জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করছে ক্লোনিং পদ্ধতি
১৫ মার্চ ২০২১কুয়র্ট নামের এক জংলি ঘোড়াই প্রথমবার সফলভাবে ক্লোন করা সম্ভব হয়েছিল৷ সেটা ছিল এক বিশাল সাফল্য৷ কুয়র্ট মোটেই শুধু একটা এক্সপেরিমেন্ট ছিল না৷ গবেষকেরা এখন লুপ্তপ্রায় প্রাণী ক্লোন করে কোনো প্রজাতি লোপ পাওয়ার গতি কমিয়ে আনতে পারেন৷ এভাবে গোটা ইকোসিস্টেমের উন্নতিও ঘটাতে পারেন৷
কিন্তু ঠিক কীভাবে সেটা সম্ভব হবে? এমন প্রত্যাশা কতটাই বা বাস্তবসম্মত?
গোটা বিশ্বেই ক্লোনিং অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়৷ তার পেছনে কারণও রয়েছে৷ মানুষ ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে অথবা বিভিন্ন প্রজাতির অনন্ত নকল করে গেলে জীববৈচিত্র্য লোপ পেতে পারে বলে আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়৷ কিন্তু কুয়র্টের লক্ষ্য এর ঠিক বিপরীত৷ এই প্রাণীটি নাকি প্রজেভালস্কি প্রজাতির জংলি ঘোড়ার মধ্যে বৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনবে৷
কিন্তু একটি প্রাণীর হুবহু নকল এক ক্লোন কীভাবে জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে পারে?
বর্তমানে প্রজেভালস্কি প্রজাতির প্রায় ২,০০০ ঘোড়া বেঁচে আছে৷ মাত্র ১২টি জংলি ঘোড়া সেগুলির পূর্বপুরুষ! কুয়র্টকে ক্লোন করতে গবেষকরা এমন একটি মাত্র জিন বেছে নিয়েছেন, অনেক বছর আগে যেটিকে জমাট করে রাখা হয়েছিল৷ এমনটা না করলে ‘জিন পুল’ থেকে সেটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত৷ একটি মাদি ঘোড়াকে সারোগেট বা ভাড়াটে মা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল৷
কুয়র্টই প্রথম কোনো লুপ্তপ্রায় প্রাণী নয়, যেটির ক্লোন করা হয়েছে৷ এর আগেও একটি বিলুপ্ত প্রাণী ক্লোন করা হয়েছিল, যদিও এ ক্ষেত্রে সাফল্যের মাত্রা ছিল সীমিত৷ বিলুপ্ত হবার তিন বছর পর পিরেনিস অঞ্চলের ছাগল ক্লোন করা হয়৷ ফ্রিজ করা ত্বকের নমুনার দৌলতে সেটা সম্ভব হয়েছিল৷ দুশোরও বেশি এমন ছাগলের ভ্রূণ সৃষ্টি করার পর সাতটির বিকাশ সফল হয়৷ জন্মগ্রহণের সময় পর্যন্ত একটি অক্ষত ছিল৷ কিন্তু ভূমিষ্ঠ হবার কয়েক মিনিট পর শাবকটির মৃত্যু হয়৷
জংলি ক্লোনগুলির এক শতাংশও শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারে না৷ জংলি জানোয়ার সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণা ও সেগুলির নাগাল না পাওয়ার কারণে গোটা প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে ওঠে৷
চোখে দেখলে কুয়র্টের স্বাস্থ্য ভালই মনে হয়৷ প্রথম ক্লোন হিসেবে এই প্রাণীটি প্রকৃতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্র বাড়াতে পারবে, এমন প্রত্যাশার মাত্রা কম নয়৷ রিভাইভ অ্যান্ড রিস্টোর উদ্যোগের বিজ্ঞানী বেন নোভাক বলেন, ‘‘প্রকৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এটা একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন বটে৷ আমরা আর শুধু বিপর্যয় ঘটলে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না, এমন অবস্থা প্রতিরোধ করতে আগেই সক্রিয় হচ্ছি৷’’
বিজ্ঞানীদের যে দল কুয়র্টকে ক্লোন করেছে এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ক্লোনিংয়ের আইডিয়ার পক্ষে সওয়াল করছে, বেন নোভাক তাদেরই একজন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘লুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীগুলিকে সাহায্য করতে ক্লোনিং প্রক্রিয়াকে নানাভাবে কাজে লাগানোই এই আইডিয়ার মূলমন্ত্র৷ এমন প্রাণীর সংখ্যা বাড়াতে অথবা জিনগত বৈচিত্র্য বজায় রাখতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব৷’’
লুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংখ্যা বাড়ালে সেই প্রজাতি নিজেদের অস্তিত্ব কিছুটা সামলে নিতে পারে বটে, কিন্তু এমন প্রাণীর জিনগত বৈশিষ্ট্য সীমিত থেকে যাবে৷
অদিতি রাজাগোপাল/এসবি
২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...