জার্মান নির্বাচন: সম্ভাব্য রাজনৈতিক জোট
৪ জুন ২০১৭ভোটের প্রচারণায় এখানে ভোটারদের নিয়ে চলে টানাটানি৷ এক দল অন্য দলের নির্বাচনি ইশতেহার ও নীতির সমালোচনায় নামেন কোমর বেঁধে৷ কিন্তু প্রচারণা শেষ হলেই সেই হিসাব পাল্টে যায়৷ তখন রাজনৈতিক দলগুলো মিত্র খোঁজা শুরু করে৷
এই সমঝোতায় চলে নানা হিসাব-নিকাশ৷ অনেক সময় এর সমাধান কয়েক সপ্তাহেও পাওয়া যায় না৷ হিসাবে মিললে রাজনৈতিক সমাঝোতা করে চুক্তি হয়৷
আইনসভায় ওই জোটকে কোন ভূমিকায় দেখা যাবে-সেটা থাকে ওই চুক্তিতে৷ এটাই পরের বছরগুলোতে রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়৷
সব রাজনৈতিক দলই এই চুক্তির সময় ভোটারদের কাছে করা তাদের অঙ্গীকারকে প্রাধান্য দিতে চায়৷ যেহেতু এটা সমঝোতা চুক্তি, যেখানে ছাড়ও দিতে হয়৷ তাই চুক্তির পর যে অঙ্গীকারগুলো রাখা যাচ্ছে না, সেগুলোর দায় সহযোগীদের উপর চাপিয়ে দেয় তারা৷
কালো-লালে মহাজোট
মহাজোট বলতে সাধারণত জার্মানির সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের জোটকে বোঝানো হয়৷ দল দুটি হচ্ছে, খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি)৷
এই দুই দলের জোটকে অনেকেই নিরাপদ বিকল্প হিসাবে দেখেন৷
কেন্দ্রীয় সরকারে বর্তমানে এই জোটের পক্ষ থেকেই আঙ্গেলা ম্যার্কেল নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ আর রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন এসপিডি থেকে৷
ম্যার্কেলের টানা এই তৃতীয় মেয়াদের আগে প্রথম মেয়াদেও এই জোটই জার্মানি শাসন করেছে৷ এই সময়ে জোটসঙ্গী যেই হোক, চ্যান্সেলর এবং অর্থমন্ত্রীর পদ নিয়েছে সিডিইউ'ই৷
তবে নির্বাচন আসলেই এসপিডি তাদেরকে যথাযথ বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে কোমর বেঁধে মাঠে নামে৷
সাধারণভাবে বলতে সিডিইউ বলা হলেও সেখানে আরেকটি দল রয়েছে৷ এটি হচ্ছে সিডিইউ'র সহযোগী সংগঠন খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন (সিএসইউ)৷
বাভারিয়া রাজ্যে সিডিইউ নেই৷ সেখানে শুধু সিএসইউ কাজ করে থাকে৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বাস্তু ইস্যু নিয়ে দুই দলের মতভেদ স্পষ্ট হয়েছে৷
কালো-হলুদ
খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং মুক্ত গণতন্ত্রী দলের (এফডিপি) এই জোট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল৷ সর্বশেষ ম্যার্কেলের ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে এই জোট জার্মানি শাসন করে৷ ১৯৮২-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের আমলে পাঁচটি মন্ত্রিসভায়ই ছিল এফডিপি৷
এই দুই দলের জোট অনেক জার্মানের কাছেই বেশ অর্থবহ৷ জার্মানির রক্ষণশীল খ্রিষ্টান মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে সিডিইউ৷ অন্যদিকে এফডিপি নগরে বাস করা ব্যবসা-বান্ধব তরুণ, মুক্ত বাজার উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করে৷
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এফডিপির ব্যর্থতার পর আপাতত এই জোটকে ক্ষমতার কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে না৷ জার্মানির কোনো রাজ্যেও এই দুই দল জোটগতভাবে নেতৃত্বে নেই৷
লাল-সবুজ
এসপিডির চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্রোয়েডারের আমলে (১৯৯৮-২০০৫) এই জোট জার্মানির নেতৃত্ব দিয়েছে৷ ২০১৩ সালের সংসদ নির্বাচনে এই দুই দলের মিলিত ভোট এবং আসনের চেয়ে সিডিইউ বেশি ভোট ও আসন পেয়েছে৷
সাধারণত ধরে নেয়া হয়, এসপিডির সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে বয়স্ক বামপন্থি, শ্রমজীবী শ্রেণি, ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যরা৷ আর প্রগতিশীল শহুরে বামপন্থিরা সবুজ দল করে৷ সুতরাং তাদের একটা জোট হতে পারে৷ তবে এই ফর্মুলা ২০০৩ সালেও খাটেনি৷ ওই সময় তারা নব্য-উদারীকৃত শ্রম সংস্কার কর্মসূচি নিয়েছে৷ যার ফলে তাদের অনেক সমর্থন বামদলে চলে যায়৷
লাল-লাল-সবুজ
সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি), বাম এবং সবুজ দলের এই জোট আগে জাতীয় পর্যায়ে দেখা যায়নি৷
পূর্ব জার্মানির একনায়কতন্ত্রের গন্ধ থেকে এখনো বামদল মুক্ত হতে পারেনি৷ এ কারণে অন্য দলগুলো এদের সাথে জোট করতে উৎসাহী হয় না৷ তাছাড়া দলটি ন্যাটো ত্যাগ করতে চায়৷ এটা জার্মানির মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বিগড়ে দিতে পারে বলে অন্য দলগুলোর আশঙ্কা৷
এত সবের মধ্যেও গত সেপ্টেম্বরে জার্মানির রাজধানীতে এই জোট সফলতা পেয়েছে৷ ফলে জাতীয় পর্যায়ে এই জোট হওয়ার পথ খুলেছে৷
জ্যামাইকা জোট: সিডিইউ, এফডিপি ও গ্রিন পার্টি
জার্মানির রক্ষণশীল দলগুলোর কাছে বামপন্থি দলগুলোর মধ্যে সবুজ দলেরই গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি৷ কারণ সবুজ দলের ভোটারদের মধ্যে সাধারণত শ্রমিক শ্রেণির ভোটাররা পড়েন না৷
কালো-হলুদ-সবুজের এই জোট কখনো কেন্দ্রীয় সরকারে ছিল না৷ তবে তারা ২০০৯-২০১২ সাল পর্যন্ত সারল্যান্ড নামে একটি রাজ্য শাসন করেছে৷ এই জোটের বিভিন্ন স্থানীয় জেলা পরিষদও শাসন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷
‘ট্রাফিক লাইট' জোট
ট্রাফিক লাইটে লাল আর সবুজের মাঝে যেমন হলুদ থাকে, তেমনি এসপিডি ও সবুজ দল এমন একটা দলকে সহযোগী হিসাবে চায়, যে দল তাদের মূল পরিকল্পনায় বাঁধ সাধবে না৷ কিন্তু তাদেরকে ক্ষমতায় যেতে সহযোগিতা করতে পারবে৷
এফডিপির সাবেক নেতা গিডো ভেস্টারভেলে জাতীয় পর্যায়ে এমন জোটকে নাকচ করে দিয়েছেন৷ কারণ দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য অনেক৷
লাল-কালো-সবুজের কেনিয়া জোট
এসপিডি, সিডিইউ এবং সবুজ দলের রং লাল-কালো-সবুজ৷ কেনিয়ার জাতীয় পতাকায়ও এই রং ব্যবহার করা হয়৷ এ কারণে সম্ভাব্য এই জোটকে কেনিয়া জোট বলা হয়৷ এই তিন রং দিয়ে আফগানিস্তানেরও পতাকা হয়৷ তাই এই জোটকে আফগানিস্তান জোট বলেও অনেকে ডাকেন৷
সংসদে সব সময়ই এসপিডি ও সিডিইউ'র প্রতিনিধিত্ব ৫০ শতাংশের বেশি থাকে৷ আর সবুজ দলকে পরিবেশ মন্ত্রণালয় দিলেই তারা সন্তুষ্ট থাকে৷
সরকার গঠনে এই তিন দলের জোট হওয়ার মত প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি হয় না৷ গত বছর স্যাক্সোনি-আনহাল্ট রাজ্যে এসপিডির ভরাডুবির পর সেখানে কিছুটা এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ ওই সময় রাজ্যটিতে ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' বা এএফডি দল হঠাৎ করেই বেশ সামনে চলে আসে৷
জার্মানির রাজনৈতিক দল নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷ আমরা উত্তর দেবো...