জার্মানির ‘ক্ল্যাসিকো’
২৩ নভেম্বর ২০১৩খেলাটা তো আর যে কোনো খেলা নয়: যেন গত মরশুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল! বুন্ডেসলিগাতেও বায়ার্নের একাধিপত্য চ্যালেঞ্জ করার মতো আপাতত একটি দলই চোখে পড়ে: তারা হলো বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ পয়েন্টের তালিকায় পেপ গুয়ার্দিওলার বায়ার্ন মিউনিখ চার পয়েন্টে এগিয়ে থাকলেও, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডর্টমুন্ড৷
কিন্তু শনিবারের খেলার কি হবে? তা নিয়েই এখন ডর্টমু্ন্ডের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের মাথাব্যথা৷ সেন্টার-ব্যাক মাট্স হুমেল্স আর লেফট-ব্যাক মার্সেল শ্মেলৎসার আন্তর্জাতিক খেলা থেকে চোট নিয়ে ফিরেছেন৷ সেন্টার-ব্যাক নেভেন সুবোটিচ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে ছ'মাসের জন্য আউট৷ রাইট-ব্যাক লুকাজ পিসেক সবে অস্ত্রোপচারের পর ট্রেনিং শুরু করেছেন৷
অর্থাৎ, বায়ার্নের বিরুদ্ধে খেলায় ডর্টমুন্ডের ব্যাক লাইনের চারজনই আউট-অফ-অ্যাকশন৷ সাধে কি ক্লাব-প্রধান হান্স-ইওয়াখিম ভাটৎস্কে বলেছেন: এটা একটা বিপর্যয়৷....একজন ডিফেন্ডার, মিডফিল্ডার কিংবা স্ট্রাইকারকে বদলানো যায় – কিন্তু ব্যাক লাইনের গোটা চারজন?'' সাধে কি কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ বলেছেন, তাঁর ‘‘আশি শতাংশ চুল পেকেছে শুধু এই এক সপ্তাহে''৷
এমনকি ক্লপ জার্মানির সাবেক জাতীয় খেলোয়াড়, ৩৪ বছর বয়সি ডিফেন্ডার মানুয়েল ফ্রিডরিশকে সিজনের শেষ অবধি চুক্তিবদ্ধ করেছেন৷ ফ্রিডরিশ হয়ত খেলবেন গ্রিক ইন্টারন্যাশনাল সক্রাটিস পাপাস্টাথোপুলোসের সঙ্গে জুটি হিসেবে সেন্টার-ব্যাকে৷ লেফট-ব্যাক থাকবে খুব সম্ভবত তরুণ এরিক ডুর্ম৷ রাইট-ব্যাকে থাকবে কেভিন গ্রোসক্রয়েৎস৷
বায়ার্নের ফ্রাংক রিবেরি তাঁর দশম পাঁজরের চোট নিয়ে বাদ পড়ছেন বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও বায়ার্নের কোনোকালেই ডর্টমুন্ডের মতো হাঁড়ির হাল হতে পারে না – যত ইনজুরিই হোক না কেন৷ বায়ার্নের আছে ইংরিজিতে যাকে বলে ‘স্ট্রেন্থ্ ইন ডেপ্থ', অর্থাৎ প্রতিটি পজিশনে তাদের বিকল্প প্লেয়ার আছে, এবং সেই বিকল্প প্লেয়ারদের মান বহুক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড প্লেয়ারদের চেয়ে কিছুমাত্র কম নয়৷
যেমন রিবেরি বাদ পড়লেও গুয়ার্দিওলা রিবেরির জায়গায় জার্মান জাতীয় খেলোয়াড় মারিও গোয়েটৎসে কিংবা সুইশ জাতীয় খেলোয়াড় শেরদান শাকিরিকে নামাতে পারেন৷ গোয়েটৎসেকে নামানোর অবশ্য বিপদ আছে, কেননা গোয়েটৎসে এই ডর্টমুন্ড ছেড়েই বায়ার্নে গিয়েছেন, যেটা ডর্টমুন্ড ফ্যানদের বিশেষ পছন্দ হয়নি৷ ২১ বছর বয়সি উঠতি তারকা অবশ্য বলছেন, ডর্টমুন্ডের হলদে জার্সির পরিবর্তে বায়ার্নের লাল জার্সি চড়িয়ে ভেস্টফালেন স্টেডিয়ামে মাঠে নামতে তাঁর ভয় করবে না৷ তা সত্ত্বেও ডর্টমুন্ড তথা জার্মানির সাবেক গোলকিপার ইয়েন্স লেমান নাকি গোয়েটৎসেকে পরামর্শ দিয়েছেন, থ্রো অথবা কর্নার না করতে, এছাড়া ডর্টমুন্ডের ফ্যানদের কাছ থেকেও দূরে থাকতে৷
খেলার ফলাফল কি হবে? বলা শক্ত৷ ডর্টমুন্ডের যা ডিফেন্স, তার একক সদস্যরা একত্রে বিশটা গেম খেলেছে কিনা সন্দেহ৷ অন্যদিকে বায়ার্ন বুন্ডেসলিগায় ডর্টমুন্ডকে শেষবার হারিয়েছিল ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে৷ কিন্তু গত মরশুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে বায়ার্ন ঠিকই ডর্টমুন্ডকে হারায়৷ এছাড়া ফুটবল আর ঘোড়দৌড়ের মধ্যে আসল মিলটা হলো, হারজিত পুরোপুরি পরিসংখ্যানের ব্যাপার নয়৷ ‘স্পিরিট' বা প্রেরণা বলেও একটা কথা আছে৷
সেটা বায়ার্ন এবং ডর্টমুন্ড, উভয় দল ও তাদের সমর্থকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এই যা মুশকিল!
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)