জার্মানিতে যৌনবাহিত রোগ কম?
২৮ মার্চ ২০১৬সাবেক পশ্চিম জার্মানিতে যৌনব্যাধি সংক্রান্ত আইন পাশ হয় ১৯৫৩ সালে – সেই আইনে সিফিলিস ও গনোরিয়া গোত্রীয় মাত্র চারটি রোগকে যৌনব্যাধির পর্যায়ে ফেলা হয় ও নির্দেশ থাকে যে, এই রোগ হলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে৷ তা সত্ত্বেও পশ্চিম জার্মানিতে ৭৫ শতাংশ সিফিলিস-এর ঘটনা আর প্রায় ৯০ শতাংশ গনোরিয়ার ঘটনা রিপোর্ট করা হতো না৷
সাবেক পূর্ব জার্মানিতে কমিউনিস্ট শাসন থাকার ফলে সরকার সর্বেসর্বা, কাজেই যৌনব্যাধির প্রায় সব কেসই রিপোর্ট করা হতো বলে ধরে নেওয়া হয়৷ ১৯৯০ সালে দুই জার্মানির পুনর্মিলনের পর পশ্চিমের আইনই বলবৎ হয়েছে৷ ১৯৮২ সালে দক্ষিণ জার্মানির মিউনিখে প্রথম এইডস রোগের ঘটনা ঘটে৷ সে-যাবৎ এইডস সংক্রান্ত তথ্য বার্লিনের রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটে নথিভুক্ত করা হয় বটে, কিন্তু বাধ্যতামূলকভাবে নয়৷
২০০১ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে যে নতুন সংক্রমণ সুরক্ষা আইন চালু হয়েছে, তা অনুযায়ী চিকিৎসকদের একমাত্র হেপাটাইটিস বি রোগের ঘটনা বাধ্যতামূলকভাবে রিপোর্ট করতে হবে৷ বাদবাকি এসটিআই, অর্থাৎ সেক্সুয়ালি ট্র্যান্সমিটেড ইনফেকশনের ক্ষেত্রে দায়িত্ব যদি কারো থাকে, তো স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিকারের – সংক্রমিত ব্যক্তিদের টেস্ট করা বা পরামর্শ দেওয়াটা স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ৷
ইউরোপ বনাম যুক্তরাষ্ট্র
এসটিডি, অর্থাৎ সেক্সুয়ালি ট্র্যান্সমিটেড ডিজিজ বা যৌনব্যাধির ক্ষেত্রে ইউরোপ আর অ্যামেরিকার ফারাকটা চোখে পড়ার মতো৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী ইউরোপে এসটিডি-র ঘটনা অ্যামেরিকার তুলনায় অনেক কম৷ অ্যামেরিকায় যেমন গনোরিয়ার ঘটনা বেশ কিছুটা কমলেও, এখনও ইউরোপের তুলনায় আকাশছোঁয়া৷
এইচআইভি, অর্থাৎ এইডস-এর ক্ষেত্রে ২০১২ সালের গোড়ার দিকের একটা পরিসংখ্যান নেওয়া যাক৷ তখন ওয়াশিংটন ডিসি আর নিউ ইয়র্ক মিলিয়ে এইডস ভাইরাসে সংক্রমিতদের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ ২৩ হাজার, যেখানে দু'টি শহরের মোট জনসংখ্যা ছিল ৯০ লাখ৷ তখন জার্মানির জনসংখ্যা আট কোটি বিশ লাখ – তার মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিতদের সংখ্যা ৫৬ হাজার৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, অ্যামেরিকার দু'টি বড় শহরের এইচআইভি সংক্রমিতদের সংখ্যা গোটা জার্মানির এইচআইভি সংক্রমিতদের দ্বিগুণ৷ আবার যুক্তরাষ্ট্রে যত মানুষ প্রতিবছর নতুন করে এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হন, তাদের সংখ্যাও ৫৬ হাজার (২০১২ সালের পরিসংখ্যান)৷
জার্মানি এইচআইভি-এইডসের ঘটনা কম রাখল কি করে?
জার্মানিতেও গোড়াতে এইডস-সংক্রান্ত ‘টাবু' ছিল৷ ১৯৮২ সালে প্রথম এইডস কেস ধরা পড়ার পরে এইডস রোগীদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্য তাদের ক্যাম্পে রাখা, অথবা এইডস রোগীদের গায়ে উল্কি কেটে তাদের চিহ্নিত করার কথাও নাকি ভাবা হয়েছিল! যদিও কোনোদিনই তা করা হয়নি৷ পরিবর্তে জার্মানির ‘গে কমিউনিটি', অর্থাৎ সমকামী গোষ্ঠীর সঙ্গে বিভিন্ন ফেডারাল সংস্থা সহযোগিতা করে এক নতুন সচেতনতার সৃষ্টি করে৷ সেই সচেতনতাই এইডস রোগ ছড়ানো রোধ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে, বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷
এছাড়া জার্মান জনগণের একটি বিপুল অংশ – ৯৩ শতাংশের বেশির স্বাস্থ্য বীমা থাকায়, এইচআইভি-পজিটিভ মানুষরা গোড়া থেকেই নিখর্চায় ট্রিটমেন্ট পেয়ে থাকেন৷ কাজেই জার্মানি ২০০৭ সাল যাবৎ বছরে নতুন এইচআইভি-সংক্রমণের সংখ্যা তিন হাজারের আশেপাশে ধরে রাখতে পেরেছে৷ জার্মান কর্মকর্তারা এইডস সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলে থাকেন; তাঁদের বক্তব্য হলো, এই হলো এইডসের ঝুঁকি; এবার জনতাকে নিজেদেরই সাবধান হতে হবে, নিজেকে রোগমুক্ত রাখার দায়িত্ব নিতে হবে৷
আর থাকছে তথাকথিত শ্যোনব্যার্গার মডেল, যার তিনটি সূত্র হলো, রোগ নির্ণয় হলে পরেই যে রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো হবে, এমন নয়; বাড়ির চিকিৎসক বাড়িতেই রোগীর চিকিৎসা করতে পারেন৷ নার্সরাও ডাক্তার ছাড়া রোগীর বাড়িতে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে পারেন৷ দ্বিতীয়ত, অ্যান্টিরিট্রোভাইরাল ড্রাগস-এর ক্ষেত্রে এইচআইভি সংক্রমিতদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়৷ তৃতীয়ত, এইডস রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য তিন-চারটি রোগের ফিরিস্তি দেওয়ার দরকার পড়ে না, ‘‘১ দশমিক ৩ এইডস সংক্রান্ত রোগ থাকলেই তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়'', বলে জানিয়েছেন বার্লিনের একটি হাসপাতালের মুখ্য চিকিৎসক৷
বন্ধু, আপনি কি অরুণ শঙ্কর চৌধুরীর সঙ্গে একমত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷