জার্মানিতে বাসস্থান সমস্যা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩জার্মানির বিশেষ করে বড় বড় শহরগুলিতে বাড়িভাড়া বেড়েই চলেছে৷ আগের বড় বাসা ছেড়ে নতুন ছোট বাসায় উঠতে গেলে অনেক সময় বেশি ভাড়া গুনতে হয়৷ হামবুর্গ, মিউনিখ ও ফ্রাইবুর্গের মত শহরগুলিতে এই সমস্যা প্রবল, জানান জার্মান ভাড়াটে সমিতির প্রেস অফিসার উলরিশ রপার্টৎস৷ তাঁর মতে, মানুষের মধ্যে শহরে বসবাস করার প্রবণতা বাড়ছে৷ সে তুলনায় বাড়িঘর নির্মিত হচ্ছে কম৷
২০১১ সালে বার্লিনে ৬,০০০ বাড়ি নির্মিত হয়েছে৷ কিন্তু এই সময়ের মধ্যে শহরটিতে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪১,০০০৷
বড় শহরে সংকট বেশি
অন্যান্য বড় শহরগুলির অবস্থাও প্রায় একই রকম৷ বাড়ির সংখ্যা সীমিত৷ ভাড়াও উঁচু৷ বাড়িওয়ালারা নিজেরাই ভাড়া ঠিক করতে পারেন৷ এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বিধিবিধান নেই৷ এর ফলে নতুন চুক্তি করতে গেলে ভাড়াটেদের ২০, ৩০ বা ৪০ শতাংশ বেশি ভাড়া গুনতে হয়৷
জার্মান ভাড়াটে সংঘ এই গলাকাটা ভাড়ার ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছে এখন৷ এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি৷ এজন্য আরো বেশি সুলভ মূল্যের ‘সোশাল হাউজিং' বা সামাজিক বাসস্থান নির্মাণ করা দরকার৷ ভাড়াটে সংঘের উলরিশ রপার্টৎস বলেন, ‘‘জার্মানির জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে৷ কথাটা এক অর্থে ঠিক হলেও পুরোপুরি নয়৷'' অর্থাৎ লোকসংখ্যা কমলেও গৃহস্থালির সংখ্যা বাড়ছে এখানে, বিশেষ করে বড় বড় শহরগুলিতে৷ অনেকে একাই একটি বাসায় বাস করছেন৷
কিছুটা সুরাহা করতে পারে সামাজিক বাসস্থান
এই সমস্যার সুরাহার জন্য ভাড়াটে সংঘ সামাজিক বাসস্থান নির্মাণের ওপর জোর দেয়৷ সরকারের আর্থিক সহায়তায় তৈরি করা হয় এইসব বাড়িঘর৷ ভাড়াও নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করতে পারে না৷ এতে করে কম আয়ের মানুষরাও এইসব বাড়ি ভাড়া করতে পারেন৷ জার্মানিতে সামাজিক বাড়িঘরের ঐতিহ্য বহু দিনের, সেই ‘ভাইমার রিপাবলিক'-এর সময়, ১৯২০-এর দশক থেকে৷ সেই সময়েই প্রথম নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য একটি ভাল বসতি গড়ে ওঠে৷
জার্মান অর্থনৈতিক ইন্সটিটিউটের মিশাইল ফোগটল্যান্ডার এ ব্যাপারে অবশ্য সন্দিহান৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘কেবলমাত্র অল্পসংখ্যক দুঃস্থ মানুষের জন্য সরকারি সহায়তায় বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব৷ কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা কম নয়৷ যেমন কোলোন শহরেই ৫০ শতাংশ ভাড়াটে সামাজিক বাড়ির জন্য অনুমোদন পেতে পারেন৷''
অনেক সময় সরকারি সহায়তায় নির্মিত বাড়ির সুবিধা ভোগ করেন এমন সব মানুষ, যাদের কিছুটা বেশি ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য আছে৷
নেতিবাচক দিকও রয়েছে
এর আরেকটা নেতিবাচক দিক হলো, এর ফলে এক ধরনের ‘ঘেটো' সৃষ্টি হয়৷ শহরের যে সব অঞ্চলে সামাজিক বাড়িঘর তৈরি করা হয়, সেসব জায়গায় সাধারণত নিম্ন আয়ের ও বেকার মানুষজনই বসবাস করেন৷ এই সব এলাকায় অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে যায়৷ আর তাই যাদের সামর্থ্যে কুলায়, তারা অন্য কোনো জায়গায় চলে যান৷
তাই ভাড়াটে সংঘ মনে করে, শুধু সামাজিক বাসস্থান নির্মাণই সমস্যার সমাধান করতে পারে না৷ ড্যুসেলডর্ফ ও হামবুর্গের মত বড় শহরগুলিতে বাড়িভাড়া যাতে সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে আসতে পারে, সে জন্য ‘ভাড়া ব্রেক' করার বিধান থাকতে হবে৷ অর্থাৎ বাড়ির মালিকরা যাতে ইচ্ছামত ভাড়া বাড়াতে না পারেন, সে ব্যবস্থা থাকতে হবে৷
সুরাহার পথ – শহর ছাড়া?
বাভারিয়া রাজ্য সরকার সম্প্রতি মিউনিখ ও আরো কয়েকটি শহরে এই ধরনের নীতিমালা চালু করেছে৷ এক্ষেত্রে ভাড়াটেদেরও সচেষ্ট হতে হবে৷ মিশাইল ফোগটল্যান্ডার যারা বাসা খুঁজছেন, তাদের পরামর্শ দেন, ‘‘শহর থেকে বাইরে বসবাসের ব্যাপারে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে৷ শহরের বাইরেও এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানকার পরিবহন ব্যবস্থা ভালো৷'' তাই তো বলতে হয়, ‘ছাড়ো শহর ছাড়ো'৷