জার্মানির শেষ, বাংলাদেশের শুরু
২০ জুলাই ২০১৫বলা যেতেই পারে – একজনের যেখানে শেষ, অপরজনের সেখানে শুরু৷ পরমাণু কেন্দ্রের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে জার্মানি বছর চার আগেই তাদের সব পারমাণবিক কেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে৷ বিকল্প হিসেবে তারা এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ ইতিমধ্যে বেশ এগিয়েও গেছে তারা৷ ফলে ২০২২ সালের মধ্যে পারমাণবিক কেন্দ্র বন্ধ করার কারণে বিদ্যুতের যে সম্ভাব্য ঘাটতি হতে পারে, সেটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে মেটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
মূলত বায়ু, বায়োগ্যাস আর সৌরশক্তি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করছে জার্মানি, যেগুলোর কোনো কমতি নেই বাংলাদেশে৷ ফলে চেষ্টা করলে বাংলাদেশও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে এগিয়ে যেতে পারে৷ সেটা অবশ্য হচ্ছেও, বিশেষ করে সৌরশক্তি ব্যবহারে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশের মানুষের সৌরশক্তি ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রশংসাসূচক প্রতিবেদনও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে৷ সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত চেষ্টার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে৷ দু'পক্ষকেই এ জন্য ধন্যবাদ৷
তবে এর মধ্যে একটি সংবাদে একটু আশঙ্কা অনুভব করছি আমি৷ সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশ তাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন পরিকল্পনায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে৷ পাবনার রূপপুরে স্থাপিত হতে যাওয়া ঐ কেন্দ্র থেকে ২০২১ সালে প্রথম বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
নাগরিকদের চাহিদা মেটাতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চেষ্টা করবে সেটাই স্বাভাবিক৷ কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের একটা বড় অংশ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ কিন্তু সেটা করতে গিয়ে মানুষের প্রাণ ও স্বাস্থ্য নিয়ে ঝুঁকি নেয়াটা কতখানি সঠিক, তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে৷ কেননা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, চেরনোবিল আর ফুকুশিমার ঘটনায় সেটা প্রমাণিত হয়েছে৷ জার্মানির পরমাণু কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্তের পেছনে ফুকুশিমা দুর্ঘটনার একটি বড় অবদান রয়েছে৷
তবে শুধু দুর্ঘটনা হলেই যে পরমাণু কেন্দ্রের ক্ষতির দিকটি সামনে আসে তা নয়৷ সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চললেও সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা বের হতে পারে, যেটা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন এর প্রমাণ৷ সেখানে বলা হয়েছে, ভারতের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে গত ২০ বছরে যত মানুষ মারা গেছেন, তাঁদের প্রায় ৭০ ভাগেরই মৃত্যুর কারণ ক্যানসার৷ তথ্যটি দিয়েছে ভারতের পরমাণু শক্তি বিভাগের অধীন সংস্থা ‘ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার'৷ শুধু তাই নয়, গত ২০ বছরে নাকি এসব কেন্দ্রে কাজ করা ২৫৫ জন দীর্ঘকাল রোগে ভুগে বা পারিবারিক অন্যান্য সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেছেন৷
আমার কাছে তথ্যগুলো বেশ আতঙ্কের মনে হয়েছে৷ বেশিরভাগ পাঠকেরই নিশ্চয় তা মনে হবে৷ এ সব জানার পর পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনাকে আমি আর সমর্থন করতে পারছি না৷ সেটা না করে সৌরশক্তিতে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে সেটা আরও বাড়াতে সরকার চেষ্টা করতে পারে৷ সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির আর যেসব উৎস রয়েছে যেমন বায়ু, বায়োগ্যাস সেগুলোর উন্নয়নে সরকার আরও উদ্যোগ নিতে পারে৷ নিতে পারে কি, অবশ্যই নেয়া উচিত৷ কী বলেন?