বর্তমানে ডিপ্লোমা, ব্যাচেলর , মাস্টার্স , পিএচডি মিলিয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে জার্মানিতে৷
জার্মানিতে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ জার্মানিতেই ঈদ উদযাপন করে৷ তাদের পক্ষে ক্লাস,পরীক্ষা, ছুটির সমন্বয় করে সবসময় দেশে যেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করাও সম্ভব হয়ে উঠে না৷ কীভাবে কাটে তাদের ঈদের দিন? বাংলাদেশের তুলনায় কতটা নতুনত্ব থাকে তাদের জার্মানিতে পালন করা ঈদে?
বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানতে চেষ্টা করা হয়েছে ঈদকে ঘিরে তাদের ভাবনা৷ অধিকাংশেরই একটি বিষয়ে মিল ছিল, তা হচ্ছে পরিবার, প্রিয়জন ছাড়া ঈদের অভিজ্ঞতা৷ উৎসবের আমেজ তাদের কাছে অনেকটা ফ্যাকাসে৷ তবে এর মাঝেই তারা আবেগ, অনুভূতিগুলোকে এক পাশে রেখে, বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই সবচেয়ে ভালোভাবে ঈদ উদযাপনের উপায় খুঁজে নিয়েছেন৷
নিজেদের শহরে পরিচিত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে অনেকেই তাদের এখানকার ঈদগুলোকে রঙিন করে তুলেছেন৷ হাম লিপ্সটাড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ব্যাচেলরের শিক্ষার্থী আবু সায়েম বলছিলেন, ঈদে যোয়েস্ট শহরের বসবাসরত বাংলাদেশিরা এক সঙ্গে ঈদগাহে নামাজ পড়ে সেখানকারই এক বড় ভাইয়ের বাসায় সকালের নাস্তা করার মাধ্যমে তার দিন শুরুর কথা৷
বাংলাদেশে খোলা জায়গায় ঈদগাহে যেভাবে ঈদের নামাজ পড়া হয় সেটা জার্মানিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয় না৷ এখানে সাধারণত নামাজ পড়ানো হয় মসজিদের ভিতরে৷ কোলন ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত রিসাদুল ইসলাম হিমেল বলছিলেন, দেশে ঈদের দিনে ঈদগাহ থেকে মাইকে যে সুর ভেসে আসে তা শুনেই একটা অন্যরকম আমেজ তৈরি হওয়ার কথা৷ পরিবারের সবার সঙ্গে একসাথে নামাজ পড়তে যাওয়া, সারাদিন অনেক ধরনের খাবার খাওয়া - এসবের অনুপস্থিতিই তিনি এখানে অনুভব করেন৷
তবে সহপাঠী আহমেদ শাহরিয়ারের কাছে পরিবারের অনুপস্থিতি অনুভূতও হলেও তিনি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে দিনটিকে ভালোভাবে উদযাপনের চেষ্টা করেন৷ ঈদের দিনের সঙ্গে কোন ছুটি মিলে গেলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতেও যেতে পারেন কাছাকাছি কোনো জায়গায়।
একই বিভাগে অধ্যয়নরত শাবনাজ খানমের কাছে ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়তে যাওয়া ছাড়া বাকি সময়টুকু স্বাভাবিক দিনের মতোই কাটে৷ পরিবার ছাড়া নিঃসঙ্গ ঈদ করার চেয়ে তিনি স্বাভাবিক ব্যস্ততাকেই বেছে নিয়েছেন৷ তবে পরিবারের শূন্যতা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে থাকতে পারেন, যখন পরিচিত বাংলাদেশিরা কোথাও একত্রিত হয়ে একসঙ্গে রান্না করেন, আড্ডা দিয়ে সময় কাটান৷
তবে এর ব্যাতিক্রমও আছে৷ থুরিঙ্গিয়া রাজ্যের ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মো. রিজওয়ানুল হকের কাছে জার্মানিতে ঈদ উদযাপন বেশ আনন্দদায়ক মনে হয়৷ সাধারণত বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষে বেশ কিছুদিন দোকানপাট সীমিত পরিসরে বন্ধ থাকায়, অনেককেই ঝামেলা পোহাতে হয় প্রতিদিনের কেনাকাটায়৷ জার্মানিতে ঈদ এর দিনও স্বাভাবিক দিনের মতো হওয়ায় তিনি তার প্রতিদিনের কাজ একই রুটিন অনুসারে করতে পারেন৷ ঈদ উপলক্ষে তাকে বাড়তি কিছু করতে হয় না৷ বিশেষ করে ৩০ দিন রোজা রাখার পর ঈদের দিন সব আত্মীয়ের বাড়ি বাড়ি যেয়ে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার যে চাপ, তা থেকে মুক্তি পেয়েই তিনি বেশ খুশি৷
জার্মান অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, জার্মানিতে প্রায় ৫৩ থেকে ৫৬ লাখ মুসলমান বসবাস করেন৷ তবে জার্মানিতে ঈদের দিন আলাদাভাবে ছুটি না থাকায় ঈদের দিনটিকেও সপ্তাহের অন্য একটি দিনের মতোই স্বাভাবিক মনে হয়৷ ঈদকে ঘিরে বাংলাদেশে যে ছুটি ও উৎসবের আমেজ থাকে, তা এখানে তেমন দেখা যায় না৷