1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির দলীয় রাজনীতির জগতে ছন্দপতন

৩ নভেম্বর ২০২৩

জার্মানিতে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিরোধীদের উপর নিপিড়ন বা নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনা এতকাল অভাবনীয় ছিল৷ কিন্তু চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির উত্থান বর্তমানে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে৷

https://p.dw.com/p/4YMZ3
জার্মানির অভিবাসনবিরোধী চরম দক্ষিণপন্থি দল এএফডি৷
জার্মানিতে অভিবাসনবিরোধী চরম দক্ষিণপন্থি দল এএফডির উত্থান অস্থিরতা সৃষ্টি করছে৷ছবি: Sachelle Babbar/ZUMAPRESS/picture alliance

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে দলীয় রাজনীতির চরিত্র দেখলে প্রায়ই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এটাই কি প্রকৃত গণতন্ত্র? জনসাধারণের ভোটে কোনো সরকার ক্ষমতায় এলেই কি গণতন্ত্রের শর্ত পূরণ করা যায়? সরকারি দলই যদি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো খর্ব করে নিজস্ব স্বার্থে ‘কলকাঠি নাড়াতে’ পারে, তাহলে সেই শাসনব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থা থাকবে কী করে!

বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশই বোধহয় নিজেদের ‘নিখুঁত’ হিসেবে দাবি করতে পারে না৷ তবে সেই সব খুঁত দূর করতে অবিরাম তর্কবিতর্ক, আইন প্রণয়ন ও উন্নতির প্রয়াস চলতে থাকলে সেই গণতন্ত্রকে ‘জীবন্ত’ বলা চলে৷ গত শতাব্দীতে নাৎসি দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জার্মানিতে ক্ষমতায় এলেও ছলে-বলে-কৌশলে বিরোধী দল, বিরোধী মত, সব রকম বিরোধিতা নৃশংসভাবে স্তব্ধ করে দেশবিদেশে ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছিল৷ মানবজাতির ইতিহাসে অভূতপূর্ব ইহুদি নিধনযজ্ঞের পাশাপাশি সংহিসতা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সেই অশুভ শক্তি জার্মানির বাকি রাজনৈতিক দলগুলির কণ্ঠও স্তব্ধ করে দিয়েছিল৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সঙ্কুচিত জার্মানির বিভাজনের জের ধরে দুই অংশে একেবারে ভিন্ন রাজনৈতিক ‘এক্সপেরিমেন্ট’ শুরু হয়৷ কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নের মতোই অগণতান্ত্রিক একদলীয় শাসনতন্ত্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে নাগরিকদের অধিকার সীমিত রেখেছিল৷ অন্যদিকে মিত্রশক্তির তিন দেশ – অ্যামেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিকে গণতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেও দেশটিকে অনেককাল পুরোপুরি সার্বভৌম হতে দেয় নি৷ হিটলারের কীর্তিকলাপের পুনরাবৃত্তি এড়াতে দেশের শাসনব্যবস্থার যতটা সম্ভব বিকেন্দ্রিকরণও নিশ্চিত করা হয়েছিল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্তর থেকে অনেক ক্ষমতা ধীরে ধীরে ব্রাসেলসের হাতে চলে গেছে৷

সেই পশ্চিম জার্মানির দলীয় রাজনীতিতেও কোনো একটি দল একছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে নি৷ দুই প্রধান দলের নেতৃত্বে বার বার জোট সরকার গড়তে হয়েছে৷ ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলির ক্ষমতার বণ্টনের বেড়াজালে জার্মানির কোনো চ্যান্সেলর বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করার তেমন সুযোগ পান নি৷ ১৯৯০ সালে দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পরেও সেই প্রবণতা চলে আসছে৷ রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য থেকে গেছে৷

সেই ‘স্থিতিশীল' যুগ আর নেই৷ এই মুহূর্তে জার্মানির দলীয় রাজনীতির কাঠামো নাড়িয়ে দিচ্ছে চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দল৷ মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি সঙ্ঘবদ্ধভাবে এই দলের উত্থান এড়ানোর চেষ্টা করেও বিফল হয়েছে৷ জনমত সমীক্ষায় বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এএফডি৷ অদূর ভবিষ্যতে আরো এক বামঘেঁষা পপুলিস্ট দল জার্মানির রাজনৈতিক আঙিনায় আরো বিঘ্ন ঘটাতে পারে৷ এমন সব দল জার্মান সংবিধানের সীমারেখা ভাঙতেও দ্বিধা করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

সঞ্জীব বর্মন, ডয়চে ভেলে বাংলা৷
সঞ্জীব বর্মন, ডয়চে ভেলে বাংলা৷ছবি: Philipp Böll/DW

এখন প্রশ্ন হলো, এমন ‘সংবিধান-বিরোধী' রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র তথা ক্ষমতাসীন সরকার কতটা তৎপর হতে পারে? বিপুল জনসমর্থন সত্ত্বেও এমন দলের নেতাদের কার্যকলাপে বাধা দেওয়াই বা কতটা ন্যায্য? জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এএফডি দলের কিছু নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং কিছু ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপের পথ সুগম করে দিচ্ছে৷ ফলে সেই দল সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ আনছেন৷ দলের মিটিং-মিছিলের উপর রাষ্ট্রের কড়া নজর ও পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করছে এএফডি৷ দমননীতির বদলে রাজনৈতিকভাবে এমন শক্তির মোকাবিলা করা উচিত বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ৷ এমন টানাপড়েনের ফলে শেষ পর্যন্ত জার্মানির রাজনীতি জগত কোন পরিণামের দিকে এগোয়, আপাতত সেই দিকেই সবার নজর৷