জার্মানিতে শরণার্থী সংকট সামলাতে নতুন উদ্যোগ
১১ মে ২০২৩শরণার্থীদের ঢল সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো সম্মিলিতভাবে সেই সংকট সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে৷ পারস্পরিক সংহতির ভিত্তিতে আগত শরণার্থীদের বণ্টনের ক্ষেত্রেও কোনো ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না৷ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই সংকট আরও বড় আকার ধারণ করেছে৷ ফলে জার্মানির মতো দেশ শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে৷ বিষয়টি সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও উত্তেজনা সৃষ্টি করছে৷ জার্মানির ফেডারেল সরকারের শরণার্থী সংক্রান্ত নীতি ও সিদ্ধান্তের প্রভাব আর মানতে চাইছে না রাজ্য সরকারগুলি৷ বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এক বৈঠকে দলমতনির্বিশেষে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে চরম মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেল৷ এমনকি জার্মানির জোট সরকারের প্রধান শরিক দল এসপিডি-র মুখ্যমন্ত্রীরাও চ্যান্সেলর শলৎসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বচসা করেছেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত আপোশ মীমাংসার প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে৷
জার্মানির রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা শরণার্থী গ্রহণ, তাদের আশ্রয়, সমাজের মূল স্রোতে তাদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগের বিপুল ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ বিশেষ করে পৌর স্তরে সেই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে অনেক শহর, জেলা ও গ্রাম কর্তৃপক্ষ নাজেহাল হচ্ছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন৷ তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, ফেডারেল সরকারের বাড়তি আর্থিক সহায়তা ছাড়া সেই গুরুদায়িত্ব সামলানো আর সম্ভব নয়৷ অথচ চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার রাজ্য ও পৌর কর্তৃরক্ষের সেই দাবি গ্রাহ্য করছিল না৷ বুধবারের দীর্ঘ বৈঠকের পর নতি স্বীকার করে ফেডারেল সরকার চলতি বছর ১৬টি রাজ্যের জন্য বাড়তি ১০০ কোটি ইউরো মঞ্জুর করেছে৷ সেইসঙ্গে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি শরণার্থী সংক্রান্ত নীতির কাঠামোর সংস্কারের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে আরও কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করার প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
জার্মানিতে শরণার্থীর ঢলের ক্ষেত্রে কোনো ধারাবাহিকতা না থাকায় বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ কখনো বেশি শরণার্থীর জন্য প্রস্তুতি নিলে বাস্তবে তাদের সংখ্যা কম থাকছে৷ যেমন চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ প্রায় এক লাখ দুই হাজার শরণার্থীর আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করেছে, যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭৮ শতাংশ বেশি৷ আবার প্রস্তুতির মাত্রা কমালে আচমকা বিপুল চাপ সৃষ্টি হচ্ছে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাই এক ‘ডায়নামিক' বা গতিশীল নীতির দাবি করছেন৷ এককালীন অনুদানের বদলে শরণার্থীদের জন্য মাথাপিছু ব্যয় স্থির করে বাস্তব সংখ্যা অনুযায়ী ফেডারেল সরকারের আর্থিক সহায়তা চাইছেন মুখ্যমন্ত্রীরা৷
আপাতত সেই দাবির ভিত্তে কোনো বোঝাপড়া না হলেও ভবিষ্যতে এমন ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে কিছু প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ প্রথমত সব রাজ্যকে এক ডিজিটাল কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যার মাধ্যমে আগত শরণার্থী সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদানপ্রদান করা সম্ভব হবে৷ তাছাড়া ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর হাতে কিছু বাড়তি ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিচার ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মধ্যে তথ্য বিনিময় আরও সহজ করা হবে৷ তারপর আগামী নভেম্বর মাসে চূড়ান্ত সমাধানসূত্র অর্জনের চেষ্টা চালানো হবে৷ সংসদে বিরোধী পক্ষের মতে, এত বিলম্বের কারণে ২০২৪ সালে নতুন কাঠামো কার্যকর করা যথেষ্ট কঠিন হবে৷ পৌর স্তরের প্রশাসনগুলিকেও ততদিন বাড়তি চাপ সামলাতে হবে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)