৬০ বছর ধরে অপরিবর্তিত
২০ আগস্ট ২০১৩কী করে এই সংসদের সদস্য হওয়া যায়? বার্লিনে বুন্ডেসটাগ দেখতে এসে এক দর্শক একবার প্রশ্ন করেছিলেন গাইডকে৷ গাইডের উত্তর: বুন্ডেস্টাগে ৬০০টি আসন আছে৷ কিন্তু তার একটা পেতে হলে সর্বাগ্রে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়াটাই বোধহয় ভালো৷
কোনো একক ব্যক্তি – আমরা যাকে বলবো নিরপেক্ষ কিংবা নির্দলীয় – তেমন কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে বুন্ডেস্টাগে আসন জয় করতে হলে বিস্তর ভোট পেতে হবে৷ সংবিধানে যাই থাক না কেন, বস্তুত আজ জার্মানিতে রাজনৈতিক দলগুলিই নির্ধারণ করে, কে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে৷
নির্বাচনের কে ও কা-কে
কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সি জার্মান নাগরিকরা ভোট দিতে পারেন, সব মিলিয়ে বর্তমানে ছ'কোটি আঠেরো লাখ ভোটার৷ এবার তাদের মধ্যে থাকবেন ৩০ লাখ নতুন ভোটার, যারা প্রথমবার ভোট দিচ্ছেন৷ এ সবই ফেডারাল পরিসংখ্যান কার্যালয়ের দেওয়া খবরাখবর, যার প্রধান যুগপৎ সংসদীয় নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে৷
সব রাজনৈতিক দলকে এই ফেডারাল নির্বাচন পরিচালকের কাছে পেশ হতে হবে৷ সংবিধান, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি আনুগত্য থাকলে কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া চলবে না৷ কাজেই ২২শে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে মোট ৩৪টি রাজনৈতিক দল ভোটে দাঁড়াচ্ছে৷ বর্তমানে তাদের মধ্যে মাত্র ছ'টি দল সংসদে উপস্থিত: সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি, এফডিপি, সবুজ দল ও বামদল৷
৬০ বছরে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি
গত শতাব্দীর বিশের দশকে – তথাকথিক ভাইমার রিপাবলিকের আমলে – বহু ছোট রাজনৈতিক দলকে মিলিয়ে জোট সৃষ্টির প্রচেষ্টার বিভীষণ অভিজ্ঞতার পর ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের সংবিধান রচয়িতারা একটি পাঁচ শতাংশ ন্যূনতম ভোটের বেড়া রাখার সিদ্ধান্ত নেন৷ এর অর্থ, সংসদে আসনগ্রহণ করার জন্য যে কোনো দলকে প্রদত্ত ভোটের অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোট পেতে হবে৷
অপরদিকে প্রদত্ত ভোটের অনুপাতই যা-তে একমাত্র মাপকাঠি না হয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনি এলাকা ও প্রার্থী ভিত্তিক নির্বাচনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ ভোটাররা যেন তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ পায়, এটাই ছিল বুনিয়াদি ধারণা৷ কাজেই প্রতি ‘ভালক্রাইজ' বা নির্বাচনি এলাকা থেকে মাত্র একজন প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারেন৷ জার্মানিতে প্রায় ২৯৯টি এ ধরনের ‘ভালক্রাইজ' আছে৷
অপরদিকে ভোটাররা তাদের ‘দ্বিতীয় ভোট'-টি দিয়ে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলকে ‘নির্বাচন' করতে পারেন৷ এভাবে প্রদত্ত ভোটগুলিও সংসদে ঐ দলটির আসনে পরিবর্তিত হবে৷ এভাবে ভোটাররা সংসদে রাজনৈতিক দলগুলির মোট আসনসংখ্যার উপর তাদের প্রভাব জারি করতে পারে৷ সংসদে একটি রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত আসনসংখ্যা নির্ধারিত হবে ‘প্রথম ভোট' ও ‘দ্বিতীয় ভোট'-এর পরিমাণ ও অনুপাত থেকে৷ যদিও ‘দ্বিতীয় ভোট'-এর ক্ষেত্রে কে অথবা কারা যে সেই টিকিটে সংসদে আসন নেবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা ভোটারদের নেই৷
সমালোচিত নির্বাচন পদ্ধতি
এটা কি ধরনের গণতন্ত্র, যদি রাজনৈতিক দলগুলি সংসদে তাদের অর্ধেক প্রতিনিধিদের নাম-ধাম নিজেরাই ঠিক করতে পারে? এ সমালোচনা বারংবার শোনা গেছে৷ প্রাক-নির্বাচনী দলীয় সম্মেলনে – যেখানে দলের সব সদস্য হাজির নেই, হাজির থাকার সম্ভাবনাও নেই – সেখানে দলের সম্ভাব্য সংসদ সদস্যদের যে তালিকা তৈরি হয়, সেই ‘লিস্টে' ওপরের দিকে নাম না থাকলে, সাংসদ হবার আশা কম৷ কাজেই ভোটার তার ‘দ্বিতীয় ভোট' দিয়ে যে ঠিক কা-কে সংসদে পাঠাচ্ছে, সেটা সে নিজেই জানে না৷
প্রথম আর দ্বিতীয় ভোটের পারস্পরিক প্রভাব নিয়েও গোলমাল আছে৷ কোনো দল হয়ত দ্বিতীয় ভোট বিশেষ পায়নি, কিন্তু প্রথম ভোটে জিতে একাধিক আসন পেয়েছে৷ ওদিকে দ্বিতীয় ভোট কম থাকার ফলে দলটির মোট আসনসংখ্যা কমে যেতে পারে৷ জার্মান সাংবিধানিক আদালত এই প্রক্রিয়ার বিভিন্ন খুঁটিনাটিকে সংবিধান বিরোধী বলে ঘোষণা করে – তা-ও আজ নয়, ২০০৮ সালে৷ ফলে কিছু কিছু সংশোধনও করতে হয়৷ তবুও সব মিলিয়ে জার্মানিতে আজ ‘পার্টিগুলোর শাসন' চলেছে, বলেই সমালোচকদের অভিযেোগ৷