জার্মানিতে খাগড়ার চালের কদর
২২ জুলাই ২০১৫জার্মানির উত্তরে সর্বত্র রিড বা খাগড়া গজায়৷ স্টেফান সিবিঙার সেগুলি খুবই পছন্দ করেন৷ তরুণ বয়সেই বাভেরিয়ার এই মানুষটি উত্তরে ফ্লেন্সবুর্গ শহরের কাছে বাসা বাঁধেন৷ আজ তিনি স্বাবলম্বী৷ ছাদে খাগড়ার চাল বসান তিনি৷ একেবারে স্বপ্নের পেশা৷ এই মুহূর্তে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে প্রায় ২০০ বছর পুরানো একটি খামারবাড়ির ছাদ লাগাচ্ছেন৷ সরকারি ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা এই বাড়িটিকে হুবহু মূল রূপে ফিরিয়ে আনতে হবে৷ ছাদও খাগড়ার হতে হবে৷ প্রায় ১০০ বর্গমিটার ছাদের জন্য ১,০০০ আঁটি খাগড়ার প্রয়োজন৷ কঠিন পরিশ্রমের কাজ৷ নিপুণ হাতে কাজ করতে হয়৷ স্টেফান বলেন, ‘‘প্রতি বর্গ মিটারের জন্য ১১ আঁটির হিসাব করি৷ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ রাখা হয়৷ নীচে নেমে আনার চেয়ে হাতের কাছে থাকা ভালো৷''
সবার আগে খাগড়া ছাদের উপর সমান ভাবে ভাগ করা হয়৷ চোখের আন্দাজেই সব কাজ হয়৷ বাতাসের ধাক্কা সামলাতে খাগড়া তার দিয়ে বাঁধা থাকে এবং ছাদের কাঠের গুঁড়িতে ভালো করে বসানো থাকে৷ ধারালো অংশ থাকা সত্ত্বেও মিস্ত্রীরা গ্লাভস ছাড়াই কাজ করেন৷ স্টেফান বলেন, ‘‘এভাবে হাত দিয়ে কাজ করতে হলে গ্লাভস থাকলে চলে না৷ অথবা পরলেও দু'ঘণ্টা পর পর সেগুলি নষ্ট হয়ে যায়৷ সব ক'টি আঙুল অক্ষত রয়েছে বটে, তবে প্রতিদিনই আঘাত লেগে কিছু রক্তপাত ঘটে৷''
একমাত্র এভাবেই অরগ্যানিক আকার তৈরি হয়৷ খামারবাড়ির ছাদ তৈরি করতে প্রায় ২০,০০০ ইউরো খরচ হয়েছে৷ মালিকের জন্য টাকার অঙ্কটা বেশ বড়৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি পিছিয়ে আসেননি৷ সেইসঙ্গে ঝুঁকিগুলি সম্পর্কেও তিনি সচেতন৷ খাগড়ার চালে আগুন লাগার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ খামারবাড়ির মালিক ভালট্রুড লুকখুস বলেন, ‘‘আমি জানি, বেশি খরচ হলো৷ শুধু অগ্নিবিমার মাশুলই বছরে দেড় হাজার ইউরো৷ কিন্তু এখানে আবহাওয়া গ্রীষ্মে শীতল ও শীতে উষ্ণ থাকে৷ বাড়ির একটা চরিত্র রয়েছে, তা বদলানো যায় না৷ এমনকি ইটও খাপ খায় না৷ বাড়িতা যেন জীবন্ত, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়৷''
খাগড়ার চাল তৈরির কাজের জন্য কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই৷ কয়েকজন চালের মিস্ত্রি এই উপকরণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন৷ ইট ব্যবহার করলে তিন দিনে কাজ হয়ে যেত৷ খাগড়া দিয়ে চাল ঢাকতে ২ সপ্তাহ সময় লেগেছে৷ কারণ হাত দিয়েই নিখুঁতভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে সব কিছু ভালো করে নিরাপদভাবে ফিট করতে হয়৷ স্টেফান সিবিঙারের কাছে এটা অভিজ্ঞতার প্রশ্ন৷ সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা বা মাপজোকের বালাই নেই৷ প্রত্যেকটি বাড়ির চালই অনন্য হয়৷ স্টেফান সিবিঙার বলেন, ‘‘আমার পেশাটা অনেকটা নাপিতের মতো৷ কারণ তাকেও তো চিরুনি চালাতে হয়৷''
মালিকের মনে হয় নতুন বাড়ির ‘চুলের ছাঁট' বেশ পছন্দ হয়েছে৷