অঙ্গ প্রতিস্থাপন
১১ আগস্ট ২০১২গোপনীয়তা নীতির কারণে জার্মান পত্রপত্রিকায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম প্রকাশ করা হয়নি৷ তবে তাঁকে ডাকা হচ্ছে ‘ডক্টর ও' নামে৷
এই ‘ডক্টর ও' প্রথমে কাজ করতেন দক্ষিণের শহর রেগেনসবুর্গে৷ তারপর তিনি চলে যান উত্তরের গ্যোইটিঙ্গেন শহরে৷
অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য একটা তালিকা করা হয়৷ কোন রোগীর অসুখ কোন পর্যায়ে রয়েছে, কার জরুরি ভিত্তিতে অঙ্গ দরকার সেসব বিবেচনা করে তালিকাটা তৈরি করা হয়৷ কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিদেশি ধনাঢ্য ব্যক্তিরা টাকার বিনিময়ে সেই তালিকায় নিজেদের নাম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে সহায়তা করছে কিছু অসাধু চিকিৎসক৷ ফলে জার্মানরা অঙ্গ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছে৷
ডক্টর ও'র বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কাগজে কলমে তাঁর রোগীর শারীরিক অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক' দেখিয়ে তালিকায় তাদের নাম এগিয়ে এনেছেন৷
এই অভিযোগের এখন তদন্ত চলছে৷ সে কারণে গত নভেম্বর মাসে ডক্টর ও'কে বরখাস্ত করেছে তাঁর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ এছাড়া ‘ডক্টর ও' আগে যে হাসপাতালে কাজ করতেন সেখানকার সংশ্লিষ্ট প্রধানকেও বরখাস্ত করা হয়েছে৷
রেগেনসবুর্গ হাসপাতালের ডাক্তার ও পুলিশ মিলে সেই হাসপাতালে করা ২৩টি লিভার প্রতিস্থাপনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখছেন৷ তাঁরা দেখতে চাইছেন, যেসব রোগী লিভার নিয়েছেন তাঁরা ঠিক নিয়ম পালন করেছেন কিনা৷ ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে এসব প্রতিস্থাপনের কাজ হয়েছে৷ এর মধ্যে ২০০৫ সালে জর্ডানের বেশ কয়েকজন নাগরিকের দেহে লিভার প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
তবে অঙ্গ নেয়ার জন্য কাউকে হত্যা করা হয়েছে কিনা - সেরকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ এছাড়া দাতাদের কাছ থেকে জোরপূর্বকভাবে অঙ্গ নেয়া হয়েছে বলেও কোনো প্রমাণ মেলেনি৷
কিন্তু এসব ঘটনায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ অনেকে মনে করছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকার কারণে অসাধু চিকিৎসকরা সেটার সুযোগ নিচ্ছেন৷
‘ইউরোট্রান্সপ্ল্যান্ট' নামের একটি ফাউন্ডেশনের সদস্য জার্মানি৷ আরও ছয়টি দেশ রয়েছে এর মধ্যে৷ এই ফাউন্ডেশন সিদ্ধান্ত নেয় কোন রোগীর কখন অঙ্গ প্রতিস্থাপন দরকার৷
কিন্তু অনেকে মনে করছেন ব্রিটেন আর ফ্রান্সের মতো জার্মানির নিজস্ব একটি সংস্থা থাকা উচিত৷ সেখানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ডাক্তার নয়, এমন ব্যক্তিও থাকতে হবে৷
কোলন শহরের আইনের এক অধ্যাপক ভল্ফরাম হ্যোফলিং মনে করেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়াটা শুধু চিকিৎসকদের বিষয় নয়, অনেকটা রাজনৈতিকও৷ তিনি বলেন, কেউ যদি বেশি বেশি মদ্যপান করে লিভার নষ্ট করে ফেলে তাকে নতুন লিভার দেয়া যায় কিনা, সেটা ভেবে দেখতে হবে৷
তবে জার্মানির চিকিৎসকদের নেতা ফ্রাঙ্ক উলরিশ মোন্টগোমেরি বলছেন, বর্তমান ব্যবস্থা ঠিকই আছে৷ শুধু প্রয়োজন এটাকে আরেকটু নিখুঁত করে নেয়া৷ তবে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন অঙ্গ৷ কেননা চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত অঙ্গ পাওয়া যাচ্ছে না৷
সরকারি হিসেবে, গত বছর জার্মানিতে প্রায় ১২০০ জন রোগীর দেহে লিভার প্রতিস্থাপনের কাজ হয়েছে৷ আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি চারজন জার্মানের একজন একটা ফর্মে সই করে রেখেছেন৷ এর ফলে তাঁরা যদি হঠাৎ করে তরুণ বয়সে মারা যান, তাহলে তাঁদের অঙ্গ আরেকজনকে দেয়া যেতে পারে৷
জেডএইচ / ডিজি (ডিপিএ)