জার্মানির হাসপাতালে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর প্রকোপ
১ মার্চ ২০১১জার্মান হাসপাতাল স্বাস্থ্যরক্ষাসমিতি ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু এমআরএসএ নিয়ন্ত্রণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে এখন৷ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার ফলে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলির হাসপাতালে এই ধরনের জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ এক শতাংশের কমে নেমে এসেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স ও পোল্যান্ডে ২৫% রোগী এমআরএসএ দ্বারা আক্রান্ত হন৷ দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশগুলিতে স্পেন থেকে শুরু করে তুরস্ক পর্যন্ত অবস্থা আরো খারাপ৷
জার্মানিতে প্রতিবছর ৩৫ হাজার রোগী ও হাসপাতালের কর্মী এমআরএসএ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হন৷ বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিকই এই জীবাণুগুলিকে ঘায়েল করতে অপারগ৷ অপারেশনের সময় এই সব জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে আর কোনো উপায় থাকে না৷ এ কারণে এসেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকে রোগীকে ভর্তি করার সময়ই পরীক্ষা করা হয়, তার দেহে এই জীবাণু রয়েছে কীনা৷ এই রকমই এক রোগী হাইন্স ডিটার রিবলিং জানান, এতে তেমন কোন ব্যথা হয়না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘কয়েকটা ছোট ছোট ফুটো করা হয়েছে শরীরে৷ তারপর একা একটি ঘরে রেখে মলম ও অন্যান্য ওযুধ লাগানো হয়েছে চামড়ায়৷''
৬৬ বছর বয়স্ক এই ব্যক্তির সামনে রয়েছে এক কঠিন অপারেশন৷ একটি পা কেটে ফেলা হবে৷ কেননা হাইন্স বহুমূত্ররোগে আক্রান্ত৷ মলম লাগিয়ে জীবাণুগুলিকে ধ্বংস করা না পর্যন্ত তাঁর অপারেশন পেছানো হয়েছে৷ এসেন ক্লিনিকের ৫০০ রোগীর মধ্যে তিনিও একজন, যাদের মধ্যে এমআরএসএ পাওয়া গেছে৷ পরীক্ষা করে যাদের মধ্যে এই জীবাণু পাওয়া যায়, তাদের নির্জন ঘরে রাখা হয়৷ হাসপাতালের স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থার পরিচালক প্রফেসর ভাল্টার পপ বলেন, ‘‘আমরা চাই এমআরএসএ যাতে অন্যান্য রোগীতে সংক্রামিত না হয়৷ এমআরএসএ'বাহী রোগীকেও আমরা জীবাণুমুক্ত করতে চাই৷ আরেকটা কারণ হল, আমাদের হাসপাতালের কর্মীদের এই জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করা৷ চিকিৎসা বিমা প্রতিষ্ঠানগুলি এমআরএসএ দ্বারা আক্রান্ত হওয়াকে কর্মস্থলের রোগ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে৷''
এমআরএসএ'র সংক্রমণে কঠিন কঠিন রোগ হতে পারে৷ স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে অনেক সময় বিমা কোম্পানিগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও দাবি করে৷ নতুন কোনো রোগীকে ভর্তি করা হলে অন্যান্য রোগী ও হাসপাতালের কর্মীরা অনিশ্চয়তায় পড়ে৷ এ প্রসঙ্গে প্রফেসর পপ বলেন, ‘‘ভর্তি করার সময় রোগীকে পরীক্ষা করে যদি আমরা ধরতে পারি যে, তিনি এমআরএসএ বহন করছেন, তাহলে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে তিনি আমাদের হাসপাতালে এসে আক্রান্ত হননি৷ ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এরকমটি হয়ে থাকে৷ এভাবে আমরা এমআরএসএ'র সংক্রমণ কমিয়ে খরচও কমাতে পারি৷''
এসেন ক্লিনিক এমআরএসএ প্রতিরোধ খাতে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ইউরো বিনিয়োগ করেছে৷ গবেষণাগারের পরীক্ষা নিরীক্ষা, কর্মী নিয়োগ, রোগীদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা ইত্যাদি ব্যাপারে খরচ হয় এই অর্থ৷ তবে এই খরচটা পুষিয়ে যায় বলে মনে করেন ডাক্তার ভাল্টার পপ৷ কেননা হাসপাতালে কোনো রোগী সংক্রামিত হলে বিমা কোম্পানিগুলি সে খরচ বহন করতে চায়না৷ প্রফেসর পপ আশা করেন, অন্যান্য হাসপাতালগুলিও এসেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে৷ তবে বখুমের জাঙ্ক ইওজেফ হসপিটালের পরিচালক প্রফেসর আন্ড্রেয়াস ম্যুগে মনে করেন, হাসপাতালগুলির ব্যবস্থাপনার কারণেও এমআরএসএ জীবাণুকে দমন করা সম্ভব হচ্ছেনা৷ তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের লজিস্টিক ঠিক রাখতে হবে৷ পৃথক করে রাখা রোগীদের জন্য কী করা হবে তাও ভাবতে হবে৷ তাঁদের তো বাসায় পঠিয়ে দেয়া যায়না৷ কারো হয়তো অপারেশনের প্রয়োজন৷ তাদের জন্য হাসপাতালে আলাদা ব্যবস্থা করা দরকার৷''
জার্মান হাসপাতাল স্বাস্থ্যরক্ষা সমিতির এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ৮০ শতাংশ ক্লিনিকই ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর ভয়াবহতা বুঝতে পেরে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে৷ রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জোর পরামর্শ দিয়েছে, বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা বা যে সব রোগী এক বছরে বার বার হাসপাতালে ভর্তি হন তাদের বিশেষ ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে৷ এ পর্যন্ত খুব কম ক্ষেত্রেই এই পরামর্শ মেনে চলা হয়েছে৷ ডিটার রিবলিং'এর ভাগ্য ভালই বলতে হবে, ঠিক সময়েই এমআরএসএ জীবাণুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে তাঁর শরীরে৷ এতে শুধু যে অন্যান্য রোগীরাও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছেন তাই নয়, তাঁর নিজের চিকিৎসাটাও হয়েছে৷ তারপর অপারেশনটাও ঠিক মত হয়ে গেছে৷ তেমন কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি৷ অপারেশনের ক্ষতটাও শুকিয়ে গেছে সময় মত৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ