জার্মানির বিশপ পোপের কাছে
১৭ অক্টোবর ২০১৩২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল অবধি বিশ্বের অন্যান্য নানা দেশের ক্যাথলিক গির্জার মতোই জার্মানির ক্যাথলিক গির্জাকেও শিশুদের যৌন অপব্যবহার সংক্রান্ত কেলেংকারির ধাক্কা সামলাতে হয়৷ তার পর পরই এসে পড়ে লিমবুর্গের বিলাসী বিশপকে নিয়ে কেলেংকারি৷
বিশপের গির্জা সংলগ্ন বাসভবনের সংস্কারের জন্য যেখানে পাঁচ লাখ ইউরো পরিমাণ খরচ ধরা হয়েছিল, সেখানে সেই খরচ শেষমেষ গিয়ে দাঁড়াতে চলেছে প্রায় চার কোটি ইউরোয়! তার মধ্যে নাকি শুধু কাঠ খোদাইয়ের কাজের জন্যই আছে ৩০ লাখ ইউরো, কিংবা বিশপের বাথটবের জন্য ১৫ হাজার ইউরো৷
বিশপস ক্যান্ডলস্টিক্স
সেই বিশপই নাকি আবার বিমানে ফার্স্ট ক্লাসে চড়ে ভারতে দরিদ্রদের দেখতে গেছেন – এবং ফিরে আসার পর আদালতে সত্যের অপলাপ করে এখন সরকারি কৌঁসুলির মামলার প্যাঁচে পড়তে চলেছেন৷ লিমবুর্গবাসীরা তাদের বিশপের পদত্যাগ কিংবা অপসারণ দাবি করছে৷ বিশপ টেবার্টস স্বয়ং রোমে গেছেন পোপ ফ্রান্সিস কি বলেন, তাই শুনতে৷ আরো বড় কথা, জার্মানির বিশপ সম্মেলনের প্রধান বিশপ জলিচ-ও রোমে গেছেন ঠিক একই সময়ে – এবং বিশপ জলিচ ইতিমধ্যেই, প্রায় প্রত্যক্ষভাবে, বিশপ টেবার্টসের সমালোচনা করেছেন৷
মুশকিল এই যে, ক্যাথলিক গির্জার বিশপদের ইচ্ছে থাকলেই বরখাস্ত করা যায় না, কেননা বিশপদের কর্তৃত্ব আসে নাকি স্বয়ং ঈশ্বরের কাছ থেকে৷ কাজেই পোপ যদি এখন বিশপ টেবার্টসকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াতে রাজি করাতে পারেন, তবেই রক্ষা৷ নয়ত জার্মানির ক্যাথলিক গির্জার বিপদ ঘনাচ্ছে অন্য আরেক দিক থেকে: সেটি হলো বিশ্বাসীদের গির্জা পরিত্যাগ এবং তার ফলশ্রুতিস্বরূপ ‘‘গির্জা-কর'' প্রদান বন্ধ করা৷
তাই নিয়ে কাড়াকাড়ি
২০১০ সালে লিমবুর্গে ২৯৫ জন ক্যাথলিক গির্জা ছাড়েন৷ সে তুলনায় শুধুমাত্র গত বৃহস্পতিবারে লিমবুর্গের ক্যাথলিক গির্জা থেকে বেরিয়ে এসেছেন ১৮ জন বিশ্বাসী; শুক্রবারে গির্জা ছাড়েন আরো ১৮ জন; সোমবার গির্জাত্যাগীদের সংখ্যা দাঁড়ায় একদিনে ২৯ জন৷ লিমবুর্গ তথা জার্মানিতে গির্জার করদাতাদের সংখ্যা এভাবে কমতে থাকলে কি ঘটতে পারে, তা বোঝার জন্য ক্যাথলিক গির্জার আয়ের দিকটা একবার দেখতে হয়৷
২০১২ সালে জার্মানির দু'কোটি ত্রিশ লাখ ক্যাথলিক তাদের গির্জাকে প্রায় ৫২০ কোটি ইউরো কর দেন: এই গির্জা কর করারোপযোগ্য আয়ের আট থেকে দশ শতাংশ৷ এছাড়া গতবছর জার্মানির ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট গির্জা মিলিয়ে রাষ্ট্রের কাছ থেকে ৪৬ কোটি ইউরো অনুদান পেয়েছে, যাকে বলা হয় ‘ডোটেশন'৷ ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন গির্জার অনেক সম্পত্তি অধিগ্রহণ করার পর রাষ্ট্রের সঙ্গে গির্জার যে ক্ষতিপূরণ চুক্তি হয়, সেই চুক্তির বশেই জার্মানিতে গির্জাগুলি আজও ‘ডোটেশন' পেয়ে আসছে৷ এবং আজও সেই ডোটেশন দেওয়ার কিংবা পাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে কিনা, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা গভীর সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন৷
এসি/ডিজি (এএফপি)