1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে সুফিবাদী মুসলমানদের ধ্যানধারণা

৭ জুন ২০১১

সুফিবাদী বা মরমি ইসলামের অনুসারীরা শুধু মুসলিম প্রধান দেশগুলিকেই নয়, ইউরোপের অনেক দেশেই বসবাস করছেন৷ জার্মানিতে ইসলামের এই মুক্তধারার অনুসারীদের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি৷

https://p.dw.com/p/11VX3
তালে তালে আল্লাহর নাম নেওয়া বা জিকির করে গান গাওয়া ও ধ্যানের মাধ্যমে আত্মহারা হয়ে আল্লাহকে খোঁজা হয়ছবি: AP

তালে তাল দিয়ে গান ও ‘লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ' জিকির, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, এই সুর ভেসে আসে রুসেলসহাইমার শহরের একটি ভবন থেকে ৷ একটি চার্চের উল্টো দিকেই দাঁড়িয়ে আছে এই বাড়ি৷ সাদা পোশাক পরা পুরুষ, মহিলা ও বাচ্চারা দুলে দুলে গান করেন৷ তারা ইসলামের আলাভিয়া সুফি ধারার অনুসারী৷ আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ফুটে ওঠে তাদের সংগীতে৷ আখেরি মোনাজাতের সময় আল্লাহর ৯৯টি নাম সুর করে আবৃত্তি করা হয়৷

জার্মানিতে ২০০৭ সাল থেকে সুফিবাদী সংগঠনের যাত্রা শুরু

২০০৭ সালে জার্মানিতে ইসলামের সুফিবাদী ধারার অনুসারীরা ‘আইসা' নামে এক সংগঠন গড়ে তোলেন৷ ফ্রান্স ও আলজেরিয়ার পর জার্মানিতে সুফি ইসলামের এই ধরনের শাখা স্থাপিত হল৷ সদস্য সংখ্যা ১২০ জন৷ নির্বাহী কমিটির প্রধান তাওফিক হারটিট এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মরমিয়াবাদ সব ধর্মেরই মূলমন্ত্র৷ এটি যেন এক প্ল্যাটফর্ম, যা থেকে সব ধর্মের মৌল বাণী শত শত বছর ধরে ছড়িয়ে পড়ছে৷''

Tanzender Derwisch in der Türkei
সুফিজমের উৎপত্তি সপ্তম শতাব্দীর দিকে হয়েছে বলে মনে করা হয়ছবি: AP

সুফি মুসলমানদের আধ্যাত্মবাদে ঈশ্বরের কাছাকাছি যাওয়াটাই মূল লক্ষ্য৷ সুফিরা মনে করেন, আল্লাহ সবসময় সব মানুষের হৃদয়জুড়ে আছেন৷ সুর করে তালে তালে আল্লাহর নাম নেওয়া বা জিকির করে গান গাওয়া ও ধ্যানের মাধ্যমে আত্মহারা হয়ে আল্লাহকে খোঁজা হয়৷ পাশাপাশি মুসলমানদের জন্য আবশ্যিক রোজা নামাজের কথাও ভুলে যাননা সুফি মুসলিমরা৷ জিকির একা কিংবা সবাই মিলে করা যায়৷ জিকিরের আসরে অনেকে জিকির করতে করতে সম্মোহিত হয়ে পড়েন৷

সুফিজমের উৎপত্তি সপ্তম শতাব্দীর দিকে হয়েছে বলে মনে করা হয়৷ বিশেষ করে মিশর, মরক্কো, তুরস্ক ও সুদানে এর বিকাশ ঘটে৷ সুফিবাদের প্রভাব শুধু মুসলিম বিশ্বেই সীমিত থাকেনি৷ ১৯২০ সালে হজরত ইনায়েত খান নামে একজন ভারতীয় পশ্চিম ইউরোপেও সুফিবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে দেন৷

সুফিবাদকে বাঁকা চোখে দেখেন অনেকে

গোঁড়া মুসলমানরা আধ্যাত্মবাদের এই ধারাটিকে বাঁকা চোখে দেখেন৷ বিশেষ করে ইরান ও পাকিস্তানে অপছন্দ করা হয় সুফিবাদকে৷ তাদের ধারণা, নাচ, গান, ধ্যান এসব কাফের বা বিধর্মীদের সংস্কৃতি, তাই অনৈসলামিক৷

মিউনিখের লোকসংস্কৃতি মিউজিয়ামের প্রাচ্যবিষয়ক পরিচালক নৃতাত্ত্বিক ইউরগেন ওয়াজিম ফ্রেম্বগেন এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করে জানান, ‘‘গোঁড়া মুসলমানরা নিজেদের প্রকৃত মুসলিম বলে দাবি করেন, যা প্রকাশ পায় তাদের উগ্রপন্থি আন্দোলনে৷ তারা মনে করেন, ‘সত্য' তারা পেয়ে গেছেন৷ আর সুফিবাদীরা রয়েছেন এখনও সত্যের অন্বেষণে৷ সুফি মুসলমানদের আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের জন্য সবসময় সমালোচনা করা হয়৷''

Sufi Gemeinde in der Eifel
সুফি মুসলমানদের আধ্যাত্মবাদে ঈশ্বরের কাছাকাছি যাওয়াটাই মূল লক্ষ্যছবি: DW / Ayari

তিন ঘন্টা ধরে জিকির করার পর আলাভিয়া সুফিবাদীরা আখেরি মোনাজাত করেন৷ সবাই তখন হয়ে পড়েন কিছুটা ক্লান্ত ও সম্মোহিত, কিন্তু মনটা থাকে হালকা ও প্রফুল্ল, যা প্রকাশ পায় এক মহিলার কথায়৷ ‘‘এক সাথে মিলিত হওয়ায় আমার মনে অনেক শান্তি ও স্বস্তি এসেছে৷ দিনে নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়না৷''

আরেক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, ‘‘এই রকম আধ্যাত্মিক পরিবেশ না থাকলে পৃথিবীর টিকে থাকার কোনো অর্থ নেই৷''

এক বাচ্চা ছেলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এখানে সবাই যে এক সঙ্গে গান গায়, তা আমার খুব ভাল লাগে৷ মাঝে মাঝে আমরা একসাথে বেড়াতে যাই, সেটাও খুব খুশির ব্যাপার৷ সময় থাকলে আমরা মসজিদে গিয়ে গান শিখি৷''

ছোটদের ব্যাপারে আগ্রহী আইসা

‘আইসা'র সদস্যরা শিশু কিশোরদের ব্যাপারেও বিশেষ আগ্রহী৷ এই আলাভিয়া সুফিবাদের আধ্যাত্মিক গুরু শেখ বেনতুনস কিছুদিনের মধ্যে সকল ধর্মের ছেলে মেয়েদের নিয়ে ‘আশার শিখা' নামে অলিম্পিকের শিখার মত এক মার্চের আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছেন, যা জার্মানির বড় বড় শহরের মধ্য দিয়ে যাবে৷ সুফিবাদীরা অন্য ধর্মের প্রতি খুব সহনশীল৷ ‘আইসা'র নির্বাহী কমিটির প্রধান তাউফিক হারটিট আখেরি মোনাজাতে সব ধর্মের অনুসারীদের উপস্থিতিকে প্রশংসার চোখে দেখেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকে, যেমনটি থাকে কোরান, বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে৷ এ জন্য সুফিদের ভিন্ন চিন্তাধারার মানুষজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কোনো সমস্যা হয়না, অসুবিধা হয়না ভাবের আদানপ্রদানে৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক