জার্মানির স্কুলে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড
১১ মার্চ ২০০৯মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা রাজ্যে একটি স্কুলে মঙ্গলবার এমন ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই জার্মানিতেও এধরণের কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে, তা কেউ ভাবতেই পারে নি৷ অ্যালাবামায় এক ৩০ বছর বয়স্ক আততায়ী ১০ জনকে হত্যা করে তারপর আত্মহত্যা করে৷
জার্মানির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্টুটগার্ট শহরের কাছে ভিনেনডেন শহরের এক স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র স্থানীয় সময় সকাল পৌনে দশটা নাগাদ স্কুলে ঢুকে পড়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে প্রথমে ৯ জন ছাত্রছাত্রী ও ৩ জন শিক্ষককে হত্যা করে৷ আহত হয় আরও কয়েকজন৷ তারপর ঐ তরুণ একটি গাড়ি ছিনতাই করে সেটি চালিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ভেন্ডলিঙেন শহরে পালিয়ে যায়৷ পালাবার সময়ে সে এক পথচারীকেও হত্যা করে৷ ভেন্ডলিঙেন শহরে পৌঁছনোর পর পুলিশ তাকে থামানোর চেষ্টা করে৷ পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি সময় সে আরও ২ ব্যক্তিকে হত্যা করে৷ অবশেষে পুলিশের গুলিতে আততায়ীর মৃত্যু হয়৷ প্রায় ১,০০০ পুলিশ ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনীর সদস্য আততায়ীকে ধরতে এবং আরও প্রাণ বাঁচাতে বিশাল এক অভিযানে অংশ নিয়েছিল৷ তারা স্কুলের প্রায় ৫৮০ জন ছাত্রকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে গোটা এলাকা খালি করে দিয়েছিল৷
আততায়ীর পরিচয়
ভিনেনডেন শহরের কাছে ভাইলার সুম স্টাইন শহরে ১৭ বছর বয়স্ক ঐ তরুণ বসবাস করত৷ তার প্রথম নাম টিম৷ গত বছর, অর্থাৎ ২০০৮ সালে ঐ তরুণ স্কুলের পাঠ শেষ করে পেশাগত প্রশিক্ষণ শুরু করে৷ বাড়িতে তার বাবার কাছে বেশ কয়েকটি বন্দুক ছিল৷ তার মধ্যে একটি এখন বেপাত্তা৷ স্কুলে তার পরিচিতদের মতে, ঐ তরুণের মধ্যে কোনোদিন কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে নি৷ সে আজ কেন এমন হত্যাকাণ্ড চালালো, তার কোনো উত্তর এখনো জানা যায় নি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালাবামা রাজ্যের আততায়ী নিজের চাকরি হারিয়ে ক্রোধের বশে এমনটা করেছিল বলে জানা গেলেও জার্মানির ঐ তরুণের কোনো সমস্যার কথা কারো জানা নেই৷
জোরালো প্রতিক্রিয়া
বলাই বাহুল্য, গোটা দেশ এই ঘটনার কথা শুনে শোকে বিস্ময়ে মুহ্যমান৷ দলমতনির্বিশেষে সব নেতাই কড়া ভাষায় এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছেন৷ প্রেসিডেন্ট হর্স্ট ক্যোলার নিহতদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷ চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার সহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা বক্তব্য রেখেছেন৷ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জোসে মানুয়েল বারাসো এই অর্থহীন হিংসার নিন্দা করেছেন৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাংসদেরা নিহতদের স্মরণ করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন৷
হিংসার প্রবণতা
জার্মানিতে এই ধরণের হিংসাত্মক ঘটনা বিরল হলেও ইদানিংকালে – বিশেষ করে স্কুলের মধ্যে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ ২০০২ সালের ২৬শে এপ্রিল পূবের এয়ারফুর্ট শহরে এক স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ১৫ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা করে৷ জার্মানির পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এমন ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মার মধ্যে কাঠামোগত সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ উদ্দেশ্য, কিশোর-কিশোরীদের ক্ষোভ দানা বাঁধার আগেই তা চিহ্নিত করে যৌথভাবে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা৷ বাম দলের এক সাংসদ ব্যক্তিগত সংগ্রহে যে অস্ত্র রয়েছে, তা এক কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে নথিভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন৷