবচেয়ে বেশি বেড়ায়৷ পর্যটনের একটি হিসেব হল হোটেলে কত মানুষ কতো রাত কাটাল৷ গতবছর জার্মানিতে সেই রাত্রিবাসের সংখ্যা বেড়েছে চার শতাংশ৷ নতুন হল এই যে, বিদেশিরাও জার্মানিকে পর্যটনের লক্ষ্য হিসেবে আবিষ্কার করছে৷ ২০১১ সালে হোটেলে রাত্রিবাসের ১৬ শতাংশ ছিল বিদেশি পর্যটকদের অনুগ্রহে৷
তবে পর্যটন শিল্পের রমরমায় সরকার ও পৌর প্রশাসনগুলি নতুন কর আদায়ের পন্থা দেখছে৷ বিমানে চড়লে যাত্রীদের একটি নতুন কর দিতে হচ্ছে৷ হোটেলে বেড প্রতি কর চাপানো, স্টিমার যাত্রার উপর সেলস ট্যাক্স বাড়ানো, এ'সব চলেছে৷ কাজেই জার্মান পর্যটন সমিতি ডিআরভি'র প্রধান ইয়ুর্গেন বুইশি বলেছেন: ‘‘জার্মানির পর্যটন শিল্পের উপর আর ভার চাপানো চলবে না৷ এমনিতে স্থিতিশীল এবং সংকটের সময়েও অর্থনৈতিকভাবে সফল এই শিল্পটির রাজনীতি ও আর্থিক নীতির তরফ থেকে শান্তির প্রয়োজন৷''
জার্মানির জিডিপি'তে মোটর গাড়ি শিল্পের চাইতেও বেশি অবদান রাখে পর্যটন শিল্প, জানালেন বুইশি৷ চাকরি জোটায় ৩০ লাখ মানুষকে, অর্থাৎ মোট শ্রমসংস্থানের সাত শতাংশ৷ কথাটা সব জার্মান জানেন কিনা সন্দেহ৷
প্রতিবেদন: সাবিনে কিনকারৎস / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ