জার্মানিতে স্কুলে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে কী আলোচনা হয়?
১৭ অক্টোবর ২০২৩বার্লিনের রাস্তায় ফিলিস্তিনপন্থি মিছিলের সময় কয়েকজনকে ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে৷ এই ঘটনায় দ্রুত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জার্মানির রাজনীতিবিদেরা৷ জার্মানিতে সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া বা ঘৃণা উসকে দেওয়া বেআইনি৷ ইহুদিবিদ্বেষের অভিব্যক্তিসহ বর্ণবাদী শ্লোগান দেওয়া ফৌজদারি আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷
ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে বার্লিনের স্কুলগুলোতে যে উত্তেজনা বাড়ছে তাতে অবাক নন ‘ক্রয়েৎসব্যার্গ ইনিশিয়েটিভ অ্যাগেইনস্ট অ্যান্টিসেমিটিজমের' ডার্ভিস হিজার্সি৷ তিনি বলেন, ইহুদিবিদ্বেষসহ সবধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে প্রতিরোধ৷ ‘‘যারা ‘শান্তিপূর্ণ সময়ে' মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত বা ইসরায়েল সংক্রান্ত ইহুদিবিদ্বেষের মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভাবে না, তারা সংকটের সময় এমন সংঘাতের ব্যাপারে ঠিকমতো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে না,'' বলে মনে করেন তিনি৷
হিজার্সি বলেন, ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা এবং তারপর গাজায় প্রতিশোধমূলক হামলার পর তার ও তার দলের কাছে অনেকে প্রশ্ন করছেন, পরামর্শ চাইছেন৷ যেমন ‘কেউ বলছেন এক মিনিট নীরবতা পালন করা উচিত কিনা, ইহুদি স্কুল থেকে অতিথি শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত কিনা ইত্যাদি'৷
ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই করা সাবেক শিক্ষক হিজার্সি বলেন, সবকিছুর জন্য একক কোনো উত্তর নেই৷ তবে তার পরামর্শ: ‘শান্ত থাকুন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুণ এবং শিক্ষাগতভাবে যেটা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় সেভাবে আবেগকে ব্যবহার করুন'৷
হিজার্সির সংগঠন এখন শিক্ষক ও সমাজকর্মীদের জন্য পরামর্শ সেবা শুরু করেছেন৷ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৪০ জনের বেশি আবেদন করেছেন৷ এই সংখ্যা প্রমাণ করছে বার্লিনের স্কুলগুলোতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, বলেন তিনি৷
জার্মানির চিত্র
ইহুদিবিদ্বেষ শুধু বার্লিনের স্কুলগুলোর জন্য সমস্যা নয়, গত মে মাসে সাক্সোনি রাজ্যের এক স্কুলের দুই শিক্ষার্থী আউশভিৎস কনসেনট্রেশন ক্যাম্প সফরের সময় হিটলার স্যালুট প্রদর্শন করেছিল৷
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানির সব রাজনৈতিক শিবিরে ইহুদিবিদ্বেষ আছে৷
২০২২ সালে অ্যামেরিকান জিউয়িশ কমিটি এজিসির করা এক গবেষণা বলছে, জার্মানির মূলধারার সমাজে ইহুদিবিদ্বেষ ‘গভীরভাবে গেঁথে' রয়েছে৷
প্রোফেশনাল এসোসিয়েশন অফ জার্মান সাইকোলজিস্ট সংগঠনের ক্লাউস জাইফ্রিড ডয়চে ভেলেকে জানান, বার্লিনে মুসলিম পরিবার থেকে আসা বেশিরভাগ শিশু ও তরুণ জার্মান সমাজে ভালোভাবে মিশে গেছে৷ অনেক গবেষণা দেখা গেছে, ইহুদিবিদ্বেষ সাধারণত সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠের তুলনায় অভিবাসনের ইতিহাস থাকা মানুষ ও মুসলমানদের মধ্যে বেশি বিস্তৃত নয়৷
তবে ইসরায়েল সংক্রান্ত ইহুদিবিদ্বেষের ক্ষেত্রে মুসলমান ও অভিবাসনের ইতিহাস থাকা মানুষদের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশের সংখ্যা বেশি৷ ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া ৪০.৫ শতাংশ মুসলমান (জার্মান নাগরিক এবং নাগরিক নন এমন মানুষও) ইসরায়েলকে নিয়ে করা ইহুদিবিদ্বেষমূলক বিবৃতির পক্ষে একমত প্রকাশ করেছেন৷ আর ৫.২ শতাংশ প্রোট্যাস্ট্যান্ট, ৭.১ শতাংশ ক্যাথলিক ও কোনো ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকা ৯.৪ শতাংশ মানুষ পক্ষে ছিলেন৷
স্কুলে ওয়ার্কশপ
‘গেজিস্ট সাইগেন' (আপনার মুখ দেখান) নামের একটি সংগঠন সহনশীলতার প্রতি জার্মান তরুণদের সংবেদনশীল করার কাজ করে৷ ইয়ান ক্রেবস ১৩ বছর ধরে সেখানে কাজ করছেন৷ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেন তারা৷
আলোচনায় তরুণদের সম্পৃক্ত করতে তারা অনেকসময় অপ্রত্যাশিত ও অদ্ভুত প্রশ্ন করে থাকেন৷ যেমন ‘‘নব্য-নাৎসিরা কি ড্যোনার কাবাব খায়?'' এতে কাজ হয় বলে জানান ক্রেবস৷
অভিভাবকদেরও প্রয়োজন
ক্লাউস জাইফ্রিড মনে করেন, শুধু স্কুলের পক্ষে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়৷ অভিভাবকদেরও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷ ক্লাউস বলেন, সবার কাছে পৌঁছা সম্ভব নয়, কিন্তু অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করা স্কুলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷
পুলিশও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে তাদের এক মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷
মার্সেল ফ্যুয়রস্টেনাউ/জেডএইচ