পড়াশোনা
১৯ নভেম্বর ২০১২ডিএএডি'র সাম্প্রতিক এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০১১ সালে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিবন্ধিত মোট শিক্ষার্থীর ১১.৪ শতাংশ বিদেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী এসেছেন চীন থেকে৷ তাদের সংখ্যা ২২ হাজার ৮২৮ জন৷
জার্মানি ও চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে সাতশো সহযোগিতামূলক চুক্তি রয়েছে৷ এর মাধ্যমে যে শুধু শিক্ষার্থী, বিজ্ঞানী ও গবেষক বিনিময় হচ্ছে তা নয়, দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পাঠদান কর্মসূচিরও বিনিময় হচ্ছে৷
চীনের বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন হিংজি বলছেন, গবেষণা ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকার কারণে গবেষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় জার্মানি৷
চীন ছাড়াও রাশিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া থেকেও অনেকে পড়তে আসছেন জার্মানিতে৷
ডিএএডি বলছে, তিনটি ইংরেজি ভাষা প্রধান দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার পর জার্মানি এখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য৷
বিশ্ব আর্থিক মন্দায় যখন বেশিরভাগ দেশের অবস্থা সঙ্গিন, সেখানে জার্মানির অবস্থা মোটামুটি ভাল৷ তাই পড়াশোনা শেষে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের তালিকায় থাকছে জার্মানির নাম৷ সেই সঙ্গে বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে জার্মান সরকারের নেয়া কিছু অনুকূল পদক্ষেপও এর একটা কারণ৷ যেমন পড়াশোনা শেষে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে নিয়ম সহজ করেছে জার্মান কর্তৃপক্ষ৷ তাছাড়া বিদেশিদের চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রেও এখন জার্মানি অনেক উদার৷
‘ব্লু কার্ড' ব্যবস্থা চালু হওয়ার কারণেও অনেকে এখন জার্মানিতে পড়তে আসতে আগ্রহী হচ্ছে৷ এর ফলে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর চাকরি খোঁজা ও বসবাসের নিয়ম অপেক্ষাকৃত সহজ হয়েছে৷
এতোদিন জার্মানিতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভাষা একটা বড় সমস্যা ছিল বিদেশিদের কাছে৷ সেক্ষেত্রেও কিছুটা ছাড় দিচ্ছে জার্মানি৷ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ইংরেজিতে পড়াশোনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া প্রখ্যাত ‘কার্লসরুয়ে ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি' বা কেআইটি'তে একটা বিশেষ সফটওয়্যারের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে জার্মান ভাষায় দেয়া অধ্যাপকদের লেকচারগুলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীর ল্যাপটপে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ হয়ে যায়৷ যেভাবে আমরা ইংরেজি সাবটাইটেল থাকা সিনেমার ক্ষেত্রে দেখে থাকি৷
কেআইটি'র আলেকজান্ডার ভাইবেল গত ২০ বছর ধরে এই সফটওয়্যারের উপর কাজ করে যাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, শুধুমাত্র ভাষাগত সমস্যার কারণে কেআইটি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী হারাচ্ছে৷ সেই সমস্যা দূর করতেই এই সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল৷ বর্তমানে চারটি কোর্স পড়ানো হচ্ছে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে৷ ভবিষ্যতে সবগুলো কোর্স এর আওতায় আনা হবে৷
২০১০ সালে প্রথম বর্ষে বিদেশি শিক্ষার্থী নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ৬৬,৪০০ জন৷ যেটা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷
জার্মানিতে পড়তে আসা বিদেশিদের প্রায় অর্ধেক আসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে৷ এর মধ্যে রাশিয়া, বুলগেরিয়া আর পোল্যান্ড উল্লেখযোগ্য৷ তবে ইদানিং পশ্চিম ইউরোপের দেশ যেমন অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও স্পেন থেকেও অনেক শিক্ষার্থী আসছেন পড়তে৷ শিক্ষার্থী আসছে গ্রিস থেকেও৷
এশিয়ার দেশগুলো থেকেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে জার্মানিতে৷ যেমন এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ভারত থেকে জার্মানিতে পড়তে গেছেন ৫,০৩৮ জন৷ তার আগের বছর যেটা ছিল ৪,০৭০ জন৷
তবে শুধু যে জার্মানিতে বিদেশিরা পড়তে আসছেন তা নয়৷ জার্মান শিক্ষার্থীদেরও বিদেশে গিয়ে পড়ার সংখ্যা বেড়েছে৷ ২০০৯ সালে এক লক্ষ ১৫ হাজার পাঁচশো জার্মান শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে পড়তে যায়৷
জেডএইচ / এসবি (ডিএএডি, ইন্টারনেট)