জার্মানির চিড়িয়াখানার অভিনব পরিবেশ
২০ ডিসেম্বর ২০১৬এক ঝাঁক স্কুইরেল মাংকিস বা কাঠবিড়ালি বানর, সবাই পুরুষ৷ লাইপসিশ শহরের চিড়িয়াখানায় তারা নিজেদের পরিচিত রেন ফরেস্টের পরিবেশে দিব্যি লম্ফঝম্প করতে পারে৷
শুধু মাথার উপর একটা ছাদ রয়েছে৷ বিশেষভাবে তৈরি সেই ঝুলন্ত ছাদের মাপ দু'টি ফুটবল মাঠের চেয়েও বড়ো৷ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্রে এই কাজকে অসাধারণ বলতেই হয়৷ গাছপালা ও প্রাণীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অতি-বেগুনি রশ্মি স্বচ্ছ এই ছাদের তিনটি স্তর ভেদ করতে পারে৷ অন্যদিকে উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে নিখুঁত থার্মাল ইনসুলেশনের ব্যবস্থাও করে৷
রেন ফরেস্টের আর্দ্র ও গরম পরিবেশ পেয়ে এশীয় টেপির-রাও উৎফুল্ল৷ খাবার বিতরণের সময় তাদের মধ্যে প্রেমের ডাকও চলছে৷ ইউরোপের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা থেকে পুরুষ ও নারী টেপির এখানে আনা হয়েছে৷ উন্মুক্ত পরিবেশে তারা বিলুপ্ত হতে চলেছে৷ লাইপসিশ চিড়িয়াখানার প্রধান ড. ইয়র্গ ইউনহল্ট বলেন, ‘‘চিড়িয়াখানা আজ আর শুধু চিড়িয়াখানা নয়৷ এখানকার প্রাণীগুলিকে আমরা বাইরের জগতে তাদের লুপ্তপ্রায় বা বিপন্ন প্রজাতির দূত হিসেবে দেখি৷''
চিড়িয়াখানার ‘ট্রপিকাল হল' অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে সাজানো হয়েছে৷ বৃষ্টির পানি জমিয়ে তা ব্যবহার করা হয়৷ সৌরশক্তি জমিয়ে রাখা হয়৷ এর পরেও তাপমাত্রা বেশি বেড়ে গেলে ছাদের কিছু অংশ খুলে তাজা বাতাস ঢোকানোর ব্যবস্থা আছে৷ জটিল এই প্রযুক্তির দায়িত্বে রয়েছেন রাসেম বাবান৷ প্রায় দু'টি বাড়ির সমান জায়গা জুড়ে তাঁর কর্মকাণ্ড চলে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আবহাওয়ার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করতে হয়৷ কখনো বৃষ্টি নামাতে, কখনো আর্দ্রতা বাড়াতে হয়, যথেষ্ট সূর্যালোকেরও ব্যবস্থা করতে হয়৷
এমন পরিবেশে বংশবৃদ্ধি তরান্বিত হয়৷ মাসছয়েক পরেই ভোঁদড়-দম্পতির সন্তান এসেছে৷ সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ শুধু খাবারের ভাগাভাগি নিয়ে তাদের ঝগড়া হয়৷ ড. ইয়র্গ ইউনহল্ট বলেন, ‘‘আমি খুব খুশি৷ প্রত্যেকটি ব্রিডিং সফল হলে, সন্তান এলে স্বাগত জানাই৷ এখানে আমরা শুধু কিছু বিচ্ছিন্ন প্রাণী রাখি না, সুস্থ সামাজিক পরিবেশ তৈরি করি৷ বংশবৃদ্ধিও তার মধ্যে পড়ে৷''
আবার নতুন করে আনন্দের কারণ ঘটেছে৷ সাদামুখো পাইথেসিড বানরের ঘরেও সন্তান এসেছে৷ জঙ্গলের এমন আদর্শ পরিবেশ তৈরি করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে৷ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ফ্লোরিডা থেকে প্রায় ৫০০ ধরনের গাছপালা আনা হয়েছে৷ তবে সরাসরি জঙ্গল থেকে নয়, বিভিন্ন গ্রিনহাউস ও পথের ধার থেকে সে সব সংগ্রহ করা হয়েছে৷
এই চিড়িয়াখানায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরিসৃপ কমোডো ড্র্যাগনও রয়েছে৷ গোটা জার্মানিতে একমাত্র লাইপসিশ শহরের চিড়িয়াখানায় এই বিরল প্রাণী রাখার অনুমতি রয়েছে৷ ড. ইউনহল্ট বলেন, ‘‘এমন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করতে পেরে আমরা খুশি৷ শীঘ্রই গোটা ইউরোপে আরও কমোডো ড্র্যাগন দেখা যাবে৷''ইউরোপের সবচেয়ে বড় ট্রপিকাল হলে মানুষ ও প্রাণীর আনন্দের শেষ নেই৷