সিরীয় শরণার্থীদের প্রতি সংহতি
১ জুন ২০১৪ইহুদি ধর্মাবলম্বী এই দুই ব্যক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে আশ্রয় পাওয়ায় বেঁচে গিয়েছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন ইঙ্গে লামেল৷ তাঁর বয়স এখন ৯০৷ বসবাস করেন বার্লিনে৷ ছোটবেলায় ইংল্যান্ডে যেতে পেরেছিলেন বলে বেঁচে গিয়েছেন ইঙ্গে৷ মা-বাবা তাঁকে ও তাঁর বোনকে ১৯৩৯ সালে তথাকথিত শিশু পরিবহণের মাধ্যমে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন৷ সেখানে এক পরিবার তাঁদের আশ্রয় দেয়৷ জার্মানি থেকে আসা ১০ হাজার ছেলে-মেয়ে এইভাবে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন৷ অন্যদিকে তাঁদের পরিবারের অধিকাংশই নিহত হয়েছিলেন৷
ইঙ্গের মা-বাবা আউশভিৎস-এ নিহত হন৷ নিজের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেই তিনি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শিকার বাচ্চাদের সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছেন৷
ইঙ্গে লামেল-এর সহযোদ্ধা কুর্ট গুটমানের বয়স ৮৭৷ ছোট বেলায় স্কটল্যান্ডে আশ্রয়ে পেয়েছিলেন বলে মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন৷ কিছুদিন আগে (১৬.৫.২০১৪) তাঁরা জার্মান চ্যান্সেলরের দপ্তরে তাঁদের দাবি জানাতে গিয়েছিলেন৷ ইঙ্গে লামেল ওয়াকারে ভর করে, কুর্ট গুটমান হুইল চেয়ারে করে৷ শারীরিক দিক দিয়ে কিছুটা ভেঙে পড়লেও সিদ্ধান্তে অটল তাঁরা৷ দৃঢ় চিত্তে ভবনটির দিকে এগিয়ে যান তাঁরা৷ চ্যান্সেলরের দু'জন কর্মচারী তাঁদের অভ্যর্থনা জানান৷
আরো বেশি শরণার্থী গ্রহণ করা উচিত
মানব দরদি এই দুই ব্যক্তির বার্তা ছিল: আরো বেশি করে সিরীয় শরণার্থী গ্রহণ করা উচিত জার্মানির৷ ‘‘নাৎসি জার্মানি ছাড়তে পেরেছি বলেই ভাগ্যক্রমে আমরা বেঁচে গিয়েছি৷ আমাদের মা-বাবার মতো গ্যাস চেম্বারে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু বরণ করতে হয়নি'', বলেন ইঙ্গে লামেল৷
ব্রিটেনে সাদরে গ্রহণ করা হয়েছিল তাঁদের৷ এই অভিজ্ঞতা থেকে আজ তাঁর সিরিয়ার শরণার্থীদের পাশে এসে দাঁড়াতে চান৷ ‘‘নাৎসি অতীতের কারণে শরণার্থীদের উদারভাবে গ্রহণ করার ব্যাপারে দায়বদ্ধ জার্মানি'', বলেন কুর্ট গুটমান৷
‘‘আমরা চাই অন্ততপক্ষে ৭৫ হাজার সিরীয় শরণার্থী জার্মানিতে আশ্রয় পাক৷'' – এই দাবি গুটমানের৷ তাঁর মা-বাবাকে আজকের পোল্যান্ডের সবিবর নিধন শিবিরে হত্যা করা হয়৷
ব্রিটেনের জনগণ তাঁকে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে বলে তিনি কৃতজ্ঞ৷ তাঁর ভাষায়,‘‘আমাদের দেশের মতো একটি ধনী দেশের অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত৷ আর তাই এই সব মানুষকে জার্মানিতে আশ্রয় দেওয়া উচিত৷''
এই উদ্যোগটি শুরু করে ‘সেন্টার ফর পলিটিক্যাল বিউটি' নামে একটি শিল্পীগ্রুপ৷ কিছুদিন ধরে অভিনব কার্যকলাপের মাধ্যমে সাড়া জাগিয়েছে এটি৷
এ জন্য একটি নকল ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছে৷ এতে লেখা হয়েছে জার্মানির পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী মানুয়েলা শোয়েসিশ সিরীয় শরণার্থীদের গ্রহণ করার ব্যাপারে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন৷ ৫৫ হাজার বাচ্চাকে জার্মান পরিবারে আশ্রয় দেওয়া হবে৷ উজ্জ্বল মুখে সিরীয় বাচ্চারা মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে৷ এই ধরনের নকল ছবিও ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে৷ দেখতে অবিকল আসলের মতো৷ উদ্যোগের মুখপাত্র জাইনা লিন্ডনার প্রকল্পটির নাম দিয়েছেন ‘হাইপাররিয়েলিটি'৷
তাঁর নিজের নামটিও আসল নয়, এটি শিল্পীনাম৷ ইরাক থেকে এসেছেন তিনি৷ আর এ কারণে সিরিয়ার মানুষদের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন তিনি৷ সহযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে চ্যান্সেলরের দপ্তরের সামনে সিরিয়ার পতাকা তুলে ধরেন তাঁরা৷
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা
‘সেন্টার ফর পলিটিক্যাল বিউটি'-র পরিচালক ও সিরিয়ান অ্যাকশনের উদ্যোক্তা ফিলিপ রুখ৷ এই ধরনের অ্যাকশনের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান তিনি৷ সিরিয়ার পরিবার ও বাচ্চাদের রক্ষা করার ব্যাপারে জার্মানির নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে৷ তবে তিনি কিছুটা হতাশ যে শিল্পীদেরই এক্ষেত্রে উদ্যোগ নিতে হচ্ছে, যেখানে সরকার অনেকটাই উদাসীন৷
বার্লিন অবশ্য ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, ১০ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে গ্রহণ করা হবে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে ৭৬ হাজার সিরীয় জার্মানিতে আসার জন্য আবেদন করেছেন৷ অর্থাৎ, এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য অদম্য আকাঙ্খা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷
চ্যান্সেলর দপ্তরে হলোকস্ট বা ইহুদি নিধনযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া দুই বর্ষীয়ান ব্যক্তি তাঁদের অতীত সম্পর্কে বলছিলেন৷ তাতে এটাই স্পষ্ট হয়, বর্তমানের সঙ্গে এই পরিস্থিতির অনেক মিল রয়েছে৷ ‘‘এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত'', বলেন রুখ৷ সামনের সপ্তাহগুলিতে আরো কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি৷