কারাগারে বৃদ্ধ হওয়া
১০ মার্চ ২০১৪কারাবন্দিদের মোট সংখ্যা গত বছরগুলিতে কমের দিক গেলেও প্রবীণ বন্দিদের সংখ্যা বাড়ছে৷ প্রশ্ন উঠতে পারে এটা কী সমাজেরই এক প্রতিচ্ছবি, নাকি বৃদ্ধদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে? উত্তরে বলা যায় এক্ষেত্রে দুই-এরই ভূমিকা রয়েছে৷ বলেন বখুম শহরের অপরাধ বিশেষজ্ঞ মিশায়েল আক্সেল ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে৷ ‘‘ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ফারাক বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্ষিয়ানদের মধ্যে চুরি ও প্রতারণার ঝোঁকও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে৷''
বেশি কারাগারে থাকতে হয়
অপর একটা কারণ হলো বন্দিদের আগের চেয়ে বেশি দিন জেলখানায় থাকতে হয়৷ ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নিরাপত্তার কারণে মারাত্মক অপরাধীদের প্রাপ্ত সাজার বাইরে খুব বেশি হলে দশ বছর আটক রাখা হতো৷ বেলজিয়ামের এক কুখ্যাত কয়েদিকে নিয়ে একটি অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার পর, এই সীমাবদ্ধতা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তখন থেকে নিরাপত্তার কারণে আটককৃত বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে৷
বয়োবৃদ্ধদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কারাগারগুলিকে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ বিশেষ করে বৃদ্ধ বন্দিদের চিকিৎসার ব্যাপারে অল্পবয়সিদের তুলনা ভিন্নভাবে দৃষ্টি দিতে হচ্ছে৷ অনেকেই ডায়বেটিস, ডিমেনশিয়া, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি অসুখ বিসুখে আক্রান্ত৷ কেউ কেউ সেবা-শুশ্রূষার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন৷ কারাগারে মৃত্যু হওয়াও কোনো বিরল ঘটনা নয়৷ কোনো কোনো কারাগার এজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে৷ ডেটমোল্ড কারাগারে সাত বছর ধরে বৃদ্ধদের জন্য একটি আলাদা শাখা রয়েছে৷
সিংগেন শহরে পৃথক কারাগার
বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের সিংগেন শহরে ১৯৭০ সাল থেকে শুধু প্রবীণদের জন্যই ৪৮ সিটের আলাদা একটি জেলখানা রয়েছে৷ সেই সময় ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন নিয়ে মাথা ঘামানো না হলেও বয়স্কদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছিল৷ বলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক টোমাস মাউস৷
বয়স্কদের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, মাত্রাধিক খাঁটুনির কাজ না দেওয়া, বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি চাহিদার দিকে লক্ষ্য রাখা হয় সেখানে৷ এছাড়া বৃদ্ধরা অল্পবয়সি বন্দিদের কিছুটা ভীতির চোখে দেখে৷ এ কারণেও তাঁদের আলাদা রাখার প্রয়োজন বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষ৷
অন্যান্য কারাগারের মতোই বৃদ্ধদের কারাগারেও কাজের সময়, অবসরের সময়, বিশ্রামের সময় এ সব ভাগ করা থাকে৷ অবসর সময়ে বিশেষ খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়৷ আর থাকে স্মৃতির ট্রেনিং এবং কর্মদক্ষতা বাড়ানোর নানা ধরণের ব্যবস্থা৷
‘পক্ষপাতমূলক আচরণ' নয়
বৃদ্ধ কারাবন্দিদের প্রতি ‘পক্ষপাতমূলক আচরণ' করা হয় না, বরং তাঁদের বয়সের সাথে খাপ খাইয়ে তত্ত্বাবধান করা হয়'', বলেন মাউস৷ সারা জার্মানিতে আসামির তুলনায় কারাগারে সিটের সংখ্যা বেশি৷ কিন্তু সিংগেন শহরে উল্টোটাই লক্ষ্য করা যায়৷ এখানে বন্দিদের জন্য অপেক্ষমান তালিকাটা বেশ দীর্ঘ৷
এক্ষেত্রে একটা বিষয় স্পষ্ট৷ কারাগারে বর্ষিয়ানদের সংখ্যা বৃদ্ধির এই প্রবণতা চলতেই থাকবে৷ অপরাধ বিশেষজ্ঞ মিশায়েল আক্সেল মনে করেন, বিচারক ও সরকারি আইনজীবীদেরও বিষয়টিকে বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে৷ ‘‘বয়স্কদের ক্ষেত্রে তাঁদের বাকি দণ্ড মকুব করে জামিনে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ এছাড়া যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন ও জেলখানায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে৷ ক্ষমার ব্যবস্থাটাও কাজে লাগানো যেতে পারে৷''
নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করা
আবারো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় অপরাধীদের ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করতে ইতস্তত করে বিচার বিভাগ৷ মারাত্মক অপরাধীদের বেলায় সমাজও সহানুভূতি দেখাতে কার্পণ্য বোধ করে, বলেন মিশায়েল আক্সেল৷ যদিও বৃদ্ধ অপরাধীদের ক্ষেত্রে আবার অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম৷
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে হামবুর্গে কারা-আইনের এক অনুচ্ছেদে মৃত্যুপথযাত্রী অসুস্থ বন্দিদের দণ্ড মকুব করার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যদি নিশ্চিত হওয়া যায় এই অবস্থায় অপরাধকর্ম সংঘটিত করার সম্ভাবনা নেই৷ ‘‘জার্মানিতে হামবুর্গই একমাত্র রাজ্য, যেখানে আইনত এইসব অসুস্থ মানুষকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ যাতে তাঁদের কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে না হয়'', বলেন অপরাধ বিশেষজ্ঞ মিশায়েল আক্সেল৷