জার্মানিতে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের দূত এক ইরাকি
২৮ ডিসেম্বর ২০২০সামান হাদ্দাদ একজন সঙ্গীত আয়োজক৷ তার দু'টো ব্যান্ড- ৩০-পিস কুলতুর্কলুঙ্গেল অর্কেস্ট্রা ও গোল্ডেন কাবাব৷ কিন্তু তিনি শুধু একজন মিউজিশিয়ান নন, তার চেয়েও বেশি কিছু৷
গেল কয়েক বছরে তিনি ভাসমান নৌকায় বা চলমান দ্বিতল বাসে কনসার্ট করেছেন৷ এছাড়াও বন শহরে আয়োজন করেছেন আন্তঃসাংস্কৃতিক নৈশ ভোজন৷ এছাড়া গ্যোয়েটে ইনস্টিটিউটের হয়ে নিজভূমি উত্তর ইরাকেও গিয়েছেন সাংস্কৃতিক বিনিময় করতে৷
এসবের পেছনে কাজ করে তার মানুষের প্রতি ভালবাসা৷ নিজেকে তিনি ‘সংস্কৃতির বাহক' বলে ব্যাখ্যা করেন৷ তাকে অন্যরা বলেন ‘সংস্কৃতির দূত'৷ কখনো নিজেকে ডাকেন মুস্তাফা মুস্টারমান বা সালভাদর আলী বলে৷
‘‘মধ্যপ্রাচ্যে আমরা যখন একসাথে হই, নিয়ম হল কিছু খেতে হবে- আমি সবাইকে সবসময় ছোট ছোট ডিশ খেতে দিতাম,'' শুরুর কথা বলছিলেন হাদ্দাদ৷ দশ বছর আগে তার এই ‘কালচারাল মিশন' শুরু হয় খাবারকে কেন্দ্র করে৷ তখন তার বাসায় অনেকে আসতেন৷ সেখানেই একটা পুরোনো গিটার বাজিয়ে সবার মনোরঞ্জন করতেন তিনি৷
তার কিচেন হয়ে উঠল একটি প্রতিষ্ঠান আর সঙ্গীতময়সমাবেশটি হতে থাকল নিয়মিত৷
‘‘বলকান অঞ্চলে একটি সুন্দর কথা প্রচলিত আছে- ক্ষুধার্ত ভালুক নাচতে পারে না৷ খুবই সহজ কথা৷ আপনাকে প্রথমে মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে হবে৷ এরপরই কেবল তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন,'' বলেন তিনি৷
এভাবেই একটা সময় নতুন ও পেশাদার শিল্পীদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন হাদ্দাদ৷ তার কিচেনের নাম দেন ‘ফিয়ারটেলবার'৷
শুধু নিজের কিচেনেই নয়, হাদ্দাদ বন শহরের কেন্দ্রীয় উদ্যান ও ‘টাউনশিপ' নামের একটি পার্টি জাহাজে নিয়মিত কনসার্ট আয়োজন করতে লাগলেন৷ তার সঙ্গে যোগ দিলেন অনেক প্রথিতযশা মিউজিশিয়ান৷
হাদ্দাদ আয়োজিত ৪০টি কনসার্টের প্রথমগুলো ছিল বুড়োদের জন্য এবং শরণার্থীদের জন্য৷ এগুলোতে ছিল নানান সংস্কৃতির সঙ্গীতের মিশেল৷ তিনি শিশুদের জন্য বাসে কনসার্ট করেছেন৷
‘‘শিশুরা কখনো এই কনসার্ট ভুলতে পারবে না৷ আমার খুশি ছিলাম, তাদের আনন্দে,'' বলেন হাদ্দাদ৷
হাদ্দাদের বেশিরভাগ ইভেন্টই স্বেচ্ছাসেবা৷ তিনি বন ইনস্টিটিউট ফর মাইগ্রেশন রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল লার্নিং নামের একটি সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷
বাগদাদে একটি কুর্দিশপরিবারে আরব ও ভারতীয় বংশোদ্ভুত বাবামায়ের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন হাদ্দাদ৷ ইরাকে বিরুদ্ধ পক্ষকে সমর্থন করায় তার বাবাকে গ্রেফতার করে সাদ্দাম হোসেনের সরকার৷ নির্যাতিত হয়ে পরে জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য আসেন তিনি৷ সে সূত্রেই হাদ্দাদ ও তার পরিবারের বাকি সদস্যরা জার্মানি আসেন৷
ফিলিপ ইয়েডিকে/জেডএ